সিলেটে দুই প্রশ্নের সমাধান চান মেয়র
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ মে ২০২৪, ৭:১৬ অপরাহ্ণ
সিলেটের ‘বার্নিং ইস্যু’তে জল ঢাললেন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। ধার্য করা হোল্ডিং ট্যাক্স বাতিল ঘোষণার মধ্যদিয়ে স্বস্তি ফেরালেন তিনি। ক্ষোভ প্রশমিত হয়েছে নগরবাসীরও। তবে সিলেটের হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে দুটি প্রশ্নের সুরাহা করতে চান তিনি। এ দুটি প্রশ্ন হোল্ডিং ট্যাক্স বিষয়ে তুলেছিলেন সুশীল সমাজের বাসিন্দারাও। প্রশ্ন দুটি হচ্ছে; নগরে ঠিক কতোটি হোল্ডিং আছে ও কতো টাকা করে কর ধার্য করা যেতে পারে। এই দুই প্রশ্নের উত্তর পেতে তাকে সময় নিতে হচ্ছে কয়েক মাস। তার আগে জুলাই পর্যন্ত বকেয়া হোল্ডিং ট্যাক্স প্রদানের জন্য তিনি নগরবাসীকে আহ্বান জানিয়েছেন। জুলাইয়ের পর তিনি নতুন করে কাজ শুরু করবেন। প্রশ্ন উঠেছিল; নগরের হোল্ডিংয়ের পুরাতন এসেসমেন্ট নিয়ে।
সর্বশেষ গত শুক্রবার সিটি করপোরেশনের সাধারণ সভায় পূর্বের এসেসমেন্ট নিয়ে কাউন্সিলররাও একই প্রশ্ন তুলেন। তারা জানিয়েছেন; পূর্বে যে এসেসমেন্ট করা হয়েছিল, সেখানে কাউন্সিলরদের বাসার এসেসমেন্ট করার সময় তাদেরও মতামত নেয়া হয়নি। আর নগরবাসী তো সেটি জানেনই না। সিটির এসেসমেন্ট বিভাগের কর্মচারী ঘরে বসে কিংবা ধারণার ভিত্তিতে এসেসমেন্ট করেছিলেন। এতে স্বচ্ছতার প্রশ্নও রয়েছে। তারা বলেন- নতুন করে এসেসমেন্ট হলে নগরের পুরাতন ২৭ ওয়ার্ডে আরও হোল্ডিং বাড়বে। কাউন্সিলররা জানান- মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী তাদের এই যুক্তিকে আমলে নিয়ে তার কঠোর অবস্থান থেকে ফিরে এসেছেন। একই সঙ্গে নতুন এসেসমেন্টে নগরের বর্ধিত অংশের ১৫ ওয়ার্ডকেও অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভা শেষে সাংবাদিকদের কাছেও মেয়র স্পষ্টভাবে এ বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। বলেছেন; একসঙ্গে ৪২টি ওয়ার্ডে নতুন করে এসেসমেন্ট করা হবে। সিটি কাউন্সিলরদের মতে; পুরাতন একটি এসেসমেন্ট সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে করা হয়েছে। এবার কোন প্রক্রিয়ায় এসেসমেন্ট করা হবে সেটি নিয়ে এখনো আলোচনা হয়নি। তবে; নতুন এসেসমেন্টে কোনো তৃতীয় প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয়ার পাশাপাশি এতে সুশীল সমাজ ও জনপ্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্তি থাকতে পারে। সেটি নিয়ে পরবর্তীতে আলোচনা করা হবে। শেষ কথা হচ্ছে- মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বিতর্কমুক্ত স্বচ্ছ এসেসমেন্ট চান। যে এসেসমেন্টের উপর ভিত্তি করে নগরের হোল্ডিংয়ের পরিমাণ সঠিকভাবে নির্ণয় করা হবে। পরবর্তীতে এর ধারাবাহিকতায় নগরের হোল্ডিং কার্যক্রম চলবে। কতো টাকা ধার্য হবে নগরের হোল্ডিং ট্যাক্স। এখানে খাত হচ্ছে তিনটি। একটি হচ্ছে সরকারি, আধা- সরকারি, স্বায়ত্তশাষিত প্রতিষ্ঠান। দ্বিতীয়টি হচ্ছে বাণিজ্যিক ভবন ও তৃতীয়টি হচ্ছে বাসা-বাড়ি। বাতিল হওয়া হোল্ডিং ট্যাক্সে সরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ২০১৮ সালের নির্ধারিত হোল্ডিং ট্যাক্স প্রযোজ্য ছিল। আর বাণিজ্যিক ও বাসা-বাড়ির জন্য ছিল গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ২০১১ সালের হোল্ডিং ট্যাক্স। প্রশ্ন উঠেছে; সিলেট সিটি করপোরেশন নগরবাসীর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নতুন হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ করতে পারে কিনা? এ প্রশ্নের উত্তরে জানা গেছে; রাজশাহী সিটি করপোরেশন আলোচনার মাধ্যমে নিজস্ব পদ্ধতিতে হোল্ডিং ট্যাক্স কার্যক্রম শুরু করেছিল। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে তারা ওই হোল্ডিং ট্যাক্সের পরিমাণ বাড়িয়েছে। আর এ সিদ্ধান্ত নগরবাসীও মেনে নিয়েছেন। কিন্তু সিলেটের ভিন্ন প্রেক্ষাপট তৈরি করে দিয়ে গেছেন সাবেক মেয়ররা। তারা হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ের ব্যাপারে বরাবরই ছিলেন উদাসীন। বিগত পরিষদের কাউন্সিলররাও ভোটের রাজনীতির কারণে এই সুবিধা গ্রহণ করেছেন। আর মাঝখানে সীমাহীন দুর্নীতি করেছেন সিটি করপোরেশনের এসেসমেন্ট শাখার কর্মকর্তারা। হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়কে কেন্দ্র করে তারা কোটি কোটি টাকা দুর্নীতি করেছেন। অনেকেই বাড়ি-গাড়ির মালিক বনেছেন। শূন্য থেকে কোটিপতি হয়েছেন। এসব বিষয় মাথায় রেখে বিগত পরিষদের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী হোল্ডিং এসেসমেন্ট ও ট্যাক্স নির্ধারণ করে গিয়েছিলেন। বর্তমান মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীও দুর্নীতির ব্যাপারে জিরো টলারেন্স থাকায় হোল্ডিং ট্যাক্স কার্যকরের পক্ষেই ছিলেন। এখনো আছেন তিনি। তবে সে প্রক্রিয়ায় এবার নগরবাসীকেও সঙ্গে রাখতে চান। শুক্রবার রাতে নগর ভবনের সাধারণ সভায় আগামী ধার্য করা হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কয়েকজন জ্যৈষ্ট কাউন্সিলর। তারা জানিয়েছেন; নগরবাসীর মধ্যে সিটি কর প্রদানের অভ্যাস গড়ে তোলাটা খুবই জরুরি। এজন্য নগরবাসীকে উৎসাহিত করতে হবে। নগরবাসী যাতে হোল্ডিং ট্যাক্স দিতে কষ্ট না পান সে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। তারা জানান- প্রাথমিক আলোচনায় রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশন প্রায় সমবয়সী করপোরেশন। এ কারণে রাজশাহীতে চলমান হোল্ডিং ট্যাক্স সিলেটে কার্যকর করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এ নিয়ে আরও আলোচনা করা হবে। তবে; মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী রাতের প্রেস ব্রিফিংয়ে আরও একধাপ এগিয়ে বলেছেন; সব সিটি করপোরেশন থেকে যাতে কম ট্যাক্স হয় সেটি তারা পরবর্তীতে নগরবাসীর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন। আপাতত সিলেট সিটি করপোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। নগরবাসীর মতামত ছাড়া কোনো কিছুই করা হবে না বলে শেষ মন্তব্য করেন তিনি।
সিলেট মহানগর নাগরিক সমন্বয় পরিষদের অভিনন্দন: দুর্নীতি মুক্তকরণ বাংলাদেশ ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি সিনিয়র আইনজীবী নাসির উদ্দিন, সিনিয়র সহ-সভাপতি ইকবাল হোসেন চৌধুরী, সিলেট মহানগর নাগরিক সমন্বয় পরিষদের প্রধান সমন্বয়কারী ও দুর্নীতি মুক্তকরণ বাংলাদেশ ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মকসুদ হোসেন, নাগরিক সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক নেছারুল হক (বুস্তান স্যার), যুগ্ম আহ্বায়ক ও সিলেট বিভাগ গণদাবি ফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি চৌধুরী আতাউর রহমান আজাদ এডভোকেট, যুগ্ম আহ্বায়ক বদরুল ইসলাম চৌধুরী এডভোকেট, সদস্য সচিব ও সিলেট কল্যাণ সংস্থার সভাপতি মো. এহছানুল হক তাহের তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর প্রতি সংগ্রামী অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন- দুর্নীতি মুক্তকরণ বাংলাদেশ ফোরামের পক্ষ থেকে হোল্ডিং ট্যাক্সের বিষয়ে স্মারকলিপি পেশ, সিলেট মহানগর নাগরিক সমন্বয় পরিষদ, সিলেট মহানগর নাগরিকবৃন্দ সহ বিভিন্ন ব্যানারে সংগঠনগুলোর প্রতিবাদকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে মেয়র ও সিটি কাউন্সিল পর্ষদ এবং সংশ্লিষ্টদের এই সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী।