সিলেটে বিষ খাইয়ে কলেজ শিক্ষককে হত্যা করে রুপা, লাশ ফেলতে আরেক প্রেমিকের সাহায্য
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ এপ্রিল ২০১৯, ১১:৩৫ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
সিলেটের মদন মোহন কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক মো. সাইফুর রহমান হত্যায় জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন গ্রেপ্তারকৃত দুই তরুণ-তরুণী। তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে।
সোমবার দুপুরে সিলেট মহানগর বিচারিক হাকিম ৩য় আদালতে তারা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেন। আদালতের বিচারক সাইফুর রহমান তাদের জবানবন্দি গ্রহণ করেন।
একসময় শাহপরান এলাকার খিদিরপুর গ্রামের শফিকুর রহমানের বাসায় লজিং শিক্ষক হিসেবে থাকতেন সিলেট মদন মোহন কলেজের প্রভাষক মো. সাইফুর রহমান (২৯)। শফিকুর রহমানের মেয়ে নিশাত তাসনীম রুপা (২০) কে পড়াতেন তিনি। তখন থেকেই প্রেমের সম্পর্ক। সম্প্রতি মুজাম্মিলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন রুপা। এতে ক্ষুব্ধ হন রুপার পুরনো প্রেমিক সাইফুর। এ নিয়ে বাকবিতন্ডা হয় রুপার সঙ্গে। এর প্রতিশোধ নিতে শনিবার বিষ খাইয়ে সাইফুরকে হোটেল কক্ষে ফাঁস লাগিয়ে হত্যার পর মুজাম্মিলের সহযোগিতায় লাশ ফেলে দেওয়া হয়।
এদিকে, লাশ উদ্ধারের পর রবিবার রাতে টিলাগড় থেকে ছাতক উপজেলার আলমপুর গ্রামের মোজাম্মিল হোসেন (২৪) এবং খিদিরপুর গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে নিশাত তাসনীম রুপা (২০) কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় আজ সোমবার (১ এপ্রিল) নিহতের মা রনিফা বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামি করে দক্ষিণ সুরমা থানায় মামলাটি দায়ের করেন। যার নং-০১ (০১/০৪/২০১৯)।
সাইফুরের ঘনিষ্টদের সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষক সাইফুর রহমানের সাথে দীর্ঘ ৫ বছর ধরে প্রেম চলছে রুপার। রূপাও ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী। সম্প্রতি মুজাম্মিলের সাথে প্রেমে জড়িয়ে পড়েন রুপা। এতে বাঁধা দেন সাইফুর। ক্ষুব্দ হয়ে তাকে হত্যা করা হয়।
আজ দুপুরে তাদের আদালতে হাজির করা হলে হত্যার দায় স্বীকার করে তারা ১৪৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। প্রেমসংক্রান্ত বিরোধের কারণেই সাইফুরকে হত্যা করা হয় বলেও জবানবন্দিতে জানান তারা।
রুপা আদালতকে বলেন, শনিবার রাত ৮টার দিকে তিনি সাইফুরের সাথে এম. সি কলেজ ক্যাম্পাসে দেখা করেন এবং তাকে বিষ ও ঘুমের ওষুধ মিশ্রিত সেমাই খেতে দেন। সেমাই খাওয়ার পর সাইফুর রহমানকে নিয়ে রুপা নগরের হোটেল মেহেরপুরের ২০৬ নং কক্ষে উঠেন। কক্ষে উঠার কিছুক্ষণ পর সাইফুর কিছুটা নিস্তেজ হয়ে পড়লে নিশাত তাসনিম রুপা তার সঙ্গে থাকা রশি দিয়ে গলায় পেঁচিয়ে তাকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে।
পরে মৃত্যু নিশ্চিতের পর রুপা হোটেলের অভ্যর্থনা কক্ষে (রিসিপশন) এসে বলেন, তাঁর স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, হাসপাতালে নিতে হবে। এসময় পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক রুপার প্রেমিক মুজাম্মিল হোসেন একটি অটোরিকশা নিয়ে হোটেলের সামনে আসেন। পরে ওই অটোরিকশায় করে রুপা, মোজাম্মিল এবং চালক মিলে সাইফুরের লাশ দক্ষিণ সুরমায় সড়কের পাশে ফেলে আসেন।
এসব তথ্য নিশ্চিত করেন সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (গণমাধ্যম) জেদান আল মুসা জানান । তিনি বলেন, ঘটনার পর থেকেই পুলিশ রহস্য উদঘাটনের কাজে লেগে পড়ে। ২৪ ঘন্টার মধ্যে আসামীদের গ্রেপ্তার ও হত্যার কারণ উদঘাটনে সফল হয়।
প্রসঙ্গত, মদন মোহন কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের খন্ডকালীন শিক্ষক সাইফুর রহমান গোয়াইনঘাট উপজেলার ফলতইল সগাম গ্রামের মো. ইউসুব আলীর ছেলে। গত শনিবার সকাল ১১টার দিকে মেস থেকে বের হন সাইফুর রহমান। রাতে তিনি আর বাসায় ফিরেননি। রবিবার সকালে দক্ষিণ সুরমার তেলিরাই এলাকায় তার লাশ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেন স্থানীয় লোকজন।
সুত্রঃ দেশদর্পন