বিশ্বনাথে কুঠির শিল্পের গ্রাম রাজাপুর
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:১১:৫৩,অপরাহ্ন ৩০ জুন ২০১৬
বিশ্বনাথ সংবাদদাতা: কেউ কাটছে বাঁশ। কেউবা তুলছে ফালি। পরিবারের অন্যরা দল বেঁধে বসে তৈরী করছেন কুঠির শিল্প সামগ্রী। গ্রামের উঠোনে উঠোনে যেন চলছে বাঁশ-বেতে গৃহস্থালী পণ্য তৈরীর উৎসব।
সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার লামাকাজি ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের চিত্র এটি। বাঁশ ও বেত দিয়ে কুঠির শিল্প সামগ্রী তৈরী করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন এখানকার মানুষ। বংশ পরম্পরায় এ পেশায় জড়িয়ে আছেন তারা। জিইয়ে রেখেছেন প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বাঁশ ও বেত শিল্প। সারাদিন উৎসবের আমেজে নারী-পুরুষ তাদের নিঁপুণ হাতে তৈরী করেন কুলা, চাটাই, হাঁস-মুরগীর খাঁচা, চালনি, ঢাকনা, টুকরি, চাঙ্গা, মাছধরা ও মাছ রাখার নানা সামগ্রী।
সরেজমিন রাজাপুরে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠোনে উঠোনে চলছে কুঠির শিল্পের কাজ। বসে নেই নারী, পুরুষ, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, এমনকি শিশুরাও। সবাই নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। স্কুলপড়–য়া শিশুরাও লেখাপড়ার পাশাপাশি এ কাজে ব্যস্ত সময় কাটায়। সপ্তাহ শেষে পাইকারী বিক্রেতারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে এসব সামগ্রী কিনে নেয়। স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে সিলেটের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করা হয় রাজাপুরের কুঠির শিল্প সামগ্রী।
গ্রামের মুরব্বী ছবর উল্লাহ (৬৫) জানান, ছোটবেলা পিতার কাছ থেকেই এ কাজে হাতেখড়ি। এক সময় এটিই ছিল আমাদের জীবিকা নির্বাহের অন্যতম মাধ্যম। আমাদের পূর্ব পুুরুষরাও এ পেশায় জড়িত ছিলেন। তখন এটি লাভজনক ছিল। বর্তমানে প্লাস্টিক সামগ্রীর কারণে আগের মতো কুঠির শিল্পের বাজার নেই। তাছাড়া বাঁশ ও বেতের দামও দ্বিগুন বেড়েছে। সিলেটের কানাইঘাট ও জৈন্তিয়া থেকে আমরা বাঁশ সংগ্রহ করি। এ শিল্পে খরচের বিপরীতে জিনিসের মূল্য সেভাবে পাওয়া যায় না। জীবিকার তাগিদে অন্যকাজও করতে হয় আমাদের। কেবল পারিবারিক পেশা হিসেবে কুঠির শিল্পকে আকড়ে ধরে আছি। তবে, সরকারি সহায়তা পেলে প্রয়োজনীয় এ শিল্পের প্রসার ঘটানো অসম্ভব কিছু নয়।