সিলেটে মনি-সোমার ‘রঙ্গশালায়’ ব্যবসায়ীর মৃত্যু নিয়ে তোলপাড়
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ এপ্রিল ২০১৯, ১২:২৭ পূর্বাহ্ণ
ওয়েছ খছরু:
ঘটনার আগে বাসা ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল সোমা বেগমকে। বাসার মালিক ও স্থানীয় লোকজন বসে সোমাকে এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা বলেন। কিন্তু বাসা ছাড়েনি সোমা বেগম। আগের মতোই তার বাসায় পরপুরুষের অবাধ যাতায়াত বাড়তে থাকে। আসেন বোরকা পরা তরুণীরা। আর বাসা ছাড়ার নির্দেশ দেয়ার এক সপ্তাহ পরেই ঘটে অঘটন । মেজরটিলার সৈয়দপুরের বাসায় গিয়ে আমোদ-ফুর্তি করতে গিয়ে মারা যান সিলেটের কাপড় ব্যবসায়ী আব্দুল জলিল। ওই দিন সোমার বাসায় গিয়েছিলেন সিলেটের আলোচিত মডেল কন্যা মনি।
কাপড় ব্যবসায়ী আব্দুল জলিল বাসায় অচেতন হয়ে পড়লে সোমা ও মনি সিএনজি অটোরিকশাযোগে তাকে নিয়ে যান ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে জরুরি বিভাগে নেয়ার পরপরই ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশও ঠাহর করেছিলো ঘটনা। কিন্তু জলিলের পরিবার মামলা করতে আগ্রহী না হওয়ার কারণে মামলা ছাড়াই ঘটনার শেষ টানা হয়েছে। থানা থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে সোমা ও মনিকে। আর জলিলের ভাইরা কিশোরগঞ্জ থেকে এসে লাশ নিয়ে গেছেন বাড়িতে।
কিন্তু এই ঘটনায় তোলপাড় হচ্ছে সিলেট শহরতলীর মেজরটিলার সৈয়দপুর এলাকায়। ধীরে ধীরে মনির অপরাধের ডালপালাও ছড়াতে শুরু করেছে। সবার মুখে মুখে প্রশ্ন- সুমার বাসায় কেনো এসেছিলেন আব্দুল জলিল। আর ওখানে মনিই বা কী করছিলেন। কিন্তু মামলা না হওয়ার কারণে পুরো ঘটনা পড়ে গেছে ধামাচাপায়। সোমা বেগম নামের এক মহিলা প্রায় তিন মাস আগে সৈয়দপুর এলাকার দুবাই প্রবাসীর স্ত্রী সালমা বেগমের বাসায় ভাড়াটে হয়ে উঠেন। তিনতলা ওই বাসার নিচতলার ডানপাশের ফ্ল্যাটে তিনি ভাড়া নেন। ভাড়া নেয়ার পরপরই বাসায় আসতে থাকে অপরিচিত লোকজন। মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার কিংবা সিএনজি নিয়ে বেলা-বেলায় লোকজন আসতে থাকে তার বাসায়। চলে আড্ডাও। গভীর রাত পর্যন্ত বহিরাগত যুবকরা ওই বাসায় আড্ডা দেয়ার বিষয়টি স্থানীয়দের নজরে পড়ে। তারা অনুসন্ধান শুরু করেন। এক পর্যায়ে তারা সোমা বেগম সম্পর্কেও খোঁজ নিতে শুরু করেন। আর এতেই বেরিয়ে আসে নানা অপরাধের ঘটনা। স্থানীয় সৈয়দপুর ক্লাবের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- সোমা বেগম ওই বাসা ভাড়া নেয়ার পরপরই লোকজন যাতায়াত শুরু করে। আসতে থাকে বোরকা পরা মহিলারা। এতে তারা খোঁজ খবর নিয়ে দেখেন অসামাজিক কার্যকলাপের আস্তানায় পরিণত করা হয়েছে ওই বাসাকে।
বাইরে থেকে আসে ওই বাসায় পুরুষ-মহিলারা। আর তারা বাসার দুটি কক্ষ ব্যবহার করে। চলে ইয়াবা সেবনও। এ কারণে ওই বাসায় বাইরের তরুণ-তরুণীরা আমোদ-ফুর্তি করেন। আর বিনিময়ে টাকা নেন সোমা বেগম। তার ডাকে সাড়া দিয়ে ওখানে আসেন মনিও। এ ঘটনা ধরাপড়ার পর তারা বিষয়টি নিয়ে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি গনি মিয়া ও বাসার মালিকের স্ত্রী সালমা বেগমের সঙ্গে কথা বলেন স্থানীরা। সালমা বেগমের স্বামীর বাসা হলেও তিনি পুরো বাসার সবকটি ফ্লাট ভাড়া নিয়ে নিজের পিতার বাড়িতে থাকেন। পাশেই তার পিতার বাড়ি। এলাকার মানুষের আপত্তির কারণে তারা ডেকে আনেন সোমা বেগমকে। এরপর তাকে দ্রুত বাসা ছাড়ার নির্দেশ দেন। স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি গনি মিয়া জানিয়েছেন- ‘শুরু থেকেই এ মহিলাকে আমার সন্দেহ হয়। পরে এলাকার মানুষও তাকে নিয়ে আপত্তি তোলেন।
এরপর তাকে আমরা বাসা ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। কিন্তু ভাড়া না দিয়ে বাসা ছেড়ে যেতে নানা টালবাহানা করে বলে জানান তিনি।’ সোমা বেগমকে নিয়ে যখন এলাকায় উত্তেজনা তখনই তার বাসায় ঘটে আরেক ঘটনা। স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ জানায়- সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সোমা বেগমের বাসায় যান কাপড় ব্যবসায়ী আব্দুল জলিল। তিনি বসবাস করেন নগরীর বন্দরবাজারের বাগদাদ হোটেলে। তার মূল বাড়ি কিশোরগঞ্জের এনায়েতপুরে। জলিল ওই হোটেলের একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে বসবাস করতেন আর কাপড় ফেরি করে বিক্রি করতেন। কাপড় বিক্রির সুবাদে আগে থেকেই সোমা বেগমের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিলো। ওই দিন জলিল বাসায় যাওয়ার পর সেখানে যায় সিলেটের মডেল কন্যা মনি। বেপরোয়া কর্মকাণ্ডের জন্য মনি এরই মধ্যে বেশ আলোচিত-সমালোচিত হয়েছে সিলেটে। ওই বাসার একটি কক্ষে জলিল ও মনি আমোদ-ফুর্তি করছিলো।
এতে এক পর্যায়ে অচেতন হয়ে পড়েন আব্দুল জলিল। বিষয়টি মনি জানায় সোমাকে। পরে তারা দু’জন একটি সিএনজি অটোরিকশা এনে জলিলকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। ওখানে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এবং অতিরিক্ত উত্তেজনার কারনে তার মৃত্যু হতে পারে বলে ধারণা করেন চিকিৎসকরা। বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ হয় সিলেটের শাহপরান থানার পুলিশের। তারা হাসপাতাল থেকে আটক করে সোমা ও মনিকে। নিয়ে যায় থানায়।
আর ময়না তদন্তের জন্য লাশ রাখা হয় ওসমানীতে। এদিকে- আব্দুল জলিল মৃত্যুর খবর শুনে কিশোরগঞ্জ থেকে ছুটে আসেন তার ভাই সহ স্বজনরা। তারাও এসে বিষয়টি আঁচ করতে পারেন। মামলার ঝামেলা ছাড়াই তারা জলিলের লাশ নিয়ে গেছেন কিশোরগঞ্জে। তবে- লাশের ময়না তদন্ত করে রেখেছে পুলিশ। রিপোর্টের অপেক্ষায় রয়েছে। আর মামলা না করায় আটককৃত ও মনিকে মুচলেকার মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সিলেটের শাহপরান থানার ওসি আক্তার হোসেন জানিয়েছেন- বিষয়টি সন্দেহজনক। আমরা এ কারনেই সোমা ও মনিকে আটক করে নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু জলিলের স্বজনরা মামলা না করায় তাদের মুচলেকার মাধ্যমে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। ময়না তদন্ত রিপোর্ট আসার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি গনি মিয়া জানিয়েছেন- ‘বাসার মালিক আমার ভাতিজি। আমরা প্রথমে ঘটনাটি টের পাই নি। পুলিশ যখন দুই মহিলাকে আটক করে তখন থানায় যাই। থানায় সোমা তার পা ধরে কান্নাকাটি করে বলে জানান তিনি।’ স্থানীয়রা জানিয়েছেন- সোমা বেগম নিজেকে অনলাইন সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে দাপট খাটায়। আগে সে নগরীর শিবগঞ্জ মজুমদারপাড়া আবাসিক এলাকায় বসবাস করতো। ওখানে অসামাজিক কার্যকলাপের কারনে তাকে বের করে দেয়া হয়। এদিকে বাসার মালিক সালমা বেগম জানিয়েছেন- আমিনা আক্তার সোমা নামের ওই মহিলা চলতি মাসের মধ্যে বাসা ছেড়ে যাবে বলে জানিয়েছে। তার বাড়ি সুনামগঞ্জের ছাতকে। বাসা ভাড়া নেয়ার সময় জানিয়েছিলো স্বামীর সঙ্গে তার ডিভোর্স হয়ে গেছে।
মানবজমিন