লিবিয়ায় ৪ যুবককে জিম্মি করে মুক্তিপণ দাবি
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ এপ্রিল ২০২৪, ২:৫৩ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্কঃ
অভাব ঘুচিয়ে পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফোটাতে লিবিয়ায় পাড়ি জমান লালমনিরহাট সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের নিভৃত গ্রাম সিন্দুরিয়ার দুই যুবক। তাদের সঙ্গে যান পার্শ্ববর্তী কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা গ্রামের আরও দু’জন। তারা সবাই লালমনিরহাটের সিন্দুরিয়া গ্রামের লিবিয়া প্রবাসী মিজানুর রহমান মিজানকে ৫ লাখ করে টাকা দেন। লিবিয়া পৌঁছানোর পর সেই মিজানই তাদের জিম্মি করে আরও পাঁচ থেকে দশ লাখ টাকা করে মুক্তিপণ দাবি করেছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর পরিবারের। তাদের নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে চাওয়া হচ্ছে টাকা। দাবিকৃত টাকা না দিলে তাদের লাশও ফেরত পাবে না বলে পরিবারকে হুমকি দেওয়া হয়েছে।
এমন সব হুমকি-ধমকি দিয়ে গত ১১ মার্চ ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর মোবাইলে ভিডিও কল আসে। তার পরের দিন থেকে তাদের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। অজানা আশঙ্কায় পরিবারগুলোয় চলছে এখন মাতম।
ভুক্তভোগীরা হলেন– লালমনিরহাটের সিন্দুরিয়া গ্রামের শাহীনুর ইসলামের ছেলে রাকিবুল ইসলাম (৩২), পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের সিন্দুরিয়া গ্রামের জয়নাল আবেদিনের ছেলে আলামিন (২০), তার বোন জামাই কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা গ্রামের ইদ্রিস আলীর ছেলে হাফিজুল ইসলাম (৪০) ও একই গ্রামের মোতালেব হোসেনের ছেলে আল-আমিন (২৩)।
শনিবার সিন্দুরিয়া গ্রামের আলামিনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, একমাত্র ছেলে ও জামাইয়ের জিম্মি হওয়ার সংবাদে শোকে শয্যাশায়ী মা আলেয়া বেগম। ভাঙা ঘরের উঠানে তাকে শুইয়ে রাখা হয়েছে। জামাই হাফিজুরের বাড়ির লোকজন মেয়ে জয়নব বেগমকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়ে বলেছে, যেভাবেই হোক হাফিজুরকে মুক্ত করে আনতে হবে। নতুবা জয়নবকে তারা আর ঘরে উঠতে দেবে না।
আলেয়া বেগম জানান, ‘বাহে, হামার সব শেষ। ছাওয়া (ছেলে), জামাই হারায়ছি। মেয়ের সংসার মনে হয় আর টেকে না। জমিজমা বন্ধক ও গোয়ালঘর খালি করি আলামিন ও জামাই হাফিজুরকে লিবিয়া পাঠায়ছি। আছি কিছু চাই না, ছাওয়াক ফেরত দাও তোমরা বাহে।’
তিনি মিজানের নাম উল্লেখ করে বলেন, মিজানই হামার ছাওয়া ও জামাইকে বন্দি করি টাকা চাচ্ছে। পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শাহিদুল ইসলাম জানান, এই গ্রাম থেকে ১৫ থেকে ২০ যুবক মিজানের মাধ্যমে লিবিয়ায় গেছেন। মিজান ১৫ বছর ধরে লিবিয়ায় রয়েছে। ভুক্তভোগী দুই পরিবার সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছে। মিজান একসময় ঢাকায় রিকশা চালাত। বাবা মোন্নাফের অবস্থাও ভালো ছিল না। এখন তারা এলাকায় ধনাঢ্য হিসেবে পরিচিত।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে লিবিয়া প্রবাসী মিজানের বাবা মোন্নাফ হোসেন জানান, ছেলে এলাকার ভালো করতে গিয়ে ফেঁসে গেছে। মিজান না, অপহরণকারীরা তাদের জিম্মি করে টাকা চাচ্ছে। তিনি ভুক্তভোগী পরিবারকে ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিয়ে বলেন, লিবিয়ায় এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকে। তিন-চার মাস পর অপহরণকারীরা এমনিতেই ছেড়ে দেয়।
লালমনিরহাট সদর থানার ওসি ওমর ফারুখ বলেন, এখনও অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সুত্র-সমকাল