ব্রিটেনে দয়ামীর হাই স্কুলের পুণর্মিলনী অনুষ্ঠিত : মিলন মেলায় স্মৃতিকাতর প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা
প্রকাশিত হয়েছে : ২:২১:২২,অপরাহ্ন ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০
সুরমা নিউজ:
ব্রিটেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর বার্মিংহামের একটি বেনকুইটিং হল। এ যেন এক চিরচেনা বাংলাদেশ আমাদের চিরচেনা সদরুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়। সবাই ছিলেন যেন এক আবেগ-মথিত সুরের মিলন মেলায়। দেশ ছাড়িয়ে দেশের বাইরেও সবাই মিলেছিলেন স্মৃতির এই আঙিনায়। প্রবাস জীবনের শত ব্যস্ততা কাটিয়ে স্মৃতিকাতর মানুষগুলি ছিলেন মিলেমিশে একাকার। পুরনো বন্ধুকে কাছে পেয়ে অনেকে আবেগতাড়িত, অনেকে আবার ছিলেন উৎফুল্ল, উচ্ছ্বসিত।
গতকাল ছিলো মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবীর জেনারেল আতাউল গনি ওসমানীর স্বর্গীয় পিতার প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী দয়ামীর সদরুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের মিলনমেলা। অতীতের নানা ধূসর স্মৃতি নিয়ে ব্রিটেনের বার্মিংহামের বেনকুইটিং হলে হাজির হন স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থীরা। সকল সীমাবদ্ধতাকে দূরে ঠেলে নবীন প্রবীণদের পদভারে বেনকুইটিং হলটি উৎসবে মুখরিত হয়ে উঠে।
পুণর্মিলনীর প্রথম পর্বেই চিরচেনা মানুষগুলি পরিচিতি পান। অনুষ্ঠানের পুরো সময় থেকেই জমজমাট আড্ডায় মেতে ওঠেন সাবেকরা। জড়িয়ে পড়েন সোনালী অতীতে। চার সঞ্চালক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র মইনুল ইসলাম, তাজ উদ্দিন, জুবায়ের আহমেদ ও আব্দুস সাত্তারের প্রাণবন্ত সঞ্চালনায় শুরু হয় অনুষ্ঠান। এতে প্রধান অতিথির আসন অলংকৃত করেন বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক সর্বজন শ্রদ্ধেয় সালাম স্যার। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রাক্তন শিক্ষক অধ্যাপক শাহজাহান।
পবিত্র কালাম থেকে তেলাওয়াত করেন প্রাক্তন ছাত্র আব্দুল মুকিত আজাদ। হলজুড়ে হাজারো কন্ঠে জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠানের মুল পর্ব। জাতীয় সঙ্গীত গাইতে গিয়ে অনেকেই আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন। এ যেন দেশপ্রেমের এক অনন্য দৃষ্টান্ত। সভাপতির বক্তব্য রাখেন বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র তৈমুছ আলী। আয়োজনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরার পাশাপাশি তার বক্তব্য ছিল ধন্যবাদ জ্ঞাপন ও ভুলত্রুটির জন্য আগাম ক্ষমা প্রার্থনা পূর্বক। সভাপতির বক্তব্যর পড়েই প্রাক্তন ছাত্র বিশিষ্ট সাহিত্যিক, কলামিষ্ট, কবি, মফিদুল গনি মাহতাব পাঠ করেন উপস্থিত প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের জন্য তার স্বরচিত কবিতা। স্মৃতিচারণ মূলক বক্তব্য রাখেন প্রাক্তন ছাত্র আবুল হোসেন। বিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ের কিছু স্মৃতিসহ শিক্ষকদের কথা এবং মিলন মেলার নানা দিক তুলে ধরেন তার বক্তব্য। প্রাক্তন ছাত্রদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানের বিষয় ভিত্তিক মঞ্চাভিনয় উপস্থিত সবাইকে আমোদিত করে। এতে অংশ নেন আব্দুশ সহিদ, আনহার উদ্দিন শিকদার, আব্দুল মুকিত আজাদ, আনহার শিকদার জিতু, হারুন মিয়া, মফিদুল গনি মাহতাব, আবু সৈয়দ মোহাম্মদ ওয়াহিদ ছালিক। প্রত্যকেই তাদের বিষয়ের উপর প্রাণবন্ত উপস্থাপনার জন্য পুরস্কৃত হন। তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় বিশিষ্ট জনের লেখা বই। সদরুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক আব্দুস সালাম, গৌরাঙ্গ দেবনাথ, অধ্যাপক শাহজাহান, ও আব্দুল মুক্তাদিরকে রি-ইউনিয়নের পক্ষ থেকে সম্মাননা ক্রেষ্ট প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে অতিথিদের মধ্য থেকে অভিমত ব্যক্ত করেন, বার্মিংহাম সিটি কাউন্সিলের কাউন্সিলর জিয়াউল ইসলাম, বাংলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি মোস্তফা চৌধুরী যুবরাজ, গরীব কল্যাণ ট্রাষ্টের চেয়ারম্যান হাজী আব্দুল ওয়াদুদ, দেশ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মিসবাউর রহমান। অন্যদের মধ্য উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী সাম উদ্দিন এডভোকেট, বার্মিংহাম থেকে প্রকাশিত বাংলা কাগজের সাংবাদিক খছরু খান, আব্দুল কাদির আব্দুল, আজাদ আবুল কালাম, কমিউনিটি নেতা রানজু মিয়া, বাংলাদেশ বিসনেস এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান আব্দুল মালিক পারভেজ, কমিউনিটি নেতা মোহাম্মদ আলী হেলাল, কমিউনিটি নেতা রইস মিয়া, বিশ্বনাথ ট্রাষ্ট ইউকের চেয়ারম্যান আহমেদ আলী, কমিউনিটি নেতা আব্দুল মুকিত, আলতাফুর রহমান, সৈয়দ কবির উদ্দিন, সেবুল আহমেদ, কামাল আহমেদ, শেরন আহমেদ, আবুল ফয়েজ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে কেক কাটেন প্রধান অতিথি প্রাক্তন শিক্ষক সালাম স্যার। কেককাটার পর বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র সাংবাদিক জুবায়েরের লেখা বই “আমার সাংবাদিকতা”র মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
সালাম স্যার তার বক্তব্য বলেন, আজ চোখের সামনে আমার ছাত্ররা স্ব স্ব জায়গায় প্রতিষ্ঠিত। আমি আমার আবেগ সংবরণ করতে পারছি না। এখানে উপস্থিত হতে পেরে নিজেকে গৌরবান্বিত মনে করছি। আজ আমার আরেক ছাত্র জুবায়েরের লেখা বইর মোড়ক উন্মোচন করলাম। আমি আমার প্রিয় এই সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করি। পরিশেষে আমি উপস্থিত আমার প্রাণপ্রিয় ছাত্রছাত্রীদের মঙ্গল ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি। পুণর্মিলনীতে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আব্দুস সালাম অদুদ, সাহিদুর রহমান, হাজী মিনার আলী, আফছর আলী, সাবুল আহমেদ, নোমান খান, সেলিম আহমেদ, জুনেদ আহমেদ, মাহবুব, আব্দুল মুকিত, আব্দুল মালেক, তুহিন চৌধুরী, মোস্তাক আহমেদ, বুরহান উদ্দিন খান, সুরমান আলী, মেহের উদ্দিন শিকদার, সুমন মিয়া, মুক্তাদির খান, ইকবাল মিয়া, কামাল আহমেদ হেনু, আসাবর, মুস্তাক, তুহিন আহমেদ, জামিল হোসেন খান, আশরাফুর রহমান শিরন, তারেক আহমেদ, সনির মিয়া, কয়েস আহমেদ, তারেক আল জুবায়ের, মাহবুব আহমেদ, সাহান আহমেদ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে ছড়া আবৃত্তি করেন নাজমুল ইসলাম রুহেল। খাবার পরিবেশনের পরেই শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কোনো শিল্পী নয়, সাবেক ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণেই শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পর্ব । একে একে দেশাত্মবোধক, আধুনিক, ও বাউল গান গেয়ে মাতিয়ে রাখেন উপস্থিত সবাইকে, স্বপরিবারে আসা প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীরা অনুষ্ঠান শেষে তাদের মুগ্ধতার কথা প্রকাশ করেন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে র্যাফেল ড্র-য়ের আয়োজন করা হয়। এতে বিজয়ীদের হাতে প্রথম পুরস্কার একটি ল্যাপটপ, ২য় পুরস্কার টাবলেট ও ৩য় পুরস্কার একটি স্মার্ট ফোন তুলে দেওয়া হয়।