বিএনপিতে কমিটি নিয়ে বিরোধ তুঙ্গে, নতুন দল গঠনের আভাস
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ আগস্ট ২০১৬, ৭:৩২ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ :
জাতীয় কাউন্সিলের সাড়ে চারমাস পর গত ৬ আগস্ট শনিবার চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদসহ একটি জাতীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করে বিএনপি। ঘোষিত কমিটিতে যোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের পাশাপাশি সিনিয়র নেতাদেরও অবমূল্যায়ন করার অভিযোগ উঠেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা বলেন, কমিটিতে যুদ্ধাপরাধী ও জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা নেতাদের দেয়া হয়েছে অপেক্ষাকৃত গুরুত্বপূর্ণ পদ। যা অনেকে বিস্মিত হয়েছেন। ক্ষোভে দলীয় পদ ছেড়ে দেয়ার চিন্তা করছেন কেউ কেউ। আবার অনেকে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ইতোমধ্যেই কয়েকজন পদত্যাগ করেছেন। আরো কয়েকজন পদত্যাগ করতে পারেন।
দলে ফিরিয়ে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া সত্ত্বেও কমিটিতে স্থান না দেয়ার কারণে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ করেছেন সংস্কারবাদী নেতারা। এ কারণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী একটি গণতান্ত্রিক নতুন রাজনৈতিক দল গঠনে তৎপর হয়েছেন এক সময়ে দলে প্রভাবশালী সংস্কারপন্থী অংশটি।
দীর্ঘদিন ধরে দলের ভাইস চেয়ারম্যান এম মোরশেদ খান, আবদুল্লাহ আল নোমান, সাদেক হোসেন খোকা, মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান দায়িত্ব পালন করলেও নতুন কমিটিতে তাদের মূল্যায়ন করা হয়নি। পরিস্থিতি বিবেচনায় যেকোনো সময় তাদের মধ্যে থেকে পদত্যাগের ঘোষণা আসতে পারে।ইতোমধেই পদত্যাগ করেছেন ভাইস চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক আলী ফালু, সহপ্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম ও নরসিংদী জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক দ্বীন মোহাম্মদ দীপু।
আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, নতুন কমিটি ঘোষণার পর সারা দেশ থেকে অনেক নেতাকর্মী তাকে টেলিফোন করেন। নতুন কমিটিতে তার অবস্থান দেখে সবাই আশাহত, বিস্মিত ও হতবাক হয়েছেন বলে জানান। তিনিও আশা করেছিলেন, তাকে হয়তো এবার স্থায়ী কমিটির সদস্য করা হবে।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করছি। প্রত্যাশা ছিল যথাযোগ্য পদ পাব। দলের নেতাকর্মীদের মতো আমারও মন কিছুটা খারাপ। নোমান বলেন, সমর্থক, নেতাকর্মীরা ফোন করছে, বলছে পদ ছেড়ে দিতে। তাদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় শেয়ার করছি, ভাবছি।
এদিকে শেষ পর্যন্ত বিএনপিতে ফেরার অপেক্ষা করা ও চেয়ারপার্সনের ডাক না পাওয়া সংস্কারপন্থী নেতারা অবশেষে নড়ে চড়ে বসেছেন। নতুন কমিটিতে নিজেদের না দেখে কয়েক দফা বৈঠকও সম্পন্ন করেছেন তারা। এসব বৈঠকে বিএনপির বিকল্প একটি রাজনৈতিক দল গঠনের জন্য সমঝোতায় পৌঁছেছেন তারা। পুরোপুরি গোপনে অনুষ্ঠিত এসব বৈঠকের ফলাফল নিকট ভবিষ্যতে জাতি দেখতে পাবে বলে জানান সংশ্লিষ্ট এক নেতা।
এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যারা যুক্ত হয়েছেন তারা হলেন- বিএনপি চেয়ারপার্সনের সাবেক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) জেড এ খান, মোফাজ্জল করিম, সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আশরাফ হোসেন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শাহ মো. আবুল হোসাইন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক জহিরউদ্দিন স্বপন, দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি, সাবেক সাংসদ সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল, সুনামগঞ্জ জেলার সাবেক সভাপতি ও সাবেক সাংসদ নজির হোসেন, বগুড়ার সাবেক সাংসদ ডা. জিয়াউল হক মোল্লা, জি এম সিরাজ, কাজী রফিকুল ইসলাম, কক্সবাজারের সাবেক সাংসদ প্রকৌশলী শহিদুজ্জামান, ময়মনসিংহের সাবেক সাংসদ দেলোয়ার হোসেন দুলু, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাবেক সাংসদ আনোয়ার হোসেন, চাঁদপুর জেলার সাবেক সভাপতি এস এ সুলতান টিটু, বরগুনা জেলার সভাপতি ও সাবেক সাংসদ নূরুল ইসলাম মনি, সাবেক সাংসদ শামীম কায়সার লিঙ্কন, সাবেক সাংসদ ইলেন ভুট্টো, মিরসরাইয়ের সাবেক সাংসদ এম এ জিন্নাহ, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক সাংসদ শাহরিয়ার আখতার বুলু, শাম্মী শের প্রমুখ। নতুন এ দলে সংস্কারপন্থীরা ছাড়াও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা, নির্বাহী কমিটি, বিভিন্ন মহানগর ও জেলা উপজেলা কমিটির শীর্ষস্থানীয় নেতারাও থাকবেন বলে জানা গেছে। জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের বেশ কিছু নেতাকর্মীকেও দেখা যেতে পারে নতুন দলে। এতে যোগ দিতে পারেন কয়েকজন বুদ্ধিজীবীও।
ক্ষুব্ধ নেতাদের ধৈর্য ধরে আগামী কাউন্সিল পর্যন্ত অপেক্ষা করার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দলের দুইটি স্থায়ী কমিটি ও নির্বাহী কমিটির শূন্য পদের পাশাপাশি বিষয় ভিত্তিক কমিটিগুলোতে বঞ্চিতেদের পদায়ন করা হবে।