আজ নন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুবার্ষিকী
প্রকাশিত হয়েছে : ৭:৩৫:৩১,অপরাহ্ন ১৯ জুলাই ২০১৬
সুরমা নিউজ:
সাহিত্যের বরপুত্র, বাংলার জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর আজ চার বছর। ২০১২ সালের এই দিনে তিনি আমাদের ছেড়ে চলে যান না ফেরার দেশে। তার চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দেশব্যাপী নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। টেলিভিশন চ্যানেলগুলো সাজিয়েছে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে অনুষ্ঠানমালা। পারিবারিকভাবেও স্মরণ করা হবে দেশের বরেণ্য এই কথাসাহিত্যিককে।
এ উপলক্ষে লেখকের পরিবার এবং বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে সমাধিস্থল নুহাশ পল্লীতে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে কবর জিয়ারত, কোরানখানি, আলোচনা সভা, ব্লাড গ্রুপিং, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, এতিমদের মাঝে খাবার বিতরণ, রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, ক্যানসার সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ।
হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার ভক্তদের সংগঠন হিমু পরিবার দেশের প্রায় ৪৭টি জেলায় বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। তাদের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকালে হুমায়ূন আহমেদের সমাধিতে হলুদ পাঞ্জাবি ও নীল শাড়ি শ্রদ্ধা নিবেদন।
সারাদেশে ক্যানসার সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ, সেমিনার, রক্তদান কর্মসূচি, হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, গরিবদের মাঝে খাবার বিতরণ, হুমায়ূন আহমেদের নাটক, সিনেমার প্রদর্শনী, আলোচনা সভা ও সেমিনার করা হবে। এছাড়াও নুহাশ পল্লী ও আশেপাশের এলাকায় বিনামূল্যে রক্তদান কর্মসূচির আয়োজন করেছে হুমায়ূন ভক্ত হিমু পরিবার।
হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন স্বপ্নের কারিগর। গল্পের জাদুকর। বাংলা সাহিত্যের পরতে পরতে তিনি তার প্রতিভা ফুটিয়ে তুলেছেন নিখুঁত বুননে। হুমায়ূনের মধ্যে সৃজনশীলতার যে বিস্ময়কর প্রকাশ ঘটেছিল, তার তাৎপর্য উপলব্ধি করতে আরও সময় লাগবে। অনেক বৈপরীত্যপূর্ণ বিষয়কে তিনি একত্রে মিলিয়েছিলেন। তার জন্য আমরা শোক করব, গৌরবও করব। আর সময় তাকে বাঁচিয়ে রাখবে, ইতিহাস তাকে বাঁচিয়ে রাখবে। হুমায়ূন আহমেদ এই মুহূর্তে একটি কিংবদন্তি। এই কিংবদন্তি বাংলার এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মকে হুমায়ূনের গল্প পড়ে শোনাবে। অকাল মৃত্যু কোনো সাহিত্য স্রষ্টার জন্য বহুকাল বেঁচে থাকার অন্তরায় নয়।
হুমায়ূন আহমেদও আমাদের মধ্যে বহু প্রজন্ম বেঁচে থাকবেন। হুমায়ূন তাঁর প্রথম উপন্যাসটি লিখেই বাঙালি সাহিত্যানুরাগী এবং পাঠকদের জানিয়ে দিয়েছেন যে সাহিত্যে একজন নতুন মহানায়কের জন্ম হয়েছে। তার লেখক জীবনের বয়স ৪০ বছরের বেশি নয়, এই সময়ের মধ্যে হুমায়ূন আহমেদ তার সৃষ্টির অজস্র ধারায় বাংলা সাহিত্য, বাংলা নাটক এবং চলচ্চিত্র নির্মাণের ধারাকে বহুদূর এগিয়ে নিয়ে গেছেন। এ সাফল্য যেকোনো লেখকের জন্যই বিশাল। হুমায়ূনের বৈশিষ্ট্য ছিল, যা কিছু তিনি লিখতেন তা উপন্যাস হোক, নাটক হোক বা চলচ্চিত্র নির্মাণ হোক― তাতে হুমায়ূন আহমেদের একটি ব্যক্তিগত স্পর্শ থাকত, যা ছিল জাদুকরী। সাহিত্যজীবনের শুরু থেকে মৃত্যুর শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত এমন ধারাবাহিক সাফল্য হাজার বছরেও কোনো বাঙালি লেখক পেয়েছেন বলে জানা যায় না।
রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক অনেক আন্দোলনে তিনি শারীরিকভাবে অংশ নেননি। কিন্তু তিনি এমন কিছু লিখেছেন, যা আন্দোলনকে বেগবান করেছে। সত্য কথা স্পষ্ট করে বলার মতো সাহসিকতা তার ছিল। হুমায়ূন আহমেদ তার সাহিত্য, নাটক ও চলচ্চিত্রে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সঞ্চারে যে ভূমিকা রেখেছেন তা অনবদ্য। তার নাটকে ‘তুই রাজাকার’ সংলাপটি ব্যবহার করেছিলেন। এ থেকেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবী সূচনা হয়েছিল। তিনি বিভিন্ন সময়ে নানা সমস্যা নিয়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লিখে তার মতামত ব্যক্ত করেছেন সরকার বা অন্য কারও তোয়াক্কা না করে। যখন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে দূর করার চক্রান্ত চলছিল তখন চলচ্চিত্র, নাটকের মধ্য দিয়ে মানুষের মাঝে সেই চেতনাকে জাগরিত করেছেন হুমায়ূন আহমেদ।