হিযবুত তাহরীর যেভাবে বেসরকারি ভার্সিটিতে তৎপরতা চালায়
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ জুলাই ২০১৬, ৭:৩১ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁ ও শোলাকিয়া ঈদগা মাঠের অদূরে জঙ্গি হামলা থেকে শুরু করে ফ্রান্সের নিস শহরে ১৯ টনি লরির চাকায় পিষে ৮৪ জনকে হত্যার পর বিশ্বজুড়েই জঙ্গিবাদ এখন একটি বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ সরকারও জঙ্গিবাদের শেকড় উপড়ে ফেলতে চাইছেন। এ লক্ষে সরকার নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তথা উঠতি বয়সী মেধাবী কিশোর-তরুণরা কীভাবে জঙ্গিবাদের দিকে ঝুঁকছে? কে তাদের মগজ ধোলাই করছে? বিবিসির একটি প্রতিবেদনে শিক্ষার্থীদের জঙ্গি হয়ে ওঠার কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে।
দুজন ছাত্র তাঁর অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন।একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শফিক(ছদ্মনাম)। বছর দেড়েক আগের একটি ঘটনা তিনি সাথে শেয়ার করছিলেন। বিকেলের দিকে ইউনিভার্সিটির লবিতে বসে ছিলেন তিনি। ক্যাম্পাস ততক্ষণে অনেকটাই ফাঁকা হয়ে এসেছে। শফিক বলছিলেন এসময় তিনি দেখতে পান একটি মাইক্রোবাস তাদের বিশ্ববিদ্যালয় ভবনের মূল গেটে থামে এবং সেখান থেকে কয়েকজন বের হয়ে সরাসরি তার কাছেই আসে।
নাম পরিচয় জানতে চেয়ে তার হাতে ধরিয়ে দেয় কিছু লিফলেট। শফিক বলছিলেন লিফলেটটি ছিল নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরের। ছেলেগুলো শফিকের সাথে দীর্ঘসময় নিয়ে কথা বলার আগ্রহ দেখায়। কিন্তু শফিক জানতো হিযবুত তাহরীর একটি নিষিদ্ধ সংগঠন এবং এদের সদস্যদের সাথে তিনি কথা বাড়াতে চাননি। ক্লাসের দোহাই দিয়ে তাদের ততক্ষনাৎ এড়িয়ে যান তিনি। কিন্তু বিষয়টি তার মনে খটকা লাগে। ঘন্টা দুয়েক পরে আবারো ফিরে আসেন একই জায়গায়। দেখতে পান ছেলেগুলো চলে গেছে কিন্তু বেশ কিছু লিফলেট রেখে গেছে একটি টেবিলের ওপর।
বাংলাদেশে সম্প্রতি গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলার সাথে জড়িত অন্তত তিনজন ছিল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া একজন ছাত্র কিভাবে উগ্র মতবাদের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে বা কি প্রক্রিয়ায় তারা জড়িয়ে পড়ছে সেই প্রশ্ন এখন ঘুরে ফিরে আসছে। ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আশা ইউনিভার্সিটি ঘুরে দেখা গেল প্রবেশপথে নিরাপত্তা কর্মীরা সবার ব্যাগ ও দেহ তল্লাসি করছেন। যেটা এর আগে কখনও হয়নি। শিক্ষার্থীদের পুরো-নাম ঠিকানা লিখতে হচ্ছে তাদের খাতায়। আর শিক্ষার্থী, শিক্ষক সবার গলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড ঝুলছে।এই প্রতিবেদক আরো দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরেছেন শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলার জন্য।
কিন্তু গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সংশ্লিষ্ট থাকার খবরের পর, যেকোনও মন্তব্য করতে যেয়ে তারা হয়ে পড়েছে অনেক সর্তক। এমনকি সংবাদমাধ্যমের সাথে কথা বলতেও তারা নারাজ। অর্থাৎ কিভাবে তাদের কাছে জঙ্গি মতবাদ পৌঁছাচ্ছে সেটার উৎস খুঁজে পাওয়া সহজ কোন কাজ নয়। তারপরেও একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তার একটি অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে রাজি হন। এই দুই ছাত্রের বক্তব্য থেকে ধারণা পাওয়া যায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে কোন না কোন ভাবে জঙ্গি সংগঠনগুলো প্রচারণা চালানো বা ছাত্রদের আকৃষ্ট করার একটা প্রচেষ্টা নিয়েছিল। কিন্তু প্রক্রিয়াটা কি সেটা বের করা বেশ কঠিন।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন প্রথমে কিছুদিন ইসলামের কথা বলে সাধারণ ছাত্রদের নামাজে অভ্যস্ত করে। এরপর ধীরে ধীরে তারা মাত্রা এবং সুযোগ বুঝে এ ধরনের উগ্র প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। কিন্তু ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে এসে ছাত্রদেরকে মোটিভেট করার মত ঘটনা পর্যবেক্ষণের জন্য কি ব্যবস্থা আছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের? আশা ইউনিভার্সিটির ভিসি অধ্যাপক ডালেম চন্দ্র বর্মন বলছিলেন মোটিভেশন বা ছাত্রদের উগ্রবাদে অনুপ্রাণিত করার কাজ হয়েছে আস্তে আস্তে দীর্ঘ সময় নিয়ে।
এখন এই দুইটি হামলার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ছাত্রদের ওপর নজরদারি বাড়ানোর বিষয়ে যেমন চিন্তা-ভাবনা চলছে তেমনি কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে কাজ করার উদ্যোগ নিচ্ছে তারা।