সিলেট নগর রক্ষায় যে প্রকল্পের প্রস্তাব মেয়র আনোয়ারের
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ জুন ২০২৪, ৮:২৯ অপরাহ্ণ
ওয়েছ খছরুঃ
সিলেট নগর অংশে সুরমা নদী খননের ৫০ কোটি টাকার প্রকল্প নিয়ে বিতর্ক চলছে। ক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ। সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্টরাও এ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন। ফলাফল শূন্যই। এ প্রকল্পের কাজের শেষ পর্যায়ে এসে চলতি উজানের ঢলে ডুবলো সিলেট নগর। বলা হচ্ছে- জলেই গেল এ প্রকল্পের টাকা। যদিও প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নগর অংশে সুরমার তলদেশে অতিরিক্ত পলিথিন থাকার কারণে কাজে ধীর গতি হয়েছে। এই অবস্থায় দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। উজানের ঢল থেকে নগর বাঁচাতে নগর অংশের সুরমার তিনি প্রকল্প নিতে আগ্রহী এবং সে প্রকল্প রাষ্ট্রের টাকায় নয়। এটি তিনি টেন্ডারের মাধ্যমে করতে আগ্রহীদের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে চান।
পাশাপাশি ‘সুরমা ড্রাইভ’ নামে বেড়িবাঁধ নির্মাণের একটি প্রকল্পের জন্য তিনি বিদেশে দাতা খুঁজছেন। ইতিমধ্যে কয়েকটি বিদেশি সংস্থার সঙ্গে তিনি আলোচনা চালাচ্ছেন। ক্রমেই সিলেট নগরের দুঃখে পরিণত হয়েছে সুরমা নদী। ২০২২ সালের বন্যায় সিলেট নগরের অর্ধেক এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। পানিবন্দি হয়ে পড়েছিলেন লাখ লাখ মানুষ। এ বন্যা স্থায়ী হয়েছিল ১৫-২০ দিন। ফলে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছিল নগরের মানুষকে। সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি সরজমিন দেখতে সিলেট এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বন্যার পর সিলেট-১ আসনের এমপি ড. একে আব্দুল মোমেন নগর রক্ষায় সুরমা খননের ৫০ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব করলে সেটি পাস হয়। এবং দুই বছর আগে নগর অংশের ১৫ কিলোমিটার এলাকা খনন শুরু করা হয়। বর্তমানে এই প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু সুরমা খননও রক্ষা করতে পারলো না সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকাকে। এবারের পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেল সিলেট নগর। সিলেট সিটি করপোরেশন সূত্র জানিয়েছে, সিলেট নগর রক্ষায় ক্ষমতায় বসার পর থেকে চিন্তাভাবনা শুরু করেন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। প্রায় এক মাস আগে তিনি সিলেট শহর রক্ষায় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে একটি প্রকল্পের প্রস্তাব করেছে। এ প্রকল্পে তিনি সুরমা নদীর নগর অংশের প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকা খনন করতে চান এবং এতে রাষ্ট্রের কোনো টাকা নেয়া হবে না। প্রকল্প গ্রহণের আগে তিনি এ ব্যাপারে সার্ভে করেছেন। এক্সপার্ট টিম দিয়ে সমীক্ষা জরিপও করেছেন। এতে দেখা গেছে- সুরমা নদীর তলদেশে কয়েক ফুট পলি ও ময়লা জমে আছে। এসব ময়লা ও পলি অপসারণ করতে পারলে পানি প্রবাহ ঠিক হয়ে যাবে। এজন্য খনন কাজ শুরু করতে হবে। বর্তমানে লন্ডনে অবস্থান করছেন মেয়র আনোয়ার। লন্ডন যাওয়ার আগে তিনি সুরমা নদী পরিদর্শন করেছেন। সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইফতেখার আহমদ চৌধুরী মানবজমিনকে জানিয়েছেন, সিলেট নগর এলাকার ২০ কিলোমিটার সুরমা নদী সিটি করপোরেশনের নিজস্ব উদ্যোগে খননের জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এটি অনুমোদনের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। অনুমোদিত হয়ে এলে সিলেট সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।
তিনি জানান, এ প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নগরের ছড়া ও খাল উদ্ধারের কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। সিলেট নগরকে বন্যা রাখতে যে কাজগুলো করা দরকার সেগুলো করার পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। এদিকে- সুরমা নদী খনন করলেই সিলেট নগরকে রক্ষা করা যাবে না। এজন্য নদী তীরবর্তী প্রায় ১৮ কিলোমিটার এলাকা বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রয়োজন। এটির নাম হবে সুরমা ড্রাইভ। সুরমার পানি যাতে উপচে নগরে না ঢুকতে পারে সে কারণে এই ড্রাইভ নির্মাণ করার চিন্তাভাবনা রয়েছে। এটি নির্মাণ করতে আপাতত বিদেশি দাতাদের খোঁজা হচ্ছে। মেয়র নিজেই কয়েকটি বিদেশি দাতা সংস্থার সঙ্গে কথা বলেছেন। এ বিষয়টি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন নগর কর্মকর্তারা। তারা জানান, ড্রাইভ নির্মাণ হলে ছড়া ও খালে স্লুইস গেট নির্মাণ করা হবে। নগরের জলাবদ্ধতার পানি সরিয়ে দিতে ব্যবহার করা হবে পাম্পও। এ নিয়ে বিশদ আকারে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে বলে জানান তারা।