ছাতক-ভোলাগঞ্জ রজ্জুপথের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত
প্রকাশিত হয়েছে : ৭:২৯:১৩,অপরাহ্ন ২৯ জুলাই ২০১৬
সুরমা নিউজ :
অব্যবস্থাপনা ও অবহেলায় রেলওয়ের নিয়ন্ত্রাধীন দেশের একমাত্র ছাতক-ভোলাগঞ্জ রজ্জুপথ অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। রজ্জু ছিঁড়ে ও ট্র্যাসেল পড়ে যাওয়ার কারণে রজ্জুপথ ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়েছে।
বিগত দুবছরের মধ্যে ভেঙ্গে পড়া রজ্জু পথের কোন সংস্কার কাজ করা হয়নি। রজ্জুপথ রক্ষা জোরালো কোন পদক্ষেপও নেয়নি কর্তৃপক্ষ। তখন নৌ-পথে দূর্ঘটনা এড়াতে পড়ে যাওয়া ট্র্যাসেল এলাকায় লাল পতাকা উড়িয়ে দায় সেরেছে কর্তৃপক্ষ। এর পর থেকে যত্রতত্র পড়ে আছে মূল্যবান রজ্জু ও বাকেট।
অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকা রজ্জুপথের ট্র্যাসেল গুলোর সাপোর্ট এ্যাঙ্গেল চুরি হয়ে যাওয়ায় একাধিক ট্র্যাসেল অত্যন্ত দুর্বল হয়ে গেছে। যেকোন মুহুর্তে ট্র্যাসেল গুলো ভেঙ্গে পড়ার আশংকা রয়েছে। রেলওয়ে বিভাগের অবহেলার কারনে কয়েক কোটি টাকার সরকারি সম্পদ পড়ে আছে অরক্ষিতভাবে। বিষয়টি অবগত থাকা সত্ত্বেও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ রজ্জুপথ রক্ষায় কোন ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে রেলওয়ের নিয়ন্ত্রাধীন দেশের একমাত্র ছাতক-ভোলাগঞ্জ রজ্জুপথ।
শিল্প নগরী হিসেবে খ্যাত ছাতককে শিল্প-সমৃদ্ধ ও শোভাবর্ধন করা রোপওয়ে দীর্ঘ প্রায় ৪০বছর ধরে নজর কাড়ছিল মানুষের। প্রায় দুবছর পূর্বে বর্ষা মৌসুমে হাওর অঞ্চলে একটি ট্রেসেল ফাউন্ডেশন উপড়ে পড়লে রজ্জুপথ ব্যবস্থা হয়ে পড়ে ভেঙ্গে পড়ে। বর্তমানে আরো অন্তত দু’টি ট্রেসেল উপড়ে পড়ার আশংকা রয়েছে। রজ্জু ছিঁড়ে ও ট্র্যাসেল পড়ে যাওয়ার কারণে রজ্জুপথ ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়েছে।
রেল লাইনে ব্যবহৃত পাথরের চাহিদা পুরণে ১৯৬৫ সালে ছাতক-ভোলাগঞ্জ রজ্জুপথ স্থাপনের কাজ শুরু হয়। সুরমা নদীর কুল ঘেষে এক নয়নাভিরাম পরিবেশে ১শ’১৯টি ট্র্যাসেলের উপর ১৯ কিলোমিটার দীর্ঘ রজ্জুপথ স্থাপিত হলে এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে। তৎকালীন সময়ে অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে রজ্জুপথে পাথর পরিবহনের সহজ উপায় হিসেবে এ রজ্জুপথ স্থাপন করা হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতিষ্ঠার পর যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য একাধিকবার বন্ধ রাখা হলেও ১৯৮০ সাল থেকে পাথর পরিবহনে সচল ছিল এ রজ্জুপথ। অনেক সময় বাকেটে চড়ে রজ্জু পথে ছাতক-ভোলাগঞ্জ যাতাযাত করতো সংশ্লিষ্টরা। পাথর পরিবহনে ৪শ’২৫টি বাকেট নিয়ে যাত্রা শুরু হলে বর্তমানে ৩শ’৫টি সচল রয়েছে। অকেজো অবস্থায় ১শ’২০টি বাকেট গুদামে রক্ষিত রয়েছে। রজ্জুপথে পাথর পরিবহনের উপর ভিত্তি করে এখানের সহস্রাধিক শ্রমিক-ব্যবসায়ি জীবিকা নির্বাহ করতো। রোপওয়ে ব্যবস্থা স্থায়ী বন্ধের আশংকায় সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ি ও শ্রমিক শ্রেণীর লোকজনের মধ্যে বিরাজ করছে হতাশা ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৪ সালের জুলাই মাসের মাঝামঝি বর্ষা মৌসুমে হাওর এলাকায় রজ্জু পথের ৪১-৪২নং ট্র্যাসেলের মাঝখানে রজ্জু ছিঁড়ে গেলে রজ্জুপথে পাথর পরিবহন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ে। একই সালের ২২ সেপ্টেম্বর সাপোর্ট এ্যাঙ্গেল চুরি হয়ে যাওয়া কারণে ৪৩নং ট্র্যাসেল ফাউন্ডেশনসহ উপড়ে হাওরের পানিতে। ট্র্যাসেল পড়ে যাওয়ায় লন্ড-ভন্ড হয়ে যায় রোপওয়ে ব্যবস্থা।
পানিতে তলিয়ে যাওয়া ট্র্যাসেল এলাকায় সতর্ক সংকেত হিসেবে লাল পতাকা উড়িয়েছে রোপওয়ে কর্তৃপক্ষ। হাওরের পানিতে যত্রতত্র নিমজ্জিত, অর্ধ নিমজ্জিত ও অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে প্রায় অর্ধ শতাধিক বাকেট। ভোলাগঞ্জ কোয়ারী এলাকায় পাথর খেকোদের অত্যাচারে ও গোড়া থেকে নির্বিচারে পাথর উত্তোলন করার ফলে অপর একটি ট্র্যাসেল ভূমির সাথে প্রায় ৪৫ডিগ্রি এঙ্গেলে বাঁকা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
অরক্ষিত থাকার কারনে ট্র্যাসেলগুলোর সাপোর্ট এ্যাঙ্গেলও নিয়মিত চুরি হয়ে গেলেও কর্তৃপক্ষ কোনরকম ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। ফলে ট্র্যাসেলগুলো ক্রমাগত দুর্বল হওয়ার কারনে গোটা রোপওয়ে ব্যবস্থা এখন হুমকির মূখে পড়েছে। নজরধারী করার জন্য রেলওয়ের নিয়োজিত আনসার বাহিনী থাকলেও দূর্নীতি ও দায়িত্বে অবহেলার কারণে রেলওয়ের সম্পদ রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। জনবল সংকটের মূখে পাথর উত্তোলনের ভোলাগঞ্জ-কালাসাধক প্রজেক্টটি বিকল হয়ে আছে দীর্ঘ দিন ধরে।