বিশ্বনাথে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বন্ধ হলো লন্ডনী পাত্রের বিয়ে
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ আগস্ট ২০১৬, ৩:১১ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ :
সিলেটের বিশ্বনাথে স্থানীয় প্রশাসন ও সাংবাদিকদের তৎপরতায় বাল্যবিবাহের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে উপজেলার শহীদ জিয়াউর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী সুলতানা বেগম (১৪)। শুক্রবার উপজেলা সদরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে লন্ডন ফেরত চাচাত ভাই উসমান গণির সাথে কিশোরী সুলতানার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল।
তবে প্রশাসন ও সাংবাদিকদের নানামুখী পদক্ষেপের কারণে নিজের পছন্দ করা ৮ম শ্রেণির ছাত্রী সুলতানা বেগমকে বিয়ে করার স্বপ্ন পূরণ হয়নি লন্ডনী বর উসমান গণির। বৃহস্পতিবার রাতে প্রথমে থানা পুলিশের একটি দল গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান ভঙ্গ করে। এরপর শুক্রবার সকালে পুণরায় বিয়ের আয়োজন চলছে সংবাদ পেয়ে বিশ্বনাথ থানার এসআই তোফাজ্জুল হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশের আরেকটি দল বর-কনের বাড়ি পরিদর্শন করে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে ছেলে-মেয়ে অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার কথা স্বীকার করে নিজেদের ছেলে-মেয়েকে বাল্যবিবাহ দেবেন না মর্মে অঙ্গিকারনামা করে তাতে স্বাক্ষর প্রদান করেন উপজেলার ইলামেরগাঁও নিবাসী প্রবাসী বর উসমান গণির পিতা শরীফ আলী ও ৮ম শ্রেণির ছাত্রী সুলতানা বেগমের পিতা তরিক উল্লাহ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিয়ে করতে সম্প্রতি দেশে আসেন উসমান গণি। দেশে এসে বিয়ের জন্য দুই চাচাতো বোনের বড় যে তাকে পছন্দ না করে কিশোরী সুলতানা বেগমকে বিয়ে করতে চান উসমান। বিয়ের সকল আয়োজনও সম্পন্ন হয়। বাড়ি থেকে বের হওয়ার পথে নির্মাণ করা হয় একাধিক তোরণ। গায়ে হলুদের জন্য সাজানো হয় দৃষ্টিনন্দন মঞ্চ। বরযাত্রার জন্য শুক্রবার সকালে সিলেট থেকে আসে ঘোড়ার গাড়ি। কিন্তু পুলিশ ও সাংবাদিকদের সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণে সব আয়োজনই ভঙ্গ হয়ে যায়।
এদিকে বর্তমানে বিশ্বনাথ উপজেলাকে বাল্যবিবাহ মুক্ত উপজেলা হিসেবে ঘোষণার প্রক্রিয়া চলছে। ইতিমধ্যে উসমান-সুলতানাদের ইউনিয়ন রামপাশাকে বাল্যবিবাহ মুক্ত ইউনিয়ন হিসেবে ঘোষণাও করা হয়েছে। ফলে সুলতানা-উসমানর ওই বাল্যবিবাহের সংবাদ শুনে উপজেলা জুড়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। বিয়ের কার্ড হাতে পেয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেন সাংবাদিকরা। সাংবাদিকদের মাধ্যমে খবর পেয়ে টনক নড়ে প্রশাসনের। এরই ধারাবাহিকতায় উসমান ও সুলতানার বাল্যবিয়ে ভঙ্গ করতে বাধ্য হয় তাদের পরিবার।
এ ব্যাপারে স্কুলছাত্রীর পিতা তরিক উল্লাহ বলেন, লন্ডন প্রবাসী আমার ভাতিজার সাথে আমার মেয়ের বিয়ে ঠিক করা হয়েছে। তাই আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে শুক্রবার একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এটি বিয়ের অনুষ্ঠান ছিলো না। আমার মেয়ে ৮ম শ্রেণিতে পড়ে এবং ভাতিজার (উসমান) বয়স কম হওয়ায় আমরা এখন বিয়ে দিব না।
বাল্যবিয়ের খবর পেয়ে বৃস্পতিবার রাতেই তাদের (বর-কনের পরিবার) সাথে যোগাযোগ করে উসমান-ও সুলতানার বিয়ের সকল আয়োজন ভঙ্গ করা হয়েছে বলেন জানান রামপাশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার খান।
বাল্যবিবাহটি ভঙ্গ করার সত্যতা স্বীকার করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মাশহুদুল কবীর বলেন, বর-কনের পিতার কাছ থেকে বাল্যবিয়ে না দিতে অঙ্গিকারনামা নেওয়া হয়েছে।