জঙ্গি তামিমের সিলেট মিশন অনুসন্ধানে গোয়েন্দারা
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:১৭:৩৬,অপরাহ্ন ৩১ জুলাই ২০১৬
ওয়েছ খছরুঃ
জঙ্গি তালিকার শীর্ষে থাকা সিলেটের তামিম আহমদ চৌধুরীর সিলেট মিশন নিয়ে অনুসন্ধানে নেমেছেন গোয়েন্দারা। তাদের ধারণা, জঙ্গি তামিমের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে নিজ এলাকা সিলেটে। কিন্তু এখনো সিলেটের কারো সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতার সুনির্দিষ্ট তথ্য মিলেনি। তবে, কানাডায় বসবাসকালীন তামিমসহ তার পরিবারের সদস্যরা এসে গ্রামের বাড়ি বিয়ানীবাজারে বসবাস না করে সিলেট শহরের ভাড়া বাসায় উঠেন। গ্রামের বাড়ির সম্পত্তিও তামিমের পিতা শফিকুর রহমান চৌধুরী অনেক আগেই বিক্রি করে দিয়েছেন। ফলে তামিমদের সব যোগাযোগ ছিল নানা বাড়ির সঙ্গে। তার নানা বাড়ি সিলেটেরই আরেক উপজেলা ফেঞ্চুগঞ্জ। ওই ফেঞ্চুগঞ্জের মাইজভাগের লন্ডনপ্রবাসী একটি পরিবার সপরিবার সিরিয়ায় আইএসে কয়েক মাস আগে যোগ দিয়েছে। বিয়ানীজারের স্বজনরা জানিয়েছেন, তামিম কখনো বিয়ানীবাজার যায়নি। কিংবা তার সঙ্গে স্বজনদের কারো কোনো যোগাযোগও নেই। তিন বছর আগে কানাডা থেকে তামিম দেশে আসার খবর সাম্প্রতিক তারা গণমাধ্যমের বদৌলতে জেনেছেন। তামিম আহমদ চৌধুরীর জন্ম কানাডায়। বেড়ে উঠাও সেখানে। পড়ালেখাও করেছে সেখানকার নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। ১৯৭১ সালের আগে তার পিতা শফিকুর রহমান চৌধুরী চট্টগ্রামে জাহাজে চাকরি করতেন। মুক্তিযুদ্ধের পর পরিবার-পরিজন নিয়ে তিনি কানাডায় পাড়ি জমান। তিনি অনেকবার দেশে এলেও জঙ্গি তামিম কিংবা তার মা, ভাই-বোনদের কেউই একবারের জন্যও গ্রামের বাড়ি আসেনি। সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার দুবাগ ইউনিয়নের বড়গ্রামে তামিমদের পৈত্রিক নিবাস। একদম ভারত সীমান্ত ঘেঁষা হওয়ায় পরিবারের সদস্যরা বাড়ি ফিরতে অনীহা দেখাতো। গত ২০০১ সালে তারা সপরিবারে বাংলাদেশে আসে। কিন্তু গ্রামের বাড়িতে একবারের জন্যও আসেনি। সিলেট নগরীতে বাসা ভাড়া করে প্রায় ৩ মাস থাকার পর তারা আবার ফিরে যায় কানাডায়। ব্যক্তিগত জীবনে তামিম বিবাহিত এবং ৩ সন্তানের জনক। তারা ৩ ভাই ও ১ বোন। গ্রামের বাড়ির কারো সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। মূলত ফেঞ্চুগঞ্জের নানা বাড়ির লোকজনের সঙ্গে তাদের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। জঙ্গি তামিমের আপন চাচাতো ভাই তাজিম আহমদ চৌধুরী, প্রতিবেশী জাকারিয়া আহমদ চৌধুরী ও স্থানীয় চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম এবং এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। তারা তামিম ও তার পরিবারের কেবল ছবি দেখেছেন। এদিকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যানুযায়ী, তামিম আহমদ চৌধুরী দীর্ঘদিন থেকে নিখোঁজ। তার পাসপোর্ট নম্বর এ এফ ২৮৩৭০৭৬, ইস্যুর তারিখ ০৪-০৮-২০১৩, মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ ০৩-০৮-২০১৬, পুরাতন পাসপোর্ট নং এল ০৬৩৩৪৭৮, জন্ম নিবন্ধন নং ১৯৮৬০০৯১২৪১০০১৩৪২। এলাকায় সরকারি কিংবা বেসরকারি তালিকায় তামিম কিংবা তার পরিবারের কারো নাম নেই। তামিম যে জঙ্গি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, তাও জানেন না এলাকার বেশির ভাগ লোক। তবে বিভিন্ন মাধ্যমে তার জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার তথ্য প্রকাশ পেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা প্রায় প্রতিদিন এলাকায় এসে খোঁজখবর নিচ্ছেন। গোয়েন্দারা দফায়-দফায় গ্রামের বাড়ি ঘুরে তামিমদের আদ্যপান্ত জানার চেষ্টা করছেন। প্রতিবেশী জাকারিয়া আহমদ চৌধুরী জানান, তামিমদের গ্রামের বাড়ির বসতঘরে প্রাচীন বনেদী পরিবারের ছাপ রয়েছে। তবে গ্রামে তাদের তেমন কোনো সহায় সম্পত্তি নেই। জমিজমা যা ছিল, তাও বিক্রি করে দিয়েছে তামিমের পিতা। দুবাগ ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম জানান, জঙ্গি তামিমের গ্রামের বাড়ির অনেক সদস্যই ধর্মভিত্তিক দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তার দাদা মৃত আবদুল মজিদ চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তৎকালীন শান্তি কমিটির সদস্যদের নানাভাবে সহায়তা করতেন। বিয়ানীবাজার থানার অফিসার ওসি মো. জুবের আহমদ বলেন, জঙ্গি তামিমের বিষয়টি আমাদের নজরে আসার পর থেকে আমরা নিয়মিত খোঁজখবর নিচ্ছি। পুলিশ কয়েকবার তার বাড়িতে গিয়ে অবস্থান জানার চেষ্টা করছে। তবে তারা কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাস করে বলে জানান তিনি।