জঙ্গি হামলার আশঙ্কা; সিলেটের সর্বত্র সতর্কতা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ জুলাই ২০১৬, ৬:২৫ অপরাহ্ণ
ওয়েছ খছরু:
জঙ্গি হামলার আশঙ্কার বাইরে নয় বিভাগীয় নগরী সিলেটও। এ কারণে গোটা সিলেটের কেপিআই জোনে গ্রহণ করা হয়েছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সিলেটের দরগাহ, সরকারি স্থাপনা, আদালতপাড়াসহ সব এলাকায়ই পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সক্রিয় রাখা হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। রয়েছে সিসিটিভিও।
এদিকে সিলেটে ব্যাপক কড়াকড়ির কারণে জীবনযাত্রায় কিছুটা বিঘ্ন ঘটলেও পরিস্থিতি মোকাবিলা কার্যক্রমের কারণে স্বস্তি বিরাজ করছে। সিলেটে সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে ওলিকুল শিরোমনি হজরত শাহজালাল (রহ.) দরগাহে। এর কারণ, ২০০৫ সালে এই মাজারেই ওরসে একদফা ও পরবর্তীতে বৃটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর জঙ্গি হামলা হয়েছিল। এ কারণে এবার ঈদের দিন থেকে দরগাহে হজরত শাহজালাল (র.) মসজিদ ও মাজারে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। গোটা দরগাহ এলাকাই সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে।
দরগাহে ঢুকার প্রধান রাস্তা তিনটি। এর মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে মূল ফটক। এই ফটকে সার্বক্ষণিক পুলিশ পাহারায় রয়েছে। মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে ভেতরে আগত ভক্ত ও মুসল্লিদের তল্লাশি করা হচ্ছে। একইভাবে আলীয়া মাদরাসা অংশে ও ঝরনাপাড় অংশেও তল্লাশি করা হয়। শুক্রবার জুমার দিনে মুসল্লিদের ঢল নামে দরগাহে। কিন্তু ওই দিন দরগাহ কর্তৃপক্ষের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় তল্লাশির আয়োজন করা হয়। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তল্লাশি করেন। ভারি ব্যাগ নিয়ে যারাই ঢুকছেন তারাই পড়ছেন তল্লাশির মুখে। সন্দেহভাজন দেখলেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ পর্যন্ত করা হচ্ছে।
শুক্রবার জুমার দিনে দরগাহ মসজিদের দোতলায় মুসল্লি পূর্ণ হওয়ার পর পরই দুটি ফটকের কলাপসেবল ফটক লাগিয়ে দেয়া হয়। পাশাপাশি দুটি ফটকেই দুইজন স্বেচ্ছাসেবক মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশি চালান। একই ভাবে ৫ম তলা পর্যন্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। মসজিদ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, দরগাহে আসা মুসল্লিদের এবাদতে যাতে কোনো প্রকার বিঘ্ন না ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি যাতে কেউ অঘটন ঘটাতে না পারে সে কারণে কড়াকড়ি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। দরগাহে তল্লাশি ছাড়া প্রবেশ করতে পারছেন না ভক্তরা। বিশেষ বিশেষ সময় মূল গোরস্থানের ওপরের ফটক তালা লাগিয়ে দেয়া হয়। যাতে করে গোরস্থান অংশ দিয়ে কেউ প্রবেশ করতে না পারে।
দরগাহ এলাকায় রয়েছে পুলিশের একটি ফাঁড়ি। ওই ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যরা ছাড়াও মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইন থেকে আরো অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয় এলাকায়। পুলিশ জানিয়েছেন, দিনে রাতে ২৪ ঘণ্টায়ই পুলিশ মোতায়েন থাকছে দরগাহে। পাশাপাশি সাদা পোশাকে পুলিশ ও র্যাবের সদস্যরা নজরদারি করছে। গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের পক্ষ থেকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে পুরো দরগাহ এলাকা। সিলেট মহানগর পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তারা প্রতিদিন একবার দরগাহ এলাকায় গিয়ে পরিদর্শন করে আসেন। অপরদিকে, সিলেটের আদালতপাড়ার সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। আদালত চত্বরে প্রবেশের প্রধান দুইটি ফটক ছাড়া বাকি সব ফটক বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আদালতের এজলাসে ওঠার আগে সংশ্লিষ্টদের তল্লাশি করা হচ্ছে। একাজে ব্যবহার করা হচ্ছে মেটাল ডিটেক্টর।
সম্প্রতি রাজধানীর গুলশান ট্র্যাজেডি এবং শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পর দেশের সব আদালতের নিরাপত্তা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হয়। এর অংশ হিসেবে গতকাল থেকে সিলেটের আদালত পাড়ায় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি মিডিয়া মো. রহমত উল্লাহ জানিয়েছেন, মাজারের পাশাপাশি আদালত পাড়ায় আগের চেয়ে পুলিশের সংখ্যা এবং তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। সাদা এবং পোশাকধারী পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। কাউকে সন্দেহভাজন মনে হলে তল্লাশি করা হচ্ছে।
সিলেট জেলা জজ কোর্টের এডিশনাল পিপি শামসুল ইসলাম জানিয়েছেন, আদালত চত্বরে প্রবেশের দুটি প্রধান ফটক ছাড়া বাকি সব প্রবেশপথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। প্রতিটি এজলাসের সিঁড়িতে সন্দেহভাজনদের মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশি করা হচ্ছে। তিনি আরো জানান, গোটা আদালতপাড়ায় পুলিশি নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। আদালত পাড়ার সকল ভাসমান ও টং দোকান তুলে দেয়া হয়েছে। আদালত পাড়ায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন, নিরাপত্তা দেয়াল উঁচুকরাসহ নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়গুলো নিয়ে আগামী আইনশৃখলা কমিটির বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে বলে জানান তিনি। এ দুটি স্থাপনা ছাড়াও সিলেটের প্রশাসনিক কার্যালয়গুলোতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। (মানবজমিন)