মৌলভীবাজারে বোরো ঘরে তোলা নিয়ে শঙ্কায় কৃষক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ এপ্রিল ২০১৯, ৯:২৯ অপরাহ্ণ
স্বপন দেব, মৌলভীবাজার:
নানা রোগবালাই আর প্রতিকূলতার পর এবারো বোরো ধানের বাম্পার ফলনের প্রত্যাশার আভাস কৃষকের। তবে ওই বাম্পার ফলনের তৃপ্তির হাসির আড়ালে আছে চরম উদ্বিগ্নতা। মৌসুম শুরুর আগেই বজ্রপাত, বৃষ্টি ও শীলাবৃষ্টিতে আগাম বন্যার মহাহুমকিতে পড়েছেন হাওরপাড়ের বোরোচাষিরা। এ নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তাও। কারণ ২০১৭ সালের ভয়াবহ বন্যার দুঃসহ স্মৃতি তাদের এখনো তাড়ায়। ওই সময়ে বাম্পার ফলনের বোরো ধানের সঙ্গে মাছ, হাঁস, জলজপ্রাণী ও উদ্ভিদ কেড়ে নিয়েছিল আকস্মিক বন্যা ও দীর্ঘ জলাবদ্ধতা। ওই অকাল বন্যায় ঘরবাড়ি আর ক্ষেতকৃষিসহ সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছিলেন তারা। তাই বোরো ধানের বাম্পার ফলন হলেই চাষিদের মনে জাগে নানা অজানা শঙ্কা।
ওই ভয়াবহ বন্যার পরও অকাল বন্যা ও দীর্ঘ জলাবদ্ধতা রোধে নেয়া হয়নি কোনো স্থায়ী উদ্যোগ। নাব্যহ্রাস হওয়া হাওর ও নদী খননেও নেয়া হয়নি পরিকল্পিত পরিকল্পনা কিংবা প্রকল্প। ওই দুর্যোগের সময় সংশিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরিদর্শন, লোক দেখানো রিলিফ আর নানা প্রতিশ্রুতিই ছিল অন্যতম প্রাপ্তি। তাই এখন আগাম বন্যা মোকাবিলায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি বলতে শুধুমাত্র তাদের মনবলই পুঁজি। স্থানীয় বাসিন্দাদের কষ্ট ও ক্ষোভ হাওর ও নদীবেষ্টিত এ জেলায় দেশের সবচেয়ে বড় হাওর হাকালুকি থাকার পরও জেলার একটি হাওরও এখনো অন্তর্ভুক্ত হতে পারেনি হাওর উন্নয়ন বোডের। এ জেলার হাওর ও নদী থেকে সরকার প্রচুর রাজস্ব পেলেও তার উন্নয়নে চরম উদাসীন। নাব্যহ্রাস হওয়া নদী ও হাওর শুষ্ক মৌসুমে পানিহীনতায় যেমন ধু ধু মরুভূমি তেমনি বর্ষা মৌসুমে পানির ধারণক্ষমতা না থাকায় বন্যা ও দীর্ঘজলাবদ্ধতা।
অপ্রয়োজনে অতিরিক্ত পানি আর প্রয়োজনে পানিহীনতায় চাষাবাদ নিয়ে নদী ও হাওর তীরবর্তী চাষিদের অন্তহীন বয়ে চলা দুর্ভোগ। এ বছর নানা প্রতিকূলতার পরও বোরো ধানের আশানুরূপ ফলন পাওয়ার স্বপ্ন কৃষকদের। হাওরপাড়ের চাষিরা এমন তথ্য দিলেও বোরো ফসল ঘরে তোলা নিয়ে জানাচ্ছেন তাদের উদ্বেগ উৎকণ্ঠার কথা। জেলার সবক’টি হাওর ও নদী তীরে এখন দোল খাচ্ছে থোড়অলা আধাপাকা বোরো ধান। চোখ যতদূর যায় দিগন্তজুড়ে শুধু সোনালী ধানের মাঠ। সবুজ ধানের দোলনীতে কৃষকের মনে আনন্দ বাড়ে। ধানের মাঠের এমন দৃশ্যে হাওর পাড়ের কৃষকরা নবোদ্যমে স্বপ্ন বুনছেন। আর কিছুদিন গেলেই ধুম পড়বে ধান কাটার। তখন রাতদিন ব্যস্ত সময় পার করবেন কৃষাণ-কৃষাণীরা। স্বপ্ন প্রত্যাশার বোরো ধান গোলায় তুলতে পারলেই তাদের সব কষ্টই সার্থক।
জেলার হাকালুকি, কাউয়াদিঘি, হাইল হাওরসহ সবক’টি ছোট-বড় হাওরের এখন বোরো ধান ঘরে তোলা নিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছেন হাওরপাড়ের কৃষকরা। তাদের সে স্বপ্ন প্রত্যাশা ফিকে হবে কি না এমন দুশ্চিন্তাও ঘুরপাক খায়। আগাম বন্যা শিলাবৃষ্টি আর বজ্রপাতে মাঠের ধান মাড়াই-ঝাড়াই শেষে গোলায় তলতে পারবেন কি না এই ভয় কাটছে না তাদের। আকাশে বৃষ্টির আভাস দেখলেই এমন দুশ্চিন্তা ভর করে তাদের।
হাওর বাঁচাও কৃষক বাঁচাও কৃষি বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের কেদ্রীয় সভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন আহমদ বাদশা বলেন, দীর্ঘদিন থেকে হাওর অ লের মানুষ অবহেলিত। বিভিন্ন সময়ে সরকার পক্ষ শুধু উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা কখনও বাস্তবায়ন হয় না।