সিলেটে সড়কের দৃশ্য বদলায় না
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ মার্চ ২০২৪, ২:৩৮ অপরাহ্ণ
সিলেটের ফুটপাথ এখন দখলমুক্ত। হকাররা মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর কথা শুনে চলে গেছেন পুনর্বাসন স্থান হকার মার্কেট মাঠে। তবুও থেমে নেই সিটি করপোরেশনের কাজ। ফুটপাথ হকারমুক্ত রাখতে চলছে সাঁড়াশি অভিযান। সিলেট নগরের হকার ছাড়া সড়কে ফুটে উঠেছে ভিন্ন চিত্র। যানবাহনে নেই কোনো শৃঙ্খলা। স্ট্যান্ডে গাড়ি বেড়েছে। এবড়ো-থেবড়ো রাখা যানবাহনের কারণে যানজট প্রকট আকার ধারণ করেছে। নগরের সড়কে এখন শৃঙ্খলা ফেরানো ট্রাফিক পুলিশের কাজ। কিন্তু ট্রাফিক পুলিশ এখনো ঘুমে।
গতকাল পর্যন্ত তাদের পক্ষ থেকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি। তবে ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন; যেহেতু ফুটপাথ দখলমুক্ত হয়েছে সেহেতু শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। সিলেটের যানজট ও শৃঙ্খলার প্রধান অন্তরায় ছিল হকাররা। বিগত দুই যুগ ধরে এই অভিযোগ ছিল নির্বাচিত নগর পিতাদের বিরুদ্ধে।
এবার মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ক্ষমতা গ্রহণের পর অভিযোগটি আরও শক্ত হয়। এ নিয়ে এন্তার সমালোচনার মুখোমুখি ছিলেন মেয়র আনোয়ার। তবে, কথা রেখে কাজও করেছেন তিনি। রোববারই সিলেটের প্রায় ৫ হাজার হকারকে পুনর্বাসন করেছেন হকার মার্কেট মাঠে। হকারবিহীন নগরে ভিন্ন চিত্র এখন সিলেট নগরে। রাতের দৃশ্যপট ছিল আকর্ষণীয়। এতে প্রশংসায় ভাসছেন মেয়র আনোয়ার। কিন্তু সকাল হতেই নগরের ভিন্ন চিত্র। নগরে ফের যানজট। রমজানের বাজারের সড়কে ছিল চরম বিশৃঙ্খলা। নগরের প্রায় পয়েন্টে ছিল যানজট। বিষয়টি নিয়ে গতকাল দুপুরে সিলেট চেম্বার মিলনায়নে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন চেম্বার সভাপতি তাহমিন আহমদ। সংবাদ সম্মেলনে তিনি প্রথমে ধন্যবাদ জানান মেয়র আনোয়ারুজ্জামানকে। একই সঙ্গে দোকানের সামনে ফুটপাথে যাতে হকাররা না বসতে পারে সে কারণে ব্যবসায়ীদের সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান। চেম্বার সভাপতি বলেন; ফুটপাথ দখলমুক্ত হওয়ার পর এখন দেখা যাচ্ছে রিকশা এবং সিএনজির দখলে গেছে রাস্তা। এতে চরম বিশৃঙ্খল অবস্থা দেখা দিয়েছে। তিনি সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের কাছে আহ্বান জানিয়ে বলেন- রিকশা ও সিএনজি দ্বারা যেন আবার রাস্তা ও ফুটপাথ যাতে দখল না হয়। সেদিকে লক্ষ রাখার জন্য তিনি বিনীত আহ্বান জানান। সিলেট সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে- বহুল প্রতীক্ষিত ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের পুনবার্সন কার্যক্রমের পর ফুটপাথ দখলমুক্ত ও যানজট নিরসন করতে অভিযান করেছে সিলেট সিটি করপোরেশন। সোমবার নগরীর বিভিন্ন এলাকায় এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় সিসিক’র পক্ষ থেকে সতর্ক করে ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের নগরভবন লাগোয়া লালদিঘীর পাড়ের নির্ধারিত স্থানে স্থানান্তরিত হওয়ার জন্য বলা হয়। নির্দেশ অমান্য করায় কয়েকজন ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীর থেকে নগদ অর্থ জরিমানা আদায় করা হয়েছে। সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান গতকাল বিকালে জানিয়েছেন- আমাদের কাজ হচ্ছে ফুটপাথ দখলমুক্ত করা। সেটি আমরা করছি। এখন অভিযান চালানো হচ্ছে। যারা ফুটপাথে বসবে বা বসছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ফুটপাথকে হকারমুক্ত রাখতে তাদের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন- আশা করা হচ্ছে হকার নিয়ে আর নগরে তেমন কোনো সমস্যা হবে না। পুনর্বাসন স্থানে ক্রেতারা গেলে হকাররাও আর সড়কে আসবে না। এজন্য হকার মার্কেট মাঠে সুযোগ সুবিধা বাড়ানো হচ্ছে। এদিকে- চলতি মাসে সিলেট মেট্রো বিআরটিএ’র এমআরটিসি এবং জেলা বিআরটিএ’র আরটিসি’র বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দু’টি বৈঠকে সিলেটের যানজট নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। এবং যানজট কমাতে অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করার বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। এ ব্যাপারে ট্রাফিক পুলিশকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিআরটিএ’র পক্ষ থেকেও অভিযান চালানো হবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। নগরবাসী বলছেন; সিলেট নগরে অর্ধশতাধিক অবৈধ স্ট্যান্ড রয়েছে। প্রতিটি স্ট্যান্ডে শ’শ’ গাড়ি রাখা হয়। এই গাড়িগুলো রাখার ব্যাপারে কোনো শৃঙ্খলা নেই। ফলে স্ট্যান্ড এলাকায় এখন যানজট বেশি। বিশেষ করে পরিবহন শ্রমিকরা আইন মানছেন না। পাশাপাশি অবৈধ পার্কিংও বেশি। নগরজুড়ে অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে যানবাহন সড়কেই থাকছে। এ কারণে যানজট কমছে না বলে জানান তারা। তবে সিলেট সিটি করপোরেশনের ট্রাফিক বিভাগের প্রধান ও উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান জানিয়েছেন- সিলেটের মেয়রের সঙ্গে কয়েক দিন আগে পুলিশের বৈঠক হয়েছে। নগরের শৃঙ্খলা ফেরানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম ছিল ফুটপাথ দখলমুক্ত করা। ফুটপাথ খালি হওয়ার কারণে অসঙ্গতিগুলো দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন- নগরের সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ কাজ করা হবে। এদিকে- নগরের যানজট নিরসন সহ ৫ দফা দাবিতে গতকাল মেয়র, সিলেটের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ কমিশনারের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে সিলেট কল্যাণ সংস্থা সহ কয়েকটি সংস্থা। সংস্থাগুলোর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও সিলেট কল্যাণ সংস্থার কার্যকরী কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ এহছানুল হক তাহেরের নেতৃত্বে এ স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। সংস্থার সভাপতি জানান- নগরে যানজট নিরসনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, দিনের বেলা অস্থায়ীভাবে অনুমোদনহীন বিভিন্ন এলাকায় পর্দা দিয়ে ঘেরা খাবার হোটেল বন্ধের ব্যবস্থা গ্রহণ, ধর্মীয় প্রচার ছাড়া সবধরনের মাইকিং বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, ছবি সংবলিত ব্যানার, ফেস্টুন ও বিজ্ঞাপন অপসারণ, সবধরনের নাচ, গান ও বাদ্যযন্ত্র ব্যবহারে বিরত থাকার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে এ স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।