মোকাব্বির খানে বিব্রত সিলেট বিএনপি নেতারা
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ এপ্রিল ২০১৯, ১১:২১ অপরাহ্ণ
ওয়েছ খছরু:
মোকাব্বির খানের শপথ গ্রহণে বিব্রত সিলেট বিএনপির নেতারা। এমন ঘটনা রাজনীতিতে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে বলেও মন্তব্য তাদের। বলেছেন- মোকাব্বির খান সিলেটের রাজনীতিতে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। এর জবাবও তিনি রাজনীতির মাধ্যমেই পাবেন। এদিকে- মোকাব্বির খানকে নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের ভেতরে রক্তক্ষরণও হচ্ছে। তাকে নিয়ে শঙ্কাও কাজ করছে। কারণ- যাদের দিয়ে আজ তিনি সংসদ সদস্য তারাই এখন তার প্রতিপক্ষ। মোকাব্বির খানের সমাবেশে যোগ দেয়ায় বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হার্ডলাইনে যাচ্ছে দল।
সিলেট জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে ৯ নেতাকর্মীকে শোকজ করা হচ্ছে। বিগত সংসদ নির্বাচনে সিলেট-২ আসনটি ছিল নাটকীয়তায় ভরপুর। আওয়ামী লীগ আগে থেকেই এ আসনে নির্বাসনে চলে যায়। শরিক দল জাতীয় পার্টির কর্তৃত্ব থাকে এ আসনে। বাকি ছিল বিএনপি। এই আসন থেকে বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হয়েছিলেন নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী বেগম তাহসিনা রুশদীর লুনা। আইনি জটিলতায় আটকে যায় লুনার নির্বাচন। ফলে বিএনপিও এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেনি। তখন বিএনপির হাতে অপসন ছিল দুটো। এর মধ্যে একটি ছিল মোকাব্বির খান আর অপরটি ছিল খেলাফত মজলিশের প্রার্থী মুনতাছির আলীকে সমর্থন দেয়া। কিন্তু বিএনপির কেন্দ্র থেকে অনেক জল্পনার পর মতামত যায় মোকাব্বির খানের পক্ষে। নির্বাচনের কয়েক দিন আগে স্থানীয় বিএনপি নেতারা মোকাব্বির খানকে নিয়ে নির্বাচনে নামেন। সক্রিয় হন ইলিয়াসের ছোট ভাই আসকির আলীও। মোকাব্বির খানকে নিয়ে বাজি ধরা বিএনপি এই আসনে জয়লাভ করে। ফলে নতুন নির্বাচিত হওয়া মোকাব্বির খান সংসদে যাবেন কী না এ নিয়ে ধোঁয়াশা শুরু হয়।
কিন্তু দীর্ঘ অপেক্ষার পর মোকাব্বির খান গতকাল শপথ নেন। ফলে বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগরের নতুন এমপি এখন গণফোরাম নেতা মোকাব্বির খান। মোকাব্বির খান শপথ নেয়ার আগে বিশ্বনাথে এসে স্থানীয় এলাকাবাসীর মতামত নিয়েছেন। এই মতামত অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিলেন বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা সুহেল আহমদ। তার আয়োজনে অনুষ্ঠানে বিএনপির সমর্থিত কয়েকজন প্রতিনিধি উপস্থিত থেকে মোকাব্বির খানকে সংসদে যাওয়ার ব্যাপারে মতামত ব্যক্ত করেন। এই মতামত মোকাব্বির খানকে সংসদে যাওয়ার পথ অনেকটা খুলে দেয়। তবে- এই অনুষ্ঠানের পরপরই বিএনপির পক্ষ থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়।
এতে বিএনপির নেতারা বলেন- ‘বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর নির্বাচনী এলাকায় যার কোনো অস্তিত্বই নেই, এম. ইলিয়াস আলীর পরিবারের সমর্থনে নির্বাচিত হয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপি থেকে বহিষ্কৃতদের নিয়ে গত রোববার বিশ্বনাথে সমাবেশ করেন। বিএনপির কেন্দ্র থেকে যাদের বহিষ্কার করা হয়েছে তাদের নিয়ে মোকাব্বির খান যে সভা করেছেন তা বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্টের দলীয় সিদ্ধান্তের সম্পূর্ণ পরিপন্থি।’ এদিকে- মোকাব্বির খানের শপথ গ্রহণে ক্ষুব্ধ সিলেট বিএনপির নেতারা।
গতকাল জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ জানিয়েছেন- ‘মোকাব্বির খান একজন অকৃতজ্ঞ ব্যক্তি। সময়ে এর জবাব তিনি পাবেন। নিজের স্বার্থে তিনি বেইমানি করছেন। বিএনপির নেতাকর্মীদের ভোটে তিনি নির্বাচিত হয়েছেন, এই নেতাকর্মীরাও তাকে জবাব দেবে।’ তিনি বলেন, মোকাব্বির খানের অনুষ্ঠানে বিশ্বনাথের ৯ নেতা অংশ নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ২-৩ জন ইউনিয়ন চেয়ারম্যানও রয়েছেন। তাদের এই কর্মকাণ্ড দলের সিদ্ধান্ত পরিপন্থি। এ কারণে খুব শিগগিরই ৯ জন নেতাকে শোকজ করা হবে। শোকজের জবাব প্রাপ্তির আলোকে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি। মোকাব্বির খানের শপথ গ্রহণে বিব্রত বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর বিএনপির নেতারা।
ইলিয়াস পরিবার হতবাক ও নির্বাক। ইলিয়াস আলীর ছোট ভাই ও জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আসকির আলী সংসদ সদস্য হিসেবে মোকাব্বির খানের শপথ গ্রহণ সম্পর্কে বলেন- ‘আমি বাকরুদ্ধ। আমি নির্বাক। এই বিষয় নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না। তবে- এর থেকে প্রমাণ হয় আমাদের সমাজে বিবেক ও মানবতা আজ বড় অসহায়। ‘বিবেক’ যে সম্মানজনক শব্দ সেটি আজ নীরবে নিবৃত্তে কাঁদছে।’
আর বিশ্বনাথ উপজেলা বিএনপির সভাপতি জালাল উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক লিলু মিয়া বলেন- ‘আমরা বিব্রত। অতীতে কখনো এ ধরনের রাজনীতির মুখোমুখি আমরা হইনি। এখন দল যে সিদ্ধান্ত নেবে সেদিকেই আমরা আছি।’ ওসমানীনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোতাহির আলী বলেন- ‘আমাদের যতটুকু দায়িত্ব ছিল আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করেছি। তাকে আমরা পাস করিয়েছি। এখন মোকাব্বির খান নিজেই তার ইতিহাস তিনি রচনা করছেন। এখানে আমাদের কিছুই করার নেই। ভবিষ্যৎ রাজনীতি এটি দেখবে।’ ওসমানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ফখর উদ্দিন জানান- ‘এখন দলের যে সিদ্ধান্ত আসবে সেটি আমরা মেনে চলবো। কারণ- মোকাব্বির খান সম্পর্কে নির্বাচনের আগে আমরা কাজ করেছি দলীয় সিদ্ধান্তেই।’
সুত্র মানবজমিন