সিলেটে আনোয়ার নাসিরের বিভক্তির উত্তাপ নির্বাচনেও
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ মে ২০২৪, ৭:৫৪ অপরাহ্ণ
সাম্প্রতিক পাল্টাপাল্টি ঘটনায় মুখোমুখি সিলেটের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন খান। এরই মধ্যে একে অপরকে কটাক্ষ থেকে প্রকাশ্যে বক্তব্য দিয়েছেন। এ নিয়ে তোলপাড় চলছে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে। জল্পনা চলছে সিলেটের রাজনীতিতেও। কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় এ দ্বন্দ্বের পরিণতি এটি এখন দেখার বিষয়। এ নিয়ে সিলেট আওয়ামী লীগও দু’ভাগে বিভক্ত। কেউ আনোয়ারের পক্ষে আবার কেউ নাসিরের পক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন। এই দ্বন্দ্ব নতুন নয়। নাদেল-নাসির দ্বন্দ্বের সূত্র ধরে নতুন করে সিলেটের এ দু’নেতার দ্বন্দ্ব মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এই অবস্থায় আনোয়ারুজ্জামান ও নাসির দ্বন্দ্বের রেশ এসে পড়েছে চলমান উপজেলা নির্বাচনে।
দ্বিতীয় দফা নির্বাচন শেষে বিষয়টি আরও স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হয়েছে। উপজেলা নির্বাচনে এ দু’নেতার সমর্থিতরা অনেক স্থানে মুখোমুখি অবস্থায় রয়েছেন। আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন অনেকে। প্রশাসনও বিব্রতকর অবস্থার মুখোমুখি হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ হওয়ার কারণে তাদের নিরপেক্ষ ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন ভোটাররাও। মঙ্গলবার শেষ হয়েছে সিলেটের সীমান্তবর্তী তিন উপজেলার নির্বাচন। নির্বাচনের পর থেকে উত্তপ্ত কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা।
গতকাল এ উপজেলায় পাল্টাপাল্টি মহড়া হয়েছে। বিকাল পর্যন্ত এ উপজেলায় স্বস্তি ফিরেনি। উপজেলা নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থী হয়েছেন নাসির উদ্দিন খানের ঘনিষ্ঠজন মজির উদ্দিন। আর পরাজিত হয়েছেন আনোয়ারের ঘনিষ্ঠজন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান শামীম আহমদ। ভোটের শক্তি প্রদর্শনে কেউ পিছিয়ে নেই। থানায় দায়ের করা হয়েছে পাল্টাপাল্টি মামলা। তবে ওসি গোলাম দস্তগীরের সাফ কথা; শক্তি প্রদর্শন করতে গেলেই আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। দু’ পক্ষকে শান্ত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। এর আগে সিলেটের বিশ্বনাথের উপজেলা নির্বাচনেও ঘটেছিল একই ঘটনা। বিশ্বনাথে নাসির খানের সমর্থন স্পষ্ট না হলেও আনোয়ারুজ্জামানের অবস্থান পরিষ্কার। চেয়ারম্যান প্রার্থী রাহীনের পক্ষে মেয়র আনোয়ারুজ্জামান। এ জোটে এসে যোগ দিয়েছেন বিশ্বনাথের মেয়র মুহিবুর রহমানও। প্রথম দফা সিলেট সদর উপজেলা নির্বাচনে আনোয়ারুজ্জামান সমর্থন দিয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ সুজাত আলী রফিককে। নাসির সেখানে সরাসরি অবস্থান না নিলেও নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর পক্ষে তার অবস্থান ছিল বলে সদর আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন।
নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে জয়লাভের পর অধ্যক্ষ সুজাত আলী রফিক মেয়র আনোয়ারুজ্জামানের পক্ষে সরাসরি অবস্থান নিয়েছেন। সিলেটে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা এমদাদের শোডাউনে এসে সুজাত আলী রফিক মেয়রের সঙ্গে একই মঞ্চে ছিলেন। বক্তব্যও দিয়েছেন। প্রশংসাও করেছেন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর নেতৃত্বের। গোলাপগঞ্জ ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলা নির্বাচনে দু’ নেতার সমর্থিত প্রার্থীদের মধ্যে মূল লড়াই হয়েছে। গোলাপগঞ্জে জয়ী হয়েছেন মেয়র আনোয়ারের ঘনিষ্ঠজন মঞ্জুর সাফি চৌধুরী এলিম। আর নাসির খানের সমর্থন ছিল শাহিদুর রহমান চৌধুরী জাবেদের প্রতি। কিন্তু জাবেদ পারেননি। নির্বাচনের দিন জাবেদ কায়স্থরাইল এলাকায় হামলার মুখোমুখি হন। এলিম পক্ষের লোকজন তার ওপর এ হামলা করে বলে অভিযোগ করেন তিনি। নির্বাচন পরবর্তী এক সমাবেশে জাবেদ অভিযোগ করেছেন; কায়স্থগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আমিসহ আনারস প্রতীকের প্রার্থীর ওপর দোয়াত-কলমের সমর্থক সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় যা আপনারা বিভিন্ন চ্যানেলে লাইভে দেখেছেন। তাছাড়া ভাদেশ্বরের একটি কেন্দ্রে তারা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। তাদের হামলায় আহত কয়েকজন এখনো মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে।
দক্ষিণ সুরমায় স্থানীয় সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমানের পক্ষের প্রার্থী বদরুল ইসলামের পক্ষে অবস্থান ছিল মেয়র আনোয়ারের। নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন বদরুল ইসলাম। অন্যদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদের পক্ষে অবস্থান ছিল জেলা সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খানসহ অন্য নেতাদের। তৃতীয় ধাপে নির্বাচনে কানাইঘাট উপজেলার ভোট নিয়ে আগে থেকেই উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এলাকার লোকজন জানিয়েছেন; এ উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছে নাসির খানের ঘনিষ্ঠজন রেড ক্রিসেন্টের কেন্দ্রীয় নেতা ও জেলা আওয়ামী লীগের পরিবেশ বন বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাক আহমদ পলাশ। আর মেয়র আনোয়ারের সমর্থন নিয়েছেন যুক্তরাজ্য কমিউনিটি নেতা শামসুজ্জামান বাহার। ফলে এ দু’জনের মধ্যে নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারাও দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।