ভারতের মাটিতে সংসদ সদস্যের ‘মরদেহ উদ্ধার’ নিয়ে রহস্য কেন
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ মে ২০২৪, ৪:৫৩ অপরাহ্ণ
সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার নিখোঁজ হওয়া থেকে শুরু করে লাশ উদ্ধারের খবর পর্যন্ত পুরো সময়টা রহস্যে ঘেরা। ‘তিনি কীভাবে নিখোঁজ হলেন’, ‘এমপি আনোয়ারুল যার বাসায় উঠেছিলেন, সেই স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাসের সঙ্গে তার কী সম্পর্ক’, ‘লাশ উদ্ধারের খবর গোপাল বিশ্বাস কোথায় পেলেন’— আর এখন সেই লাশই কোথায়? কলকাতা পুলিশ এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও বক্তব্য দেয়নি।
এদিকে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার ভারতের কলকাতায় পরিকল্পিতভাবে খুন হয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এমপি আনার খুনের ঘটনায় তিন জনকে আটক করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে এর বেশি কিছু বলা যাবে না।’
বুধবার (২২ মে) দুপুরে গণমাধ্যমকর্মী জানান, যে বাড়িতে মরদেহ থাকার কথা বলা হচ্ছে, সেটিকে এখন ঘিরে রাখা হয়েছে।
এমপি আনোয়ারুল আজিম আনানের কথিত বন্ধু কলকাতার বরানগরের স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাস কলকাতার সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, তার বাড়ি থেকে একজন আনোয়ারুলকে গাড়িতে তুলে দিতে গিয়েছিলেন। সেই ব্যক্তি সে সময় দেখেন, গাড়িতে চালক ছাড়া আরও একজন ছিলেন। এমপি পেছনের সিটে বসেন।
নিউ টাউনের একটি আবাসনেও ছিলেন আনোয়ারুল আজিম। গোপাল বিশ্বাস বলেন, ‘এনকোয়ারি অফিসার আমাকে কিছু বলেননি। শুধু এটুকু বলা হয়েছে যে, গাড়িতে আনোয়ারুল আজিম উঠেছিলেন। তার গাড়িটি ট্রেস করা গিয়েছে। কে ড্রাইভার ছিল, তা জানা গেছে। কিন্তু এমপিকে কোথায় নিয়ে গেছে, তা জানা যায়নি। আমাকে বলেছিলেন— বিকালে ফিরে আসবো। কিন্তু ফিরে না এসে বিকালে মেসেজ পাঠান যে, তিনি দিল্লি চলে যাচ্ছেন। পরের দিন দিল্লি পৌঁছে আবার মেসেজ দেন যে— তিনি দিল্লি পৌঁছে গেছেন। পরের দিন ১৭ মে এমপির মেয়ে ফোন করে জানান, বাবার খোঁজ পাচ্ছেন না। তখন থেকেই আমরা খোঁজখবর করছি। খোঁজ না পেয়ে থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেছি।’
কলকাতা পুলিশ এখন এমপির সঙ্গে গাড়িতে থাকা ব্যক্তির খোঁজ করছে বলে জানা গেছে। পুলিশ সূত্র থেকে জানা যায়, গত ১২ মে কলকাতায় যান এই সংসদ সদস্য। সেখানে তিনি যে ফ্ল্যাটে উঠেছিলেন, সেখানে তার সঙ্গে আরও তিন জন ছিলেন। গত ১৩ মে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ভাড়া করা গাড়িতে দুপুর ১টা ৪১ মিনিটে বেরিয়েছিলেন তিনি। তারপর থেকে তার আর কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি।
পুলিশ জানায়, সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে, কারা সংসদ সদস্য আনোয়ারুলের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন।
এদিকে কলকাতা বিধান নগর পুলিশের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার মানব শ্রিংলা বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে ক্যাবচালক জানিয়েছে, ১৩ মে যে ব্যক্তিকে তিনি গাড়িতে তুলেছিলেন, তাকে হত্যার পর টুকরা টুকরা করে লাশ ছড়িয়ে দিয়েছে’। তবে এমপি আনোয়ারুল আজিমকে হত্যা করা হয়েছে কিনা, অথবা তার মরদেহ পাওয়া গেছে কিনা, সেই বিষয়ে কলকাতার পুলিশ এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি।
পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের অ্যান্টি টেরোরিস্ট ইউনিটের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তদন্তে নেমে তারা প্রথমে এমপি আনোয়ারুল আজিমকে বহনকারী ক্যাবচালককে আটক করেন। সেই ক্যাবচালক তাদের জানিয়েছেন— এমপি আজিমকে তার গাড়িতে তোলার পর আরও তিন জন গাড়িতে ওঠেন। তাদের মধ্যে দুজন পুরুষ ও একজন নারী। পরে এই চার জন কলকাতা নিউ টাউনের ওই বাড়িতে যান। সিসিটিভি ফুটেজে ওই চার জনকে বাড়িতে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। পরে তিন জন বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলেও, তাদের মধ্যে এমপি আনোয়ারুলকে আর দেখা যায়নি।’
এটিএফ (অ্যান্টি-টেরোরিজম ফ্রন্ট) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ‘এদের মধ্যে পুরুষ দুজন বাংলাদেশে ফিরে যান। বাংলাদেশের গোয়েন্দা বিভাগকে জানানো হলে— তারা সেই দুজনকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। তাদের দেওয়া তথ্য কলকাতার পুলিশকে জানানো হয়েছে। এরপরেই এমপি আনোয়ারুল আজিমের মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত হয় পুলিশ। নিউ টাউনের ফ্ল্যাটের ভেতরে রক্তের দাগ রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
স্থানীয় পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যে ফ্ল্যাটে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, সেটি পুলিশ ঘিরে রেখেছে। সেখানে কাউকে এখনও ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের গোয়েন্দা বিভাগের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা সব ধরনের চেষ্টা করার পর ওই এমপির খোঁজ পাই ৷ আজ নিউ টাউনের একটি আবাসনে তল্লাশি চলাকালে একটি মরদেহ উদ্ধার হয়েছে, তদন্ত চলছে। আবাসনের সিসিটিভি ফুটেজও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নিরাপত্তা রক্ষীদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’
কলকাতায় বাংলাদেশ উপদূতাবাস সূত্র বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছে, এখানে রহস্যের কিছু নেই। যা ঘটেছে সে বিষয়ে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ব্রিফিং করেছে। আবারও যদি আমাদের দিক থেকে কোনও তথ্য আপডেট হয়, সেটাও মন্ত্রণালয় থেকেই জানানো হবে। গত দুই-তিনদিন ধরেই যোগাযোগ হচ্ছিল দুই দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে।
‘নিশ্চিত না হয়ে অসমর্থিত সূত্র ব্যবহার করে নানাবিধ তথ্য প্রকাশ না করাই ভালো’, বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বাংলা ট্রিবিউন