১০০ টাকা ছাড়িয়েছে সয়াবিন তেলের লিটার
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ অক্টোবর ২০১৬, ৭:১২ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
নতুন করে এক লাফে ৫ থেকে ৬ টাকা বাড়ায় দেশের বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের লিটার ১০০ টাকা ছাড়িয়েছে। পাশাপাশি খোলা সয়াবিন তেলের দামও বেড়েছে লিটারে ৫ থেকে ১০ টাকা। বিভিন্ন বাজার ঘুরে ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে বোতলজাত ও খোলা সয়াবিন তেলের এমন কেনাবেচা দেখা গেছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজার মনিটরিংয়েও সয়াবিন তেলের ৫ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধির তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
ক্রেতাদের অভিযোগ, হঠাৎ করে এভাবে দাম বৃদ্ধির কোনো মানে হয় না। কমপক্ষে আগে থেকেই একটা ঘোষণা দেয়া উচিত ছিল। আর বিক্রেতারা বলছেন, মিল মালিকরা দাম বৃদ্ধি করেছে তাই আমরাও বাড়তি বিক্রি করছি।
জানা গেছে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রথমে সিটি গ্রুপ তাদের
তীর ব্র্যান্ডের তেলের দাম লিটারপ্রতি ১০০ টাকা করেছিল, যা আগে কোম্পানিটি বিক্রি করেছে ৯৪ টাকায়। এর পর বোতলজাত সয়াবিন তেলের দর বাড়ায় বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেড ও মেঘনা গ্রুপ। বাংলাদেশ এডিবল অয়েল তাদের রূপচাঁদা ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ১০২ টাকা নির্ধারণ করেছে। আগে তাদের এক লিটারের বোতলের দাম ছিল ৯৮ টাকা। অন্যদিকে মেঘনা গ্রুপ তাদের ফ্রেশ ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেলের দর নির্ধারণ করেছে লিটারপ্রতি ১০০ টাকা। আগে কোম্পানিটির এক লিটারের বোতলের দাম ছিল ৯৫ টাকা। দেশের বোতলজাত সয়াবিন তেলের ৯০ শতাংশ বাজার সিটি, মেঘনা ও বাংলাদেশ এডিবল অয়েলের নিয়ন্ত্রণে।
নতুন দামে ৫ লিটারের এক বোতল তীর অথবা ফ্রেশ ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেল কিনতে ক্রেতাকে ৪৯৫ টাকা ব্যয় করতে হবে। যা আগের চেয়ে ২৫ থেকে ৩০ টাকা বেশি। দুই লিটারের বোতলের দর হবে ১৯৮ টাকা। এ ছাড়া এক লিটার ১০০ টাকা ও আধা লিটার ৫১ টাকায় মিলবে। আর রূপচাঁদা ব্র্যান্ডের তেলের দাম লিটারে আরো ২ টাকা বেশি হবে।
টিসিবি হিসাবে বাজারে প্রতি লিটার সয়াবিন তেল (বোতলজাত) বিক্রি হচ্ছে ৯৭ থেকে ১০০ টাকা। আর গত সপ্তাহে ছিল ৯৪ থেকে ৯৮ টাকা। শতাংশের হিসাবে দর বেড়েছে ২.৬০ শতাংশ। খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। আর গত সপ্তাহে ছিল ৮০ থেকে ৫৫ টাকা। শতাংশের হিসাবে দর বেড়েছে ২.৪০ শতাংশ। এ ছাড়া বাজারে ৫ লিটার সয়াবিন তেল (বোতলজাত) বিক্রি হচ্ছে ৪৬৫ থেকে ৫০০ টাকা। আর গত সপ্তাহে ছিল ৪৫০ থেকে ৪৭০ টাকা। শতাংশের হিসাবে দর বেড়েছে ৪.৮৯ শতাংশ। পাশাপাশি দাম বৃদ্ধি পেয়ে পাম অয়েল (খোলা) বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়।
জানা গেছে, সম্প্রতি তেলের বাজার দর নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন (বিটিসি)। সেই প্রতিবেদনে আমদানিমূল্যের সঙ্গে অন্য খরচ যোগ করে ১ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের কাঙ্ক্ষিত বাজার দর দাঁড়ায় ৯৭ টাকা। সে হিসেবে কোম্পানিগুলো কাঙ্ক্ষিত দরের চেয়ে ৩ থেকে ৫ টাকা বেশি রাখছে পাইকারদের কাছে। অর্থাৎ চূড়ান্তভাবে ১ লিটার তেল খুচরা পর্যায়ে ৯৭ টাকায় বিক্রি হওয়া উচিত বলে উল্লেখ করা হয়েছে ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজারের বাড়তি দর বিবেচনায় নিয়ে ব্যয় বিবরণীর বাইরেও ৩ শতাংশ মূল্য বাড়িয়ে ধরেছে ট্যারিফ কমিশন।
ব্যবসায়ীরা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম প্রায় ১৫ শতাংশ বেড়েছে। এখন দেশে তেলের দাম না বাড়ালে আমদানি নিরুৎসাহিত হতে পারে। এর ফলে বাজারে সংকট তৈরি হওয়ার আশঙ্কা করেন ব্যবসায়ীরা।
জানা গেছে, এর আগে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে ভোজ্য তেলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ আইন-২০১৩’ পাস এবং শীতকালে ভোজ্য তেলের চাহিদা বেশি অজুহাতে দাম বাড়িয়ে দেয় ভোজ্য তেল রিফাইনারি প্রতিষ্ঠানগুলো। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমে যাওয়ায় ভোজ্য তেল রিফাইনারি প্রতিষ্ঠান মালিকদের সঙ্গে চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি বৈঠকে বসেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। সেখানে প্রতিষ্ঠান মালিকরা প্রতি লিটারে ৪ টাকা করে কমানোর কথা বলেন। পরে মন্ত্রী ৫ টাকা কমানোর কথা বললে প্রতিষ্ঠান মালিকরা সেটা মেনে নেন। সে সিদ্ধান্ত মতে ১৬ই জানুয়ারি থেকে ভোক্তাপর্যায়ে তেলের দাম লিটারে ৫ টাকা কমে বিক্রি হয়। কিন্তু এর পর কয়েক মাসের ব্যবধানে আবারও প্রতিলিটারে ৩ থেকে ৫ টাকা বাড়ানো হচ্ছে।