দুই বছরেও পূর্ণাঙ্গ হলো না সিলেট যুবদলের কমিটি
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫:২০ অপরাহ্ণ
১৯ বছরের অচলাবস্থা কাটিয়ে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে সিলেট জেলা ও নগর যুবদলের সম্মেলন করা হয়েছিল। এই সম্মেলনের মাধ্যমে সরাসরি ভোটে জেলা ও নগরের দুই সভাপতি ও দুই সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। দলীয় নির্দেশ ছিল; সম্মেলনের ১৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার। কিন্তু দুই বছরেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারেনি যুবদল। এক্ষেত্রে সিলেটের নেতাদের দাবি হচ্ছে- কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে তারা দু’দফা কেন্দ্রের কাছে পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু কোনো কমিটিই অনুমোদন হয়নি। সর্বশেষ তারা গত তিন মাস আগে প্রস্তাব আকারে একটি কমিটির তালিকা কেন্দ্রের কাছে পাঠিয়েছেন। এক সময় সিলেট যুবদল ছিল বিএনপি’র শক্তিশালী ইউনিট। অতীতে যুবদল কর্মীদের নানা ঘটনায় বিতর্কিত হলেও রাজপথে লড়াইয়ে যুবদল অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। কেবলমাত্র বিতর্কের দোহাই দিয়ে ১৯ বছর সিলেটে যুবদলের কোনো কমিটি গঠন করা হয়নি। এ কারণে অপেক্ষায় থেকে থেকে অনেক নেতা দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। কেউ কেউ ঢুকেছিলেন মূল দল বিএনপিতে। এই অচলাবস্থার মধ্যে পড়া যুবদলকে সিলেটে পুনর্গঠন করা হয় ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে সিলেটে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে ওই বছর আংশিক কমিটি গঠন করা হয়। এর মধ্যে জেলা সম্মেলন ও কাউন্সিলে সভাপতি হন এডভোকেট মুমিনুল ইসলাম মুমিন ও সাধারণ সম্পাদক হন মকসুদ আহমদ। আর মহানগর সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন শাহনেওয়াজ বক্ত তারেক ও সাধারণ সম্পাদক হন মীর্জা সম্রাট হোসেন।
ধারণা করা হয়েছিল; কাউন্সিলের ভোটের মাধ্যমে কমিটি গঠনের পর পরাজিত প্রার্থীরা নানাভাবে তাদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে পারেন। কিন্তু ঘটনা ঘটেছিল ঠিক তার উল্টো। কাউন্সিলের পর সিলেট যুবদলের বিজয়ী ও পরাজিতরা একই কাতারে এসে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। যুবদলের নেতারা জানিয়েছেন, কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি গঠনের এক বছরের মাথায় তারা একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা কেন্দ্রের কাছে জমা দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে সেই তালিকা ফেরত নিয়ে আসা হয়েছিল। প্রায় তিন মাস আগে আরও একটি তালিকা ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা ঢাকায় পাঠানোর পর প্রথম দু’মাস ছিল অস্থির সময়। এখন তালিকা নিয়ে আলোচনা শুরু হলেও কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ায় এ নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা হতে পারে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে কেন্দ্র। সিলেট জেলা যুবদলের সভাপতি এডভোকেট মুমিনুল ইসলাম মুমিন ও সাধারণ সম্পাদক মকসুদ আহমদ জানিয়েছেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে আমরা দু’দফা প্রস্তাব পাঠিয়েছি। শেষ বারের প্রস্তাবটি এখনো কেন্দ্রের কাছে জমা আছে। এখন কেন্দ্র কী করবে এখতিয়ার কেন্দ্রের। তারা বলেন- কমিটি পূর্ণাঙ্গ হলে নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত থাকেন। সিলেটে যুবদলও আরও শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারতো। নগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মীর্জা সম্রাট হোসেন জানিয়েছেন- আমরা ২৫১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি জমা দিয়েছি। কয়েকদিন আগে যুবদল সভাপতি সিলেটে যখন এসেছিলেন তখনো আমরা কমিটির ব্যাপারে কথা বলেছি। নানা ব্যস্ততার কারণে কমিটি দেয়া হচ্ছে না বলে কেন্দ্রের তরফ থেকে জানানো হচ্ছে। এদিকে বিগত আন্দোলন সংগ্রামেও যুবদলের কমিটির নেতারা সক্রিয় থাকলেও ঐক্যবদ্ধ ভাবে চোখে পড়ার মতো কিছুই করতে পারেননি। তবে ব্যক্তি বা গ্রুপ উদ্যোগে রাজপথে অনেককেই সক্রিয় ভূমিকা রাখতে দেখা গেছে। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন বলতে যা বুঝায় সেটি করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন যুবদলের নেতাকর্মীরা। তবে ৫ই অক্টোবরের প্রেক্ষাপটের পর সিলেট জেলা ও নগর যুবদলের নেতাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কর্মসূচি পালন করতে দেখা গেছে। কমিটি পূর্ণাঙ্গ না হওয়ার কারণে তৃণমূলে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তৃণমূলের নেতারা দুই বছর ধরে অপেক্ষায় ছিলেন। কাউন্সিলে জেলার সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন লিটন আহমদ। তিনি জানিয়েছেন, ১৫ দিনের মধ্যে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার কথা থাকলেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা সম্ভব হয়নি। একটি কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হলে আরেকটি কমিটি হবে- এটাই সংগঠনের নিয়ম। আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় থাকা সিলেট জেলা যুবদলের নেতাকর্মীরা নতুন কমিটি প্রত্যাশা করে। এজন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা। বিগত কাউন্সিলে প্রার্থী হওয়া যুবদল নেতারা জানিয়েছেন, দুই বছরেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ রূপে গঠন না হওয়ায় নেতাকর্মীরা হতাশ। তারা জানিয়েছেন, দলকে সংগঠিত করার এখনই সময়। ফলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটি সিদ্ধান্ত নিলে সিলেটে সংগঠনের জন্য ভালো হবে। দল সুসংঠিত হলে সাংগঠনিকভাবে এগিয়ে থাকবে বলে জানান তারা। মহানগর যুবদলের সভাপতি পদে প্রার্থী ছিলেন তোফাজ্জল হোসেন বেলাল। তিনি জানিয়েছেন, দুই বছর হলো কমিটি নেই। এর জবাব কে দেবে? এ নিয়ে আমরা চরম হতাশ। দলীয় ফোরামে আমরা কথা বলতে বলতে হয়রান। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে বার বার বলছি। তারা তেমন ভূমিকা রাখছেন না। এতে করে দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ বলে জানান তিনি।