সিলেটে গত ৩ মাসে ৩৫৩ টি অগ্নিকান্ড, অসংখ্য বহুতল ভবন ঝুঁকিতে
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ এপ্রিল ২০১৯, ১০:২৬ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
সিলেটে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে অগ্নিকান্ডের ঘটনা। গত ৩ মাসে সিলেট বিভাগে ৩৫৩ টি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। গেল সারা বছরে ঘটেছে ৬৬২টি। বছরের শুরুতে যে হারে অগ্নিকান্ডের ঘটনা বাড়ছে তাতে গত বছরের পরিসংখ্যানকে ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনরা। এতে উদ্বেগ ছড়াচ্ছে জনমনে।
এদিকে আশঙ্কাজনকহারে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলেও টনক নড়ছে না সংশ্লিষ্টদের। বাসা-বাড়ি থেকে শুরু করে শপিংমল পর্যন্ত অসংখ্য বহুতল ভবন রয়েছে অগ্নি ঝুঁকিতে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের জরিপে সিলেট নগরীর অধিকাংশ ভবন রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায়। ২০১৭ সালে ৫৮টি শপিংমল ও মার্কেটের উপর পরিচালিত জরিপে মাত্র তিনটি মার্কেটে অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা সন্তোষজনক ছিল। বাকিগুলোর মধ্যে তাছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় রয়েছে ৩২ টি আর অতিঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় রয়েছে ২৩ টি।
এসব তালিকা থেকে বাদ যায়নি মিডিয়া অফিসস্থ ভবন। সিলেটের বেশ কয়েকটি মিডিয়া অফিসস্থ ভবন রয়েছে এ তালিকায়। এ জরিপের ফলাফল এখনো আগের মত রয়েছে। কোনো ভবনই ঝুঁকিপূর্ণের তালিকা থেকে ওঠে আসতে পারেনি।
তাছাড়া সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকার রাস্তা ছোট থাকায় পর্যাপ্ত পরিমাণ অগ্নিনির্বাপন যন্ত্র নিয়ে কাজ করতে পারবে না ফায়ার সার্ভিস। এমনকি ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি যাওয়ার মত পরিস্থিতিও নেই কোনো কোনো এলাকায়। তবে নগরের বেশ কয়েকটি রাস্তা প্রশস্তকরনের কাজ চলছে বলে জানিয়েছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, সিলেট বিভাগ ৪০ টি উপজেলা নিয়ে গঠিত। ৪০ উপজেলায় প্রায় কোটি জনসংখ্যার বসবাস। বিশাল জনসমষ্ঠি বেষ্ঠিত এলাকাগুলোতে অগ্নিকান্ডের ঘটনা। এতে জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। বেশিরভাগ ভবনে নিজস্ব অগ্নিনির্বাপনের ব্যবস্থা নেই। থাকিয়ে থাকতে হয় ফায়ার সার্ভিসের দিকে। কোটির জনসংখ্যার এ বিভাগে প্রায় ১২ শতাংশ লোক শহরে বসবাস করেন। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে মানুষজনের চাহিদা মেটাতে দিন দিন বেড়ে উঠেছে শিল্প কারখানা ও সুবিশাল শপিংমল এবং বিপনী বিতান। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরের বিভিন্ন মার্কেট ও শপিংমলে রয়েছে মেয়াদোত্তীর্ণ ফায়ার অ্যাক্টিংউইজার, অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র না থাকা, অদক্ষ জনবল, জলাধারের অভাব, চলাচলের রাস্তা না থাকা, সিঁড়ির অপ্রশস্থতা, ত্রুটিপূর্ণ বৈদ্যুতিক ক্যাবল, বালু ভর্তি প্রয়োজনীয় বালতিসহ নেই প্রশিক্ষিত জনবল। ফলে মারাত্মক অগ্নিঝুঁকি রয়েছে সিলেট নগরে।
জানা গেছে, অগ্নিঝুঁকির ব্যাপারে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল সার্জন সিলেট নগরের ৫৮টি ভবনের উপর ২০১৭ সালে জরিপ করা হয়েছিল। যা এখনো বলবৎ রয়েছে। জরিপে মাত্র তিনটি ভবনে অগ্নি নিরাপত্তা সন্তোষজনক থাকলেও ৩২ টি ঝুঁকিপূর্ণ ও ২৩ টি অতি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহিৃত করা হয়েছে। চিহিৃত ওই ভবনগুলোতে প্রতিদিন সহস্রাধিক লোকজনের যাতায়াত রয়েছে। জনগুরুত্বপূর্ণ এসব ভবনে নেই পর্যাপ্ত অগ্নি নিরাপত্তার যন্ত্রপাতি। এ তালিকা থেকে বাদ যায়নি মিডিয়া অফিসও। দৈনিক সিলেটের ডাকের কার্যালয় রয়েছে মধুবন সুপার মার্কেটে। এ মার্কেট অগ্নি নিরাপত্তায় অতি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বন্দরবাজারের কুদরত উল্লাহ মার্কেটে দৈনিক জালালাবাদের কার্যালয়। এ মার্কেটকে অগ্নি ঝুঁকির সাধারণ তালিকায় রাখা হয়েছে।
জিন্দাবাজারের ওয়েস্ট ওয়ার্ল্ড শপিং সিটি। এ ভবনে দৈনিক যুগভেরীর কার্যালয়। এ ভবনও অগ্নি ঝুঁকির সাধারণ তালিকায় রয়েছে। নগরের মিরবক্সটুলায় অবস্থিত খয়রুন ভবনে দৈনিক সিলেট মিরর এর কার্যালয়। এ ভবন অগ্নি ঝুঁকির সাধারণ তালিকায় রয়েছে। এছাড়া নগরের জিন্দাবাজারে অবস্থিত ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকায় রয়েছে। এ ভবনে অনেক প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ব্যুরো অফিস রয়েছে। তাছাড়া মিডিয়া অফিস খ্যাত নেহার মার্কেটও অতি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকায় রয়েছে। এ ভবনে দেশের অনেক টেলিভিশন ও পত্রপত্রিকার অফিস রয়েছে।
অগ্নি ঝুঁকির ব্যাপারে এতোদিন কোনো ধরনের ব্যবস্থা না নেওয়া হলেও গত মঙ্গলবার নগর ভবনে এক সভা অনুষ্টিত হয়। সভায় অগ্নি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বিরুদ্ধে শিগগিরই ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
সিলেট ফায়ার সার্ভিসের মবিলিজিং কর্মকর্তা ফয়জুর রহমান জানান, সিলেটে চলতি বছরের গত ৩ মাসে সিলেট বিভাগে ৩৫৩ টি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। আর গত বছরে ঘটেছিল ৬৬২টি। সিলেট সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, সিলেট নগরে পর্যাপ্ত জলাধার রয়েছে। তাছাড়া সিলেট নগরের প্রায় প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে পানির ব্যবস্থা রয়েছে। যেকোনো সময় পানির প্রয়োজন মেঠানো সম্ভব হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে নুর আজিজুর বলেন, ‘আমরা সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে রাস্তা প্রশস্তকরণের কাজ ইতিমধ্যে শুরু করেছি। শিগগিরই ছোট ছোট রাস্তা প্রশস্তকরণ করা হবে। এ বিষয়ে সিটি করপোরেশন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।’
সিলেট ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক দিনামনি শর্মা জানান, সিলেটের অধিকাংশ বিপনি বিতানগুলোতে নেই পর্যাপ্ত পরিমাণ অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা। আর যেগুলোতে রয়েছে তাও নিম্নমানের। যেসব অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি রয়েছে সেগুলো যথারীতি পরীক্ষা করা হয় না। প্রতিষ্ঠানগুলোতে আগুণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য নেই দক্ষ জনবলও। এসব কারণ বিবেচনায় বিষয়টি তদারকি করতে আবারো মাঠে নেমেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। এ বিষয়ে কয়েকটি টিম গঠন করা হয়েছে। এসব টিমের সমন্বয়ক হিসেবে কার্যক্রম তদারকি করবেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তারা।