অজানা শঙ্কায় সিলেটের টিপু
প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ জুলাই ২০২৪, ১১:৪৫ পূর্বাহ্ণ
ওয়েছ খছরুঃ
কালেক্টরেট জামে মসজিদ। সবেমাত্র জুমার নামাজ শেষ হয়েছে। সবার সঙ্গে মসজিদ থেকে বের হন সিলেটের সাবেক ছাত্রদল নেতা আব্দুস সালাম টিপু। সাবেক মেয়র ও বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতা আরিফুল হক চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা আবুল কাহের শামীমসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছাকাছি ছিলেন তিনি। এমন সময় মুহুর্মুহু গুলি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই চোখে উড়ে এসে কী যেনো পড়লো। দু’হাত দিয়ে চোখ ঢাকলেন। অঝোরে রক্ত পড়া শুরু হলো। বসে পড়লেন টিপু। অন্যরা তাকে ধরাধরি করে নিরাপদে নিয়ে গেলেন।
এরপর ভর্তি করলেন সিলেটের একটি হাসপাতালে। সিলেটের কোর্ট পয়েন্টে ১৯শে জুলাইয়ের ঘটনা। টিপুসহ আরও কয়েকজন গুলিতে গুরুতর আহত হন। সাংবাদিক এটিএম তুরাব আহত হন। তারও চোখে-মুখে গুলি লেগেছিল। অধিক রক্তক্ষরণে ঘটনার দিন বিকালে মারা যান তুরাব। বিএনপি’র পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, তাদের কয়েকজনের শরীরে গুলি লেগেছে। এর মধ্যে সাবেক ছাত্রদল নেতা টিপু, স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা সেলিমসহ আরও একজন ছিলেন। জেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের আহ্বায়ক আব্দুল আহাদ খান জামাল জানিয়েছেন-ওইদিন যারা গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন তাদের সিলেটের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অনেকের শরীরে স্প্লিন্টার লেগেছিল। সিলেটে তারা চিকিৎসা নেন। কিন্তু তিন জনের চোখে স্প্লিন্টার আঘাত করে। এর মধ্যে বেশি সিরিয়াস ছিল টিপু, সেলিমসহ তিন জনের। সিলেটের ডাক্তাররা তাদের সম্পর্কে ভালো কোনো সুখবর দিতে পারছিলেন না। এ কারণে ঘটনার দিন রাতেই তাদের ঢাকায় পাঠানো হয়।
টিপুর সঙ্গে ঢাকায় থাকা স্বজনরা গতকাল জানিয়েছেন, ঢাকার গ্রিন রোডের একটি হাসপাতালে চোখে গুলিবিদ্ধ তিন জনকে ভর্তি করা হয়। ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাদের তিন জনের চোখেই অস্ত্রোপচার করেন। সেলিম ও অপর জনের চোখে থাকা স্প্লিন্টার বের করা গেলেও টিপুর চোখে থাকা স্প্লিন্টার নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। পাশাপাশি হচ্ছিলো রক্তক্ষরণ। তবে ঢাকার চিকিৎসকরা প্রথম দফা অস্ত্রোপচারের পর টিপুর চোখে থাকা দুটি স্প্লিন্টারের মধ্যে একটি বের করে এনেছেন। অপরটি চোখের গভীরে চলে যায়। দুটি স্প্লিন্টার পড়ার কারণে তার চোখ নিয়ে ঢাকার ডাক্তাররা কোনো সুখবর দিতে পারেননি। চোখের ভেতরে অপর স্প্লিন্টারটি তারা বের করতেও পারেননি। এই অবস্থায় আশাহত হয়ে গত সোমবার ঢাকার ওই হাসপাতাল ছেড়েছেন টিপু। এখন তিনি ঢাকার এক আত্মীয়ের বাসায় অবস্থান করছেন। স্বজনরা জানিয়েছেন- টিপুর চোখের অবস্থা ভালো না। হয়তো চিরতরে সে চোখটি হারাতে পারে। এমন অজানা আশঙ্কায় টিপু নিজেও চিন্তিত। চোখের ভেতরে থাকা অপর স্প্লিন্টারটি বের করতে তাকে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। ডাক্তাররা বলেছেন, দ্রুত চোখের ভেতরে স্প্লিন্টার বের করতে হবে। কিন্তু এই মুহূর্তে ভিসা পাওয়া নিয়ে জটিলতা রয়েছে। সব মিলিয়ে টিপুকে নিয়ে শঙ্কায় স্বজনরা। স্বেচ্ছাসেবকদল নেতারা জানান- টিপুর পাশাপাশি সেলিমও শঙ্কায় রয়েছেন। তার চোখ থেকে স্প্লিন্টার বের করা গেলেও ডাক্তাররা সুখবর দিতে পারছেন না। বলছেন; ১৫ দিন পর ফের চোখে আরেকটি অস্ত্রোপচার করা হবে।
এরপর বলা যাবে চোখ টিকবে কিনা। এই অবস্থায় সেলিম ঢাকা থেকে সিলেটে ফিরেছেন। গ্রেপ্তার এড়াতে তাকে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবকদলের নেতারা। এ ছাড়া; যারা ওই দিন গুলিতে আহত হয়েছিলেন তারাও অসুস্থ শরীর নিয়ে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
সিলেট জেলা বিএনপি’র সভাপতি আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরী জানিয়েছেন- ওই দিন পুলিশের গুলিতে সিলেট বিএনপি’র বহু নেতা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। বেসরকারি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হলেও অনেকের সুচিকিৎসা প্রয়োজন। কিন্তু পুলিশের অভিযানের কারণে তাদের চিকিৎসা সেবাও ব্যাহত হচ্ছে। আর টিপু সহ যে তিন জন ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তাদের নিয়ে শঙ্কা কাটছে না। টিপুর অবস্থা গুরুতর। তার চোখ টিকিয়ে রাখতে হলে দ্রুত উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর চেষ্টা চলছে। যারা আহত হয়েছেন তাদের পাশে সিলেট বিএনপি পরিবার রয়েছে বলে জানান তিনি। কাইয়ূম বলেন, ১৯শে জুলাই সিলেট বিএনপি’র তরফ থেকে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করা হচ্ছিলো। কিন্তু পুলিশ অতি উৎসাহী ওই কর্মসূচিতে গুলি ছুড়েছে। এখন যারা গুলিবিদ্ধ ও আহত হয়েছেন তাদেরকেই ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আসামি করা হয়েছে। অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন তাদের জন্য সিলেট বিএনপি’র পক্ষ থেকে আইনি সহায়তা দেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।