সিলেটে চ্যালেঞ্জের মুখে নৌকা নিয়ে জয়ী চেয়ারম্যানরা
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ মার্চ ২০২৪, ১১:০৫ অপরাহ্ণ
ওয়েছ খছরুঃ
বিগত সংসদ নির্বাচনের পর সিলেটের ১৩টি উপজেলার মধ্যে ১২টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এর মধ্যে দু’টি ছাড়া ১০টিতেই আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা জয়লাভ করেন। নির্বাচনে বিএনপি ও বিরোধী শিবির থেকে প্রার্থী না থাকায় দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের সঙ্গে লড়াই করে একচেটিয়া জয় ঘরে তুলে আওয়ামী লীগ। এই সুযোগে জনসমর্থন না থাকলেও দলীয় প্রতীক পেয়ে উপজেলা নির্বাচনেও পাস করেন অনেক অখ্যাত প্রার্থী। বিগত ৫ বছরে অনেকের পারফরম্যান্স জিরো। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে গাফিলতি, টিউবওয়েল চুরির বিতর্কসহ নানা বিষয়ে বিতর্কিত হয়েছেন অনেক চেয়ারম্যান। এবার উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নেই। ফলে নির্বাচন থেকে আগেভাগেই সরে যাচ্ছেন অনেকে। আবার বিতর্কের মধ্যে পড়া কেউ কেউ নিচ্ছেন নির্বাচনের প্রস্তুতি। তবে; তাদের পড়তে হচ্ছে চ্যালেঞ্জের মুখে।
দলের অন্য প্রার্থী কিংবা বিরোধী জোটের প্রার্থীরা ইতিমধ্যে তাদের মনে কাঁপন ধরিয়েছে। গত নির্বাচনে সিলেট সদর উপজেলা থেকে আওয়ামী লীগের আশফাক আহমদ, দক্ষিণ সুরমা থেকে আবু জাহিদ, বিশ্বনাথ থেকে এসএম নুনু মিয়া, বালাগঞ্জ থেকে মোস্তাকুর রহমান মফুর, গোলাপগঞ্জ থেকে মঞ্জুর কাদির শাফি, বিয়ানীবাজার থেকে আবুল কাশেম পল্লব, জকিগঞ্জ থেকে লোকমান আহমদ চৌধুরী, কানাইঘাট থেকে আব্দুল মুমিন চৌধুরী, জৈন্তাপুর থেকে কামাল আহমদ, গোয়াইনঘাট থেকে ফারুক আহমদ জয়ী হন। কেবল কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা থেকে স্বতন্ত্র হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতা হাজী শামীম আহমদ ও ফেঞ্চুগঞ্জ থেকে নুরুল ইসলাম জয়লাভ করেন।
এবার উপজেলা নির্বাচনে সিলেটের দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলার নির্বাচন থেকে সরে যাচ্ছেন দুই নেতা। শারীরিক অসুস্থতা দেখিয়ে তারা নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার কথা বললেও মূলত নির্বাচনে নৌকা প্রতীক না থাকার কারণে তারা প্রার্থী হচ্ছেন না। সিলেট সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ বর্তমান সরকারের অধীনে যে তিনবার উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রতিবারই তিনি প্রার্থী হয়েছেন। সাবেক মন্ত্রী পরিবারের ঘনিষ্ঠ এ নেতা প্রতিবারই জয়লাভ করেছেন। অবশ্য উপজেলায় তার জনপ্রিয়তা রয়েছে। তবে শারীরিক অসুস্থতাসহ নানা কারণে এবার আর তিনি প্রার্থী হচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন। একই অবস্থায় দক্ষিণ সুরমা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু জাহিদের বেলায়ও। তিনি ক’বছর ধরে শারীরিকভাবে অসুস্থ। এরপরও প্রার্থী হয়ে জয়ী হন। উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেন। এবার আর সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন। সাংবাদিকদের কাছে জানিয়ে দিয়েছেন; আর প্রার্থী হচ্ছেন না। তার অবর্তমানে এ উপজেলা থেকে কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা প্রার্থী হওয়ার আভাস দিয়েছেন। মেয়র মুহিবুর রহমানের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে একডজনের বেশি মামলার আসামি হয়েছেন বিশ্বনাথ উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম নুনু মিয়া। এ ছাড়া টিউবওয়েল দুর্নীতির বিতর্কে উঠে এসেছে তার নামও। তবে এগুলোকে রাজনৈতিক বলে জানিয়েছেন নুনু মিয়া। এবার তিনি প্রার্থী হচ্ছেন। এবার তার মাথার ওপর সাবেক মন্ত্রী পরিবারের ছায়া না থাকায় এসএম নুনু মিয়া কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন বিশ্বনাথ আওয়ামী লীগের নেতারা। বালাগঞ্জের উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তাকুর রহমান মফুরকে চ্যালেঞ্জ জানাতে মাঠে নেমেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনহার মিয়া।
গোলাপগঞ্জের ভোটের মাঠ নির্বাচনের আগেই তপ্ত হয়ে উঠেছে। বর্তমান চেয়ারম্যান মঞ্জুর কাদির শাফি। তিনি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ইকবাল আহমদ চৌধুরীর সৎভাই। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি নৌকার প্রার্থী নুরুল ইসলাম নাহিদকে ছেড়ে তৃণমূল বিএনপি’র প্রার্থী সমশের মবিন চৌধুরীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। এ কারণে তাকে নিয়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিরোধী শিবিরে ক্ষোভ দেখা দেয়। অবশ্য শাফি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, দলের উচ্চপর্যায়ের নেতাদের নির্দেশের তিনি তৃণমূল বিএনপি’র প্রার্থীর সঙ্গে কাজ করেছেন। দলের স্বার্থে এটি করেছেন। তার ব্যক্তি স্বার্থে নয়। তবে নৌকার প্রার্থী হয়ে নৌকার এমপি প্রার্থীর বিরোধিতা করায় এবার শাফির বিরুদ্ধে একাট্টা হচ্ছে আওয়ামী লীগ। ইতিমধ্যে শক্ত প্রার্থী হিসেবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি লুৎফুর রহমানকে সবাই প্রার্থী করেছেন বলে জানা গেছে।
আর সমশের মবিনের পক্ষে যাওয়া বিএনপি ও বিরোধী ভোটব্যাংক হারিয়েছেন শাফি। এদিকে বিয়ানীবাজারের উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কাশেম পল্লব, জকিগঞ্জের চেয়ারম্যান লোকমান আহমদ চৌধুরীর অবস্থান ভালো রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে এসে টাকা ছিটিয়ে নির্বাচনে জয়ী হওয়া কানাইঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মুমিন চৌধুরী এবার উন্নয়ন কম করার বিতর্কে পড়েছেন। এ কারণে তার পক্ষে নেই আওয়ামী লীগও। তহবিল শূন্য রেখে দানের টাকার চেক বিতরণ করে ব্যাপকভাবে সমালোচিত তিনি। তার সঙ্গে এবার টক্কর দিতে মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য উপ-কমিটির সদস্য শামসুজ্জামান বাহার, মোস্তাক আহমদ পলাশ ও আবুল খায়ের। গোয়াইনঘাটের ফারুক আহমদ যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসে চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। তার হিসেবের খাতা প্রায় শূন্য। উন্নয়ন প্রশ্নে তিনি অনেক পিছিয়ে। এ ছাড়া জাফলং কেন্দ্রিক ভূমিখেকো সিন্ডিকেট, বিছনাকান্দি কেন্দ্রিক চোরাচালানসহ নানা ঘটনায় ইতিমধ্যে তিনি বিতর্কিত হয়েছেন। এ কারণে এবার এ উপজেলায় শক্তিশালী প্রার্থী খোঁজা হচ্ছে। প্রার্থী হতে পারেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য গোলাপ মিয়া। জৈন্তাপুর উপজেলা চেয়ারম্যান কামাল আহমদ উন্নয়নের চেয়ে বিচার শালিসে ব্যস্ত বেশি। এ কারণে গত বছর ফোকাসে আসতে পারেননি তিনি। বিরোধী শিবির থেকে প্রার্থী হলেই চ্যালেঞ্জে পড়বেন তিনি এমনটি জানিয়েছেন জৈন্তাপুরের আওয়ামী লীগ নেতারা।সুত্র-মানবজমিন