তিন কর্মসূচি নিয়ে ফের সক্রিয় সিলেট বিএনপি’র নেতারা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ মার্চ ২০২৪, ২:৫৪ অপরাহ্ণ
এখনো আদালতে, কারাগারে দৌড়াতে হচ্ছে সিলেট বিএনপি’র নেতাকর্মীদের। ২৮শে অক্টোবরের পর থেকে নেতারা আছেন নানা চাপের মুখে। মুক্ত হয়েও হতে পারছেন না অনেকেই। এই অবস্থায় দলের ভেতরে স্বস্তি, নেতাকর্মীদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনতে সিলেট বিএনপি’র নেতারা ত্রিমুখী কাজে নেমেছেন। বিশেষ করে সিলেটে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে মনোবল বাড়ানো এবং ঐক্য ফিরিয়ে আনতে নেতারা এ কাজে নেমেছেন। এরমধ্যে রয়েছে; কারাবন্দি নেতাদের মুক্ত, নিহত ও আহত নেতাদের ও পরিবারের পাশে দাঁড়ানো এবং ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে ফের সক্রিয় হয়ে ওঠা। বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবন বলেছেন- ২৮শে অক্টোবরের পর সিলেট বিভাগে দেড়শ’র বেশি মামলা হয় এবং ৫ শতাধিকের বেশি নেতাকর্মী কারান্তরীণ হন। আসামি হয়েছেন ১০ হাজার নেতাকর্মী। নেতাকর্মীরা জাঁতাকলে ছিলেন। এখন ধীরে ধীরে নেতারা মুক্ত হচ্ছে, পরিবেশ ফিরছে।
এই অবস্থায় আমাদের এখন উদ্যোগ হচ্ছে দল পুনর্গঠন, কারাবন্দি নেতাদের মুক্তি, আহতদের সুচিকিৎসা এবং যারা নিহত হয়েছেন তাদের পরিবারের পাশে থাকা। এই কাজগুলো এখন আমরা করছি। তিনি বলেন; বিএনপি একটি বড় দল। এই দলের ভেতরে গতি ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সিলেট বিভাগেও আমরা এসব কর্মকাণ্ড করছি। ২৮শে অক্টোবরের পর সিলেট বিভাগের মধ্যে যে কয়েকটি ইউনিট সবচেয়ে বেশি দমন-পীড়নের মুখে পড়েছিল এরমধ্যে ছিল সিলেট জেলা ও নগর ইউনিট। জেলা ও নগরের নেতারা জানিয়েছেন- ২৮শে অক্টোবরের পর সিলেটে অন্তত ৮০টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৪০০ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিলেন। জেলা ও নগরের সিনিয়র নেতারাও কারান্তরীণ ছিলেন। কিন্তু কেউই পিছু হটেননি। বরং দলের প্রয়োজনে নেতারা রাজপথে মামলার হুলিয়া মাথায় নিয়ে আন্দোলন করে গেছেন। আন্দোলন সংগ্রামে থাকা নেতাকর্মীরা এখনো আদালত, কারাগার পর্যন্ত দৌড়াচ্ছেন। সিলেট জেলা বিএনপি’র সভাপতি আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরী জানিয়েছেন- আদালত, কারাগারে দৌড় এখনো কমেনি। কয়েকশ’ নেতাকর্মী কারাবরণ করে সম্প্রতি বেরিয়ে এসেছেন। কিন্তু যারা উচ্চ আদালতের জামিনে ছিলেন তারা এখন নিম্ন আদালতে হাজিরা দিয়ে অনেকেই কারাগারে যাচ্ছেন। ফলে আমরা স্বস্তিতে আছি, এটা বলা যাবে না। বরং যে দমন, পীড়ন অব্যাহত ছিল, এখনো সেটিই আছে। তিনি জানান- এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সিলেট বিএনপি’র পক্ষ থেকে ইফতার মাহফিলসহ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতারা ইফতারের মাধ্যমে নিজেদের ঐক্যবদ্ধভাবে গড়ে তুলছেন। একইসঙ্গে আমরা ইফতার মাহফিলের মাধ্যমে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে একীভূত হচ্ছি। পাশাপাশি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে নাভিশ্বাসে থাকা মানুষের জন্য কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে সক্রিয় রয়েছি। বিএনপি গণমানুষের দল হওয়ার কারণে মানুষের কথা চিন্তা করে মাঠে সক্রিয় রয়েছে বলে জানান তিনি। জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী জানিয়েছেন- সিলেটে মামলায় অন্তত ৬ হাজার নেতাকর্মী আসামি হয়েছিলেন। তারা এখন জামিনের জন্য দৌড়াচ্ছেন। তবে; সিলেট বিএনপি’র পক্ষ থেকে আমরা বসে নেই। আইনি সেল গঠন করে আমরা নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছি। এমরানের দাবি; দলের জন্য যারা কাজ করে মামলার আসামি হয়ে কারাগারে ছিলেন তাদের প্রয়োজনে আমরা পাশে দাঁড়িয়েছি। ভবিষ্যতেও থাকবো। এদিকে; সিলেট বিএনপিতে এই অবস্থায়ও পুনর্গঠন নিয়ে আলোচনার অন্ত নেই। জেলা বিএনপি পূর্ণাঙ্গ হলেও নগর বিএনপি এখনো অর্ধাঙ্গ। এক বছর পেরিয়ে গেলেও পূর্ণাঙ্গ হয়নি কমিটি। এ নিয়ে নেতাদের মধ্যে ক্ষোভও বাড়ছে। সিলেট নগর বিএনপি’র সভাপতি নাসিম হোসাইন জানিয়েছেন- সিলেট নগরে পূর্বে ওয়ার্ড ছিল ২৭টি। এখন সেটি করা হয়েছে ৪২টি। নতুন ওয়ার্ডগুলোর মধ্যে ১০টির মতো ওয়ার্ডে নতুন সাংগঠনিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এখনো ৫-৬টি ওয়ার্ড গঠন করা যায়নি। রমজানের পরপরই সেগুলো করা হবে। তিনি বলেন- সিলেট নগর বিএনপি’র যেসব নেতাকর্মী জামিনে মুক্তি পাননি কিংবা নতুন করে মামলায় আসামি হয়েছেন তাদেরকে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। নেতাদের মুক্তির বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা ইফতার মাহফিলের আয়োজনসহ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। এই কর্মসূচির মাধ্যমে সিলেট বিএনপিতে ফের গতি ফিরবে বলে জানান তিনি। এদিকে- নগর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী জানিয়েছেন; অন্তত ৬ মাস আগে কেন্দ্রের কাছে নগর বিএনপি’র পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা প্রস্তাব আকারে পাঠানো হয়েছে। এতে প্রবীণের পাশাপাশি নতুনদের নামও রয়েছে। ফলে কেন্দ্র চাইলে যেকোনো সময় কমিটি ঘোষণা করতে পারে। সিলেট নগর বিএনপি’র সিনিয়র নেতারা জানিয়েছেন- কয়েকদিন আগে সিলেট বিএনপি’র নেতারা স্কাইপির মাধ্যমে দলের হাইকমান্ডের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আর বৈঠকে উঠে এসেছে নগর বিএনপি’র কথা। এজন্য দলের হাইকমান্ড দ্রুততম সময়ের মধ্যে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার তাগিদ দিয়েছেন। সিলেট যুবদলের নেতারা জানিয়েছেন- জেলা ও নগর যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়নি। এ নিয়ে বারবার চাপ দেয়া হলেও নেতারা নড়ছেন না। দীর্ঘ ২১ বছর পর যুবদলের সম্মেলনের মাধ্যমে আংশিক কমিটি গঠন হলেও পূর্ণাঙ্গ না হওয়ায় ফের হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে পড়েছেন দলের নেতারা। আর মেয়াদোত্তীর্ণ ছাত্রদল দিয়ে চলছে কার্যক্রম। তবে- গেল আন্দোলনে সিলেটের স্বেচ্ছাসেবক দল, যুবদল ও ছাত্রদল নেতারা আন্দোলনে রাজপথে সক্রিয় ছিলেন। এতে দলের ভেতরে তারা প্রশংসিত হয়েছেন বলে জানান নেতারা।