আকস্মিক বন্যা: নিষ্পাপ শিশুর হৃদয়স্পর্শী চাহনি কাঁদিয়েছে বাংলাদেশকে
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ আগস্ট ২০২৪, ৩:০৪ অপরাহ্ণ
সপ্তাহ ধরে চলছে টানা বর্ষণ। একইসাথে ৩১ বছর পর ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ডুম্বুর জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বাঁধ খুলে দেয়া হয়েছে। উজানের পানি ত্রিপুরার বিভিন্ন জনপদ ভাসিয়ে হু হু করে ঢুকছে বাংলাদেশে। আকস্মিক এই বন্যায় ৬ জেলায় দুই লাখের বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ছাড়িয়েছে প্রায় ২০ লাখ।
দেশে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। একইসাথে, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীগুলোর পানির সমতলে ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বন্যা আক্রান্ত ৬টি জেলা, কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী এবং মৌলভীবাজার। একইসাথে, ৪৩ উপজেলা বন্যা প্লাবিত হয়েছে। ৬ জেলায় ২ লাখের বেশি পরিবার পানিবন্দি এবং ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা প্রায় ২০ লাখ। বন্যার পানিতে ডুবে ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলায় একজনের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গেছে। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। এ অবস্থায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন।
এরমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে বন্যা কবলিত একটি শিশুর ছবি।
ওই ছবিতে দেখা যাচ্ছে চারদিকে উন্মত্ত জলরাশি, তার মাঝে আটকে আছে একটি শিশু। বড় বড় দুটি চোখে অবাক বিস্ময়! মধ্যরাতে ছড়িয়ে পড়া নিষ্পাপ শিশুটির ছবি ঘুম কেড়ে নিয়েছে সাধারন মানুষ থেকে শোবিজ অঙ্গনের তারকাদেরও। সামাজিক মাধ্যমে নিজেদের কষ্টের অনুভূতি শেয়ার করেছেন তারকা থেকে সকল শ্রেণীর মানুষ ।
এই নিষ্পাপ শিশুর হৃদয়স্পর্শী চাহনি বুঝিয়েছে, আকষ্মিক বন্যার কাছে কতটা অসহায় হয়ে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ। তার এই চাহনি রাতভর কাঁদিয়েছে বাংলাদেশকে ।
ছবিটি নিজের ফেসবুকে প্রকাশ করে পরীমণি লিখেছেন, ‘আল্লাহ! কী করবো আমি! বুকের ভেতর দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে।
এই চোখের দিকে তাকিয়ে কি করে ঘুমাব!’ বন্যা কবলিতদের পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছা প্রকাশ করে নায়িকা লিখেছেন, ‘আল্লাহ তুমি সহায় হও। কেউ নাই আর এখন। আমি যাব। আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে যা করার করবো ইনশাআল্লাহ।’
অবুঝ ওই শিশুর ছবি প্রকাশ করে পূজা চেরী সরাসরি স্রষ্টার উদ্দেশে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘এই অবুঝ চাহনি। হে ঈশ্বর তুমি কি দেখছ না?’
উল্লেখ্য, পানিবন্দি বা ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য ৬ জেলাতে মোট ১ হাজার ৩৫৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আশ্রয়-কেন্দ্রগুলোতে এখন পযন্ত প্রায় মোট ১৮ হাজার জন মানুষ এবং প্রায় ৪ হাজার টি গবাদি পশুকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। ৬ জেলার ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য মোট ৩০৯টি মেডিকেল টিম কাজ করছে।
বন্যায় পানিতে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে নগদ অর্থ, শুকনা ও অন্যান্য খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া দেশের সব জেলায় পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী মজুত রয়েছে বলেও নিশ্চিত করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
গণমা্ধ্যমের সংবাদে বলা হয়েছে, বন্যা আক্রান্ত জেলাগুলোর জেলা প্রশাসককে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, সেনাবাহিনী, মেডিকেল টিম, অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবকসহ সাধারণ মানুষের সাথে সমন্বয় করে একসঙ্গে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে সার্বক্ষণিক কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। তথ্য ও সহযোগিতার জন্য ০২৫৫১০১১১৫ নম্বর চালু রয়েছে। ফেনী জেলায় বন্যা উপদ্রুত এলাকায় সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনী উদ্ধার কাজে নিয়োজিত রয়েছে। সেনাবাহিনী থেকে ১৬০ জন সদস্য ৪০টি উদ্ধারকারী যান ফেনী জেলায় প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়া ১টি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে। নৌবাহিনীর ৭১ জন সদস্য ও ৮টি উদ্ধারকারী যান কাজ করছে। এছাড়া বিজিবিসহ আরও নৌযান আনানো হচ্ছে।
আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ জানিয়েছেন, ‘ইউরোপিয়ান আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল অনুসারে বৃহস্পতিবার রাত ১২টার মধ্যে চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মৌলভীবাজার, কুমিল্লা ও ফেনী জেলায় ২০০ থেকে ২৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।’
এদিকে, বাংলাদেশের পূর্ব সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ভারত কোনো বাঁধের মুখ খুলে দেয়নি বলে দাবি করেছে করেছে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাদের দাবি, অতিরিক্ত পানির চাপে ত্রিপুরায় গোমতী নদীর ‘ডুম্বুর’ বাঁধটি একা একাই খুলে গেছে।