ইসলামী ব্যাংক; নামে ইসলামী মালিক ইহুদি ও খ্রিস্টান !
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ জুলাই ২০১৬, ৪:৪৯ অপরাহ্ণ
সুরমা ডেস্ক :
মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে পুঁজি করে সচল রয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। এ ব্যাংক ইসলামী শরিয়াহভিত্তিক বলে দাবি করলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে শরিয়াহ নিয়ম অনুসরণ করছে না। বরং মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে ইসলামকে বাণিজ্যিকরণ করছে। জানা গেছে, ব্যাংকটির প্রায় ৭০ শতাংশ মালিকানা বিদেশীদের হাতে। আর ওইসব বিদেশীর অধিকাংশই ইহুদি ও অমুসলিম। এ ছাড়া ব্যাংকটির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে শতশত কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ইসলামী ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১৩ ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং মন্ত্রণালয়ের নাম পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, ব্যাংকটির বিরুদ্ধে গুরুতর ঋণ অনিয়মেরও অভিযোগ উঠেছে। এর আগে সন্ত্রাসবাদে অর্থের জোগানদাতা হিসেবে এ ব্যাংকটির বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়ে জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাত বলেন, যেসব ব্যাংক ইসলামিক ব্যাংক বলে কার্যক্রম চালাচ্ছে সেগুলো কোনোভাবেই সুদমুক্ত নয়। কাজেই ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে ‘ইসলাম’ শব্দটি বাদ দেয়া উচিত। তিনি বলেন, ইহুদিদের পরিচালিত কয়েকটি ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকিং চালু করেছে, এটাকে ধোঁকাবাজি ছাড়া আর কি বলা যেতে পারে? প্রচলিত ব্যাংকিংয়ের পাশাপাশি যারা ইসলামী ব্যাংকিং করছে তারা মানুষের সঙ্গে মারাত্মক প্রতারণা করছে বলে তিনি মনে করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, দেশের দরিদ্র মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে ইসলামকে বাণিজ্যিকরণ করছে দেশের ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা। তিনি নিজের ‘মৌলবাদের অর্থনীতি’ শীর্ষক গবেষণার তথ্য তুলে ধরে বলেন, জামায়াতে ইসলামী ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ ৮টি খাতে অর্থায়ন করেছে। এটা তাদের ‘অর্থনৈতিক কার্যভিত্তিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়া’। তারা ধর্মের নামে ক্ষমতায় আসতে চায়। কিন্তু তা সম্ভব না হওয়ায় রাষ্ট্রের মধ্যে রাষ্ট্র বা সরকারের মধ্যে সরকার রাখার চেষ্টা করছে। ২০১০ সালে ইসলামী ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত ‘ইসলামী অর্থনীতি ও ব্যাংকিং’ শীর্ষক এক সেমিনারে আবুল বারকাত বলেন, জনতা ব্যাংকের ৬টি শাখায় ইসলামিক ব্যাংকিং চালুর অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। ওই ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে আমি বুঝতে চেষ্টা করেছি, ইসলামিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার আয় সুদ না অন্যকিছু। দেখেছি এটা কোনোভাবেই সুদের বাইরে নয়। এজন্য তিনি জনতা ব্যাংকের ইসলামী ব্যাংকিং চালুর সম্ভাবনা নাকচ করে দেন।
সূত্র জানায়, ইসলামী ব্যাংক নিজেদের সুবিধামতো ইসলামী শরিয়াহ বোর্ড গঠন করে নিজেদের স্বার্থে কার্যক্রম চালাচ্ছে। অদৃশ্য কারণে এ শরিয়াহ বোর্ডের সিদ্ধান্তের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক কখনো হস্তক্ষেপ করে না। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, রেগুলেটরি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি নিজস্ব শরীয়াহ বোর্ড থাকা উচিত। কিন্তু কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে এটি করা যাচ্ছে না।
ফাউন্ডেশনে অর্থ প্রদান বন্ধের নির্দেশ : জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডকে তার অধিভুক্ত সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনে অর্থ প্রদান বন্ধের নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের অর্থের উৎস ও এর ব্যবহার নিয়ে প্রাথমিকভাবে কিছু অস্বচ্ছতার প্রমাণ পাওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক ওই সিদ্ধান্ত নেয়।
মুনাফার চার ভাগের তিন ভাগ বাইরে চলে যাচ্ছে : ব্যাংকটি প্রতি বছর যে বিপুল পরিমাণ মুনাফা করছে, তার চার ভাগের তিন ভাগ বাইরে চলে যাচ্ছে। আর এর বিদেশী মালিকরা ডলারে তাদের মুনাফা নিয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে চাপ তৈরি হয়ে থাকে। বিদেশীদের মালিকানা না থাকলে ওই পরিমাণ ডলার বাংলাদেশে থেকে যেত। ২০১২ সালে ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা মুনাফা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এর ৭০ শতাংশ দাঁড়ায় ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ইসলামী ব্যাংকের বিদেশী মালিকরা ওই পরিমাণ লভ্যাংশ নিয়ে গেছেন। একইভাবে ২০১১ সালে ব্যাংকের মুনাফা ছিল প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সে হিসাবে সে বছর দেশের বাইরে গেছে প্রায় ১ হাজার ৫০ কোটি টাকা। এদিকে বিদেশী প্রতিষ্ঠানের হাতে মালিকানা থাকায় বিনিয়োগকারীদের বিষয়ে তেমন কোনো তথ্য নেই বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে। এসব প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি আন্তর্জাতিকভাবে কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত কি না তাও জানা সম্ভব নয়।
সূত্র আরও জানায়, ইসলামী ব্যাংকের বিদেশী একাধিক পরিচালক এবং শেয়ারহোল্ডারের বিরুদ্ধে তাদের দেশে বিভিন্ন সময় নানা অপরাধের অভিযোগও উঠেছে। তারা জঙ্গি ও সন্ত্রাসে অর্থায়নে জড়িত বলে বিভিন্ন সময় তথ্য বেরিয়ে এসেছে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলোতে। অন্যদিকে বাংলাদেশেও ইসলামী ব্যাংকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় নানা অভিযোগ উঠেছে। এর বিরুদ্ধে জামায়াত ও শিবিরের কর্মকাণ্ডে অর্থায়নের অভিযোগ রয়েছে। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট বোমা হামলার সঙ্গে জড়িত জঙ্গি সংগঠন জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের প্রধান শায়খ আবদুর রহমান এ ব্যাংকের মাধ্যমে হিসাব পরিচালনা করতেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগের তথ্যমতে, বর্তমানে এই ব্যাংকে শতাধিক সন্দেহজনক হিসাব রয়েছে। সেগুলোর লেনদেন তদারকির মধ্যে রাখা হয়েছে। যে কোনো সময় তথ্য-প্রমাণসহ প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে এর বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বলেন, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকসহ নিয়ন্ত্রক সব প্রতিষ্ঠানগুলোর বিধিবিধান মেনে চলে। ইসলামী ব্যাংক ১৬ কোটি মানুষের ব্যাংক। এটি জনগণের সম্পদ। ৭০ লাখ আমানতকারীর ব্যাংক। তিনি বলেন, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ সরকারের ৫ শতাংশ শেয়ারের অংশগ্রহণে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। বর্তমানে আমাদের বিদেশী শেয়ারহোল্ডার ৬৩.০৯ শতাংশ। তিনি আরও বলেন, আইডিবিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার মূল্যায়নে এ ব্যাংক শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্বে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের একটি মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড এমন একটি শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান, যার কার্যক্রমের সঙ্গে দেশের শিল্প-বাণিজ্যসহ কয়েক কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। ইসলামী ব্যাংকের মতো একটি সর্ববৃহৎ দেশ ও জনগণের ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সঠিক অবস্থান যাচাই না করে মন্তব্য করা বিস্ময়কর ও দুঃখজনক।