“কথিত দানবীর” রাগীব আলী এবার তারাপুরে অবাঞ্ছিত
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ আগস্ট ২০১৬, ১:০৪ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ :
সিলেটের আলোচিত চা বাগান তারাপুর। চা-এর জন্য নয়, বরং দুই হাজার কোটি টাকার চা বাগান ধ্বংস, স্থাপনা নির্মাণ, বাগানের ভূমি দান করে “দানবীর” হয়ে উঠা এক বর্ণচোরা শিল্পপতি কারণে। যিনি বাগানে যেতেন সেই সামন্ত যুগের প্রভুর মতো “জনতার কাঁধে চড়ে”।
যে চা বাগান দখল করে আপন সাম্রাজ্য তৈরি করে নিজের প্রভাব প্রতিপত্তি বিস্তার করেছিলেন সেই “কথিত দানবীর” রাগীব আলীকে তারাপুর এলাকাতেই অবাঞ্ছিত ঘোষণা করলো তারাপুরবাসী।
ভূমি আত্মসাতের আলোচিত দুই মামলায় গ্রেফতারী পরোয়ানাভুক্ত আসামি রাগীব আলী ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর ক্ষোভে ফুঁসছে তারাপুর এলাকাবাসী। প্রতারণার মাধ্যমে দখলকৃতজমি তাদের কাছে বিক্রি করে তাদের বিপদে ফেলে পালিয়ে যাওয়ায় তারাপুর এলাকায় তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হলো ।
রাগীব আলীর অবৈধ স্থাপনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণের নোটিশ যাওয়ার পর রবিবার সকালে ‘আমরা সিলেটবাসী’ নামক একটি সংগঠনের ব্যানারে পাঠানটুলা পয়েন্টে অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়। অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তারা জালিয়াতির মাধ্যমে রাগীব আলী তাদের ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন উল্লেখ করে ক্ষতিপূরণের দাবির পাশাপাশি তারা কথিত এ দানবীরকে তারাপুরে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।
আবদুর রাজ্জাক খানের সভাপতিত্বে আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সামসুদ্দিন খান, জালাল আহমদ, ৮নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলার জগদীশ চন্দ্র দাশ, বর্তমান কাউন্সিলার ইলিয়াছুর রহমান ইলিয়াছ, রেবেকা বেগম রুনু, শ্রমিক লীগ নেতা এম. শাহারিয়ার কবীর সেলিম, যুবলীগ নেতা সেলিম আহমদ সেলিম প্রমুখ।
অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে করেরপাড়া এলাকার বাসিন্দা শিতিল দে বলেন, “রাগীব আলী আমাদেরকে পথে বসিয়েছে। সে একজন প্রতারক, তাকে আমরা আজ থেকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছি।” এ সময় তারা ক্ষতিপূরণের দাবিতে স্লোগান দেন।
উল্লেখ্য, সিলেটের তারাপুর চা বাগানের দেবোত্তর সম্পত্তিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের মাধ্যমে দুই হাজার কোটি টাকার ভূমি আত্মসাতের আলোচিত দুটি মামলায় বুধবার রাগীব আলীসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। এরপর সকলের চোখ এড়িয়ে রাগীব আলী সপরিবারে ভারতে পালিয়ে যান। রাগীব আলীর ভারতে যাওয়ার বিষয়টি প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করতে গিয়ে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত সুপার (মিডিয়া) সুজ্ঞান চাকমা বলেন, রাগীব আলী ভারতে পালিয়ে গেছেন, এর সত্যতা পাওয়া গেছে।
প্রসঙ্গত, ৪২২ দশমিক ৯৬ একর জায়গায় গড়ে ওঠা তারাপুর চা-বাগান পুরোটাই দেবোত্তর সম্পত্তি। ১৯৯০ সালে ভুয়া সেবায়েত সাজিয়ে বাগানটির দখল নেন রাগীব আলী। গত ১৯ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে হাইকোর্টের আপিল বিভাগের এক বেঞ্চ তারাপুর চা-বাগান দখল করে গড়ে ওঠা সব স্থাপনা ছয় মাসের মধ্যে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন। রায় বাস্তবায়ন করতে সিলেটের জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়। ১৫ মে চা বাগানের বিভিন্ন স্থাপনা ছাড়া ৩২৩ একর ভূমি সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্তকে বুঝিয়ে দেয় জেলা প্রশাসন।