৯০০০ পুলিশ বরখাস্ত
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ জুলাই ২০১৬, ৮:৫৬ পূর্বাহ্ণ
সুরমা ডেস্কঃ
তুরস্কে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানচেষ্টার পর সরকারের ব্যাপক ধরপাকড় অব্যাহত রয়েছে। অভ্যুত্থানচেষ্টায় জড়িত থাকার অভিযোগে প্রায় নয় হাজার পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এর আগে শতাধিক জেনারেল, অ্যাডমিরালসহ সশস্ত্র বাহিনীর প্রায় ছয় হাজার সদস্য এবং প্রায় তিন হাজার বিচারক ও কৌঁসুলিকে আটক করা হয়।
এদিকে বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান একিন ওজতুর্ক অভ্যুত্থানের পরিকল্পনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদোলু। অভ্যুত্থানচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর আটক এই জেনারেলকে গতকাল সোমবার আঙ্কারার আদালতে হাজির করা হয়।
তবে দেশটির দুটি বেসরকারি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, জেনারেল ওজতুর্ক অভ্যুত্থান পরিকল্পনায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এনটিভিকে তিনি বলেন, ‘যাঁরা অভ্যুত্থানচেষ্টায় জড়িত বা নেতৃত্বে ছিলেন, আমি তাঁদের কেউ নই। কারা এতে জড়িত ছিলেন, তা-ও আমি জানি না।’
অভ্যুত্থানচেষ্টা সামাল দেওয়ার পরপরই দেশে মৃত্যুদণ্ড পুনর্বহালের চিন্তাভাবনার কথা জানিয়ে দেশে এবং দেশের বাইরে সমালোচনার মুখে পড়েছেন প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হলে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) তুরস্কের সদস্যপদ পাওয়ার সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে যাবে বলে সতর্ক করে দিয়েছে ইইউ।
এরদোয়ান সরকারকে উৎখাত করতে গত শুক্রবার রাতে ট্যাংক-সাঁজোয়া যান আর জঙ্গিবিমান নিয়ে ব্যারাক থেকে বেরিয়ে পড়ে সেনাবাহিনীর একাংশ। তবে সকাল নাগাদ পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণে আসে। এই সময়ের মধ্যে সেনাবাহিনীর ওই অংশ এবং এরদোয়ান-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ১০৪ সেনাসদস্যসহ ২৬৫ জন প্রাণ হারান।
অভ্যুত্থানচেষ্টার জন্য যারা দায়ী, সেই ‘ভাইরাস’ থেকে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে মুক্ত করার অঙ্গীকার করেছেন রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। বলেছেন, ষড়যন্ত্রকারীরা কোথাও লুকিয়ে থাকতে পারবে না।
গতকাল তুরস্কের গণমাধ্যমে বলা হয়, অভ্যুত্থানে ব্যর্থ হয়ে আট সেনা কর্মকর্তা হেলিকপ্টারে প্রতিবেশী গ্রিসে পালিয়ে আশ্রয় প্রার্থনা করেন। পরে অনুপ্রবেশের অভিযোগে আটক করে তাঁদের গ্রিসের সীমান্ত শহর আলেকজান্দ্রোপলির আদালতে হাজির করা হয়। তাঁদের দেশে ফেরত পাঠাতে অনুরোধ করেছে তুরস্ক।
সরকারি বার্তা সংস্থা আনাদোলু জানায়, অভ্যুত্থানচেষ্টার পর ৮ হাজার ৭৭৭ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে সরকার। তাঁদের মধ্যে ৭ হাজার ৮৯৯ জন পুলিশ সদস্য এবং বিভিন্ন শহরের ২৯ জন গভর্নর। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা দেখভালের কাজে নিয়োজিত পুলিশের ৬১৪ জন সদস্যও আছেন বরখাস্ত হওয়া কর্মীদের এ দীর্ঘ তালিকায়।
অভ্যুত্থানচেষ্টা ব্যর্থ করে দেওয়ার পরপরই দেশে মৃত্যুদণ্ডের বিধান ফিরিয়ে আনার ইঙ্গিত দেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট। রোববার এক সমাবেশে তিনি বলেন, মৃত্যুদণ্ডের বিষয়টি নিয়ে পার্লামেন্টে বিবেচনা করা হবে। এরপর গতকালও তিনি সিএনএনকে একই কথা বলেন।
দেশটির প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি) গতকাল বলেছে, ষড়যন্ত্রকারী ও সহায়তাকারীদের অবশ্যই আদালতের কাঠগড়ায় বিচার করতে হবে। তবে দেশের সেনাবাহিনীকে শত্রু হিসেবে তুলে ধরাটাও ঠিক হবে না।
মৃত্যুদণ্ডের পুনর্বহালের কথা বলে দেশের বাইরেও সমালোচনার মুখে পড়েছেন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। ইইউর নেতারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, অভ্যুত্থানচেষ্টা এরদোয়ানকে আইনের শাসন অমান্য করার কোনো লাইসেন্স দেয়নি। ইইউর পররাষ্ট্রবিষয়ক প্রধান ফেদেরিকা মোঘারিনি বলেছেন, মৃত্যুদণ্ডের বিধান পুনর্বহাল করা হলে ইইউতে তুরস্কের সদস্যপদ পাওয়ার সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে যাবে। তিনি বলেন, ‘এটা স্পষ্টভাবে বলছি, মৃত্যুদণ্ড চালু করা কোনো দেশ ইইউর সদস্য হতে পারবে না।’
ইইউতে তুরস্কের অন্তর্ভুক্তির চেষ্টার অংশ হিসেবে ২০০৪ সালে দেশটিতে মৃত্যুদণ্ডের বিধান বিলোপ করা হয়। যদিও এর বেশ আগে ১৯৮৪ সাল থেকেই দেশটিতে কারও এই সাজা কার্যকর করা হয়নি।
জার্মানি সতর্ক করে বলেছে, তুরস্ক যদি মৃত্যুদণ্ড ফিরিয়ে আনে, তবে ইইউয়ে দেশটির অন্তর্ভুক্তি নিয়ে আলোচনার পরিসমাপ্তি ঘটবে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বলেন, ‘অভ্যুত্থানচেষ্টায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের সম্মুখীন করাকে আমরা নিশ্চিতভাবে সমর্থন করি। কিন্তু বিধিবহির্ভূত পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আমরা সতর্ক করছি।’
নথি ফাঁস করবে উইকিলিকস: বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, গোপন নথি ফাঁস করে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী ওয়েবসাইট উইকিলিকস গতকাল বলেছে, তুরস্কে ব্যর্থ অভ্যুত্থানচেষ্টার প্রেক্ষাপটে তারা দেশটির রাজনৈতিক ক্ষমতার কাঠামো নিয়ে গোপন নথি প্রকাশের পরিকল্পনা করছে।
এ ব্যাপারে এক টুইটার বার্তায় উইকিলিকস বলেছে, ‘লড়াইয়ের জন্য তৈরি হও। কেননা, আমরা তুরস্কের রাজনৈতিক ক্ষমতাকাঠামো নিয়ে শতাধিক নথি প্রকাশ করতে চলেছি।’