সিলেটের স্কুল ও কলেজে কমেছে শিক্ষার্থী উপস্থিতি
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩:১৫ অপরাহ্ণ
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সিলেটের স্কুল-কলেজগুলোতে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি অনেকটাই কমে গেছে। যেখানে ছাত্র আন্দোলনের আগে স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থী উপস্থিতির গড় হার ছিল ৮০ শতাংশ, সেখানে এখন ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশ। এ জন্য দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতাকে দায়ী করেছেন শিক্ষকরা। আবার কেউ কেউ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষকদের চাপ দিয়ে পদত্যাগ ও সামগ্রিক পরিস্থিতিকে দায়ী করেছেন। এসব কারণে সন্তানরা নিরাপদ নয় ভেবে অনেক অভিভাবকও সন্তানদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠাচ্ছেন না।
গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পর থেকেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট, আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। সিলেট নগরীর আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত অর্ধশতাধিক মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আওয়ামী লীগের প্রায় ২৫ হাজারের মতো নেতাকর্মী আসামি। এ ছাড়া মামলার আসামি হিসেবে ১৪ দলীয় জোটের নেতারাও রয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে বাড়িঘর ছেড়ে পরিবার নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা চলে যান আত্মগোপনে। এমনকি পুলিশ বাহিনীর সদস্যরাও থানা, ফাঁড়ি ও কোয়ার্টার ছেড়ে আত্মরক্ষার্থে রয়েছেন নিরাপদ আশ্রয়ে। এ ছাড়া আন্দোলন চলাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে দেখা দেয় অস্থিরতা। এসব কারণে স্কুল-কলেজ খুললেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি অনেকটা কমে যায়। যেখানে স্বাভাবিক সময়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ছিল ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ, সেখানে এখন ৫০ শতাংশের নিচে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরও সবকিছু স্বাভাবিক না হওয়ায় উপস্থিতি বাড়ছে না বলে মনে করছেন অনেকেই।
এ ব্যাপারে সিলেট সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হেপী বেগম সমকালকে বলেন, কয়েকদিন আগেও শিক্ষার্থী উপস্থিতি অনেক কম ছিল। বর্তমানে বাড়লেও তা আশানুরূপ নয়।
এ জন্য দেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে দায়ী করে তিনি বলেন, বিদ্যালয়ে কখনও শতভাগ উপস্থিতি হয় না। সব সময়ই তাদের গড় উপস্থিতি ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ। কিন্তু ৫ আগস্টের পর থেকে বিদ্যালয়ে উপস্থিতি অনেকটা কমে গেছে। ছোট ক্লাসগুলোতে উপস্থিতি অনেকটা ভালো। তবে বড় ক্লাসগুলোতে উপস্থিতি অনেক কম। সব মিলিয়ে উপস্থিতির হার ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশের মধ্যে।
মঙ্গলবার সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়েও এমন চিত্র চোখে পড়ে। অনেক শ্রেণিতে উপস্থিতি একেবারেই সন্তোষজনক নয়। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কবির খান বলেন, ৫ আগস্টের আগে থেকেই রাজনৈতিক কারণে উপস্থিতি অনেকটা কম। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরও শিক্ষার্থীরা আসছে না। এখন যে পরিস্থিতি, ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশ উপস্থিতি নিয়ে ক্লাস করাতে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, দেশের পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হলেও অনেক অভিভাবক বিদ্যালয়ে তাদের সন্তানদের দিতে নিরাপদ মনে করছেন না। এখনও পুলিশ সদস্যরা তাদের মনোবল ফিরে পাননি এবং অনেক শিক্ষার্থীর অভিভাবক কোনো একটি দলের রাজনৈতিক কর্মী। আত্মগোপেনে থাকায় সন্তানকে নিয়ে বিদ্যালয়ে আসতে পারছেন না, এমনটি হতে পারে। এ ছাড়া বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্থিরতার কারণেও উপস্থিতি কমতে পারে।
সিলেট সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মইনুল ইসলাম বলেন, আগে উপস্থিতি কম ছিল। সেটি বাড়ছে মন্থর গতিতে। এখন যে পরিস্থিতি, তাতে অভিভাবকরা সন্তুষ্ট না হলে সবখানেই উপস্থিতি কম থাকবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের এক স্থানীয় নেতা মোবাইল ফোনে বলেন, বড় বড় নেতার ভুলের মাশুল আমার মতো সাধারণ নেতাদের দিতে হচ্ছে। তিনি জানান, তার দুই সন্তান পাইলট স্কুলের ষষ্ঠ ও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। প্রতিদিন সন্তানদের স্কুলে নিয়ে যেতেন। কিছুদিন ধরে সন্তানদের স্কুলে নিয়ে যেতে পারছেন না।