ইলিয়াস অন্তর্ধান রহস্য: সিলেটে অন্তহীন অপেক্ষা, ‘আয়নাঘরে’ সবার চোখ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ আগস্ট ২০২৪, ৭:৫৬ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজঃ
ইলিয়াস আলীর জন্য অন্তহীন অপেক্ষার শেষ নেই। এখনও ইলিয়াস আলীকে খুঁজে ফিরছেন নেতাকর্মীরা। আশায় আশায় পথ চেয়ে আছেন। দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বিএনপির প্রভাবশালী নেতা ও সিলেট ২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এম ইলিয়াস আলী নিখোঁজ রয়েছেন। হাসিনার পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর পরই আয়নাঘর থেকে ফিরছেন অনেক গুম হওয়া মানুষ।
তাই আশায় বুক বাধছেন পরিবার-নেতাকর্মীসহ পুরো সিলেটবাসী। ফেইসবুক জুড়ে ইলিয়সের সন্ধান কামনাসহ মুক্তি মিলেছে বলে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
এ ব্যাপারে সিলেট বিভাগীয় বিএনপি’র সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নিখোঁজ এম ইলিয়াস আলীকে দীর্ঘ ১২ বছর ধরে বিভিন্ন স্থানে খুঁজে বেড়াচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তার পুত্র ব্যারিস্টার আবরার ইলিয়াস। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইলিয়াস আলী ফিরে আসার খবরকে ‘গুজব’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। বুধবার দেয়া এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এসব তথ্য জানান। ব্যারিস্টার আবরার ইলিয়াস বলেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের তিন আমলে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অসংখ্য নেতাকর্মী গুম হয়েছেন। সোমবার ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গুম হওয়া কয়েকজনকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। যারা দীর্ঘদিন ধরে সরকারের বন্দিশালা ‘আয়নাঘরে’ বন্দি ছিলেন। এ ঘটনার পর আমরাও আশাবাদী হয়েছি- আমার বাবাকে ফিরে পাবো। আমরা এখনো আমার বাবাকে বিভিন্ন জায়গায় খুঁজে বেড়াচ্ছি।
ইলিয়াস আলীর খোঁজে পরিবার
আয়না ঘরে সবার চোখ। একেক জন বেরিয়ে যখন আসছিলেন গুম হওয়া নেতারা তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আর্তনাদ করছিলেন স্ত্রী তাহসিনা রুশদী’র লুনাসহ পরিবারের সদস্যরা। অপেক্ষার পর অপেক্ষা।
কখন ফিরবেন ইলিয়াস আলী। এই অপেক্ষা এখনো চলছে। মাঝে মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসছে সুখবর। কিন্তু সত্যতা মিলছে না। তবে; আশা ছাড়েননি নেতাকর্মীরা। খোঁজ চলছে ইলিয়াস আলীর। তাদের আশা- সবাই যখন ফিরছেন ইলিয়াসও ফিরবেন। পরিবারের সদস্যরাও আশাবাদী। সুখবর পাওয়ার জন্য মুখিয়ে আছেন। ২০১২ সালের ১৭ই এপ্রিল ঢাকার বনানী থেকে গুম হন ইলিয়াস আলী। তখন তিনি ছিলেন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক। তার নেতৃত্বে সিলেটে টিপাইমুখ বাঁধ বিরোধী মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ইলিয়াস আলী তার গাড়ির ড্রাইভার আনসার আলীসহ গুম হন। ইলিয়াস আলীর পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার ভোররাত থেকেই হাসিনার আয়না ঘরে থাকা গুম হওয়া অনেক নেতাকর্মী বাইরে আসতে থাকেন। দিনেও আসেন কয়েকজন। এ সময় স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনাসহ পরিবারের সদস্যরা আয়না ঘরের দিকে নজর রাখছিলেন। সিলেটের নেতাকর্মীও একইভাবে খোঁজখবর নিচ্ছিলেন। এরই মধ্যে মাঝে মধ্যে খবর আসতে থাকে ইলিয়াস আলীর খোঁজ পাওয়া গেছে। তিনি আয়না ঘরেই বন্দি রয়েছেন। কিন্তু পরিবারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কিছুই জানানো হয়নি। বরং ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আইডিতে লিখেন- ‘আয়না ঘরের অনেকে ফেরত আসছে। আমার স্বামীকে ফিরিয়ে দিন। আমরা তাকে সুস্থ অবস্থায় ফেরত দেয়ার দাবি করছি।’ মঙ্গলবার বিকালে সিলেট বিএনপি’র তরফ থেকে যে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছিল সেই সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপি’র সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী জানিয়েছেন, ‘রাজনৈতিক রোষানলে পড়ে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এম. ইলিয়াস আলীসহ যেসকল নেতাকর্মী গুম হয়েছেন তাদের ফিরিয়ে দেয়ার জোর দাবি করছি। গতকাল ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা ও লন্ডনে থাকা ভাই আসকির আলীর পক্ষ থেকে রাষ্ট্রের সকল দায়িত্বশীলদের প্রতি আবেদন জানিয়ে বলা হয়- ‘দয়া করে আল্লাহর ওয়াস্তে সাবেক সংসদ সদস্য বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীকে সুস্থ অক্ষত অবস্থায় আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দেন, ফিরিয়ে দেয়ার দ্রুত ব্যবস্থা করুন। এ ব্যাপারে আপনাদের আন্তরিক সহযোগিতা আমাদের একান্তই কাম্য। আমরা তার অক্ষত অবস্থায় ফিরে আসার জন্য অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষায় আছি।
উল্লেখ্য, আয়নাঘর থেকে উদ্ধার হওয়া সেনাবাহিনীর সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমী ২০১৬ সালে গুমের স্বীকার হন । আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে , এবং মীর আহমাদ বিন কাসেমকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে অবশ্য তাকে আটকের কথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অস্বীকার করে।
২০২২ সালে জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চেভেলে ‘আয়নাঘর’ নামে এক গোপন বন্দিশালা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।