বাণিজ্য করতে সিলেটে সিএনজি অটোরিকশার রেজিস্ট্রেশনের পাঁয়তারা
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ মার্চ ২০২৪, ১১:২৪ অপরাহ্ণ
ওয়েছ খছরুঃ
এক বছর আগে ‘দুর্নীতির মঞ্চ’ প্রস্তুত করা হয়। শোরুম থেকে বিক্রি হওয়া অন্তত ৭ হাজার সিএনজি অটোরিকশার রেজিস্ট্রেশন নিতে সিলেট বিআরটিএ’র দালালরা ফাইল গ্রহণ করেছিল। শুরু হয়েছিল টাকার খেলা। বিভিন্ন তরফ থেকে অন্তত ৫০-৬০ কোটি টাকা বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছিল। এতে পিছু হটেন বিআরটিএ কর্মকর্তারা। তবে, ফাইলগুলো তাদের হাতেই রয়েছে। পথ খুঁজছেন রেজিস্ট্রেশনে। আগামী রোববার জেলা বিআরটিএ’র আরটিসির বৈঠক। ওই বৈঠকে উত্থাপন হতে পারে নতুন রেজিস্ট্রেশনের বিষয়টি। গত বুধবার মেট্রো বিআরটিএ’র এমআরটিসির বৈঠকেও নতুন রেজিস্ট্রেশনের বিষয়টি উত্থাপন করার পাঁয়তারা ছিল।
তবে বৈঠকের আগে নতুন রেজিস্ট্রেশন নিয়ে বিতর্ক শুরু হওয়ায় সে বিষয়টি আর আলোচনায় তোলা হয়নি। সিলেটে সিএনজি অটোরিকশার নতুন রেজিস্ট্রেশন দেয়ার বিরোধী পরিবহন মালিক, শ্রমিক, সুশীল সমাজসহ বিভিন্ন মহল। এর কারণ হচ্ছে- সিলেট নগরে বর্তমানে যানজটের অন্যতম কারণ হচ্ছে সিএনজি অটোরিকশা। প্রতিদিন অন্তত ২৫-৩০ হাজার সিএনজি অটোরিকশা নগরে সড়কে চলছে। এতে যানজট সৃষ্টি হওয়ায় সাধারণ মানুষও সিএনজি অটোরিকশার উপর ক্ষুব্ধ। সিলেটে আগে ছিল জেলা বিআরটিএ। মেট্রো বিআরটিএ নতুন করে গঠন করা হয়েছে। জেলার রেজিস্ট্রেশন নিয়ে নগরেও চলছে সিএনজি অটোরিকশা। ২০১৪ সাল পর্যন্ত জেলা বিআরটিএ সিলেটে ১৯ হাজার ২৩৪টি সিএনজি অটোরিকশার রেজিস্ট্রেশন দিয়েছিল। এরপর থেকে রেজিস্ট্রেশন বন্ধ আছে। কিন্তু বাস্তবে সিলেট নগর ও জেলা মিলে সিএনজি’র সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার। অবৈধ অটোরিকশার সংখ্যা অর্ধেকের বেশি। অবৈধ অটোরিকশার মধ্যে রয়েছে নতুন কেনা অটোরিকশা হবে ৬-৭ হাজার, চোরাই সিএনজি’র সংখ্যা হবে ৭-৮ হাজার ও অন্য জেলার গাড়ি হবে ৬-৭ হাজার। এসব সিএনজি অটোরিকশাই হচ্ছে নগরের যানজটের অন্যতম কারণ। অবৈধ অটোরিকশার মালিক ও চালকরা ‘টোকেন বাণিজ্যের’ মাধ্যমে এসব গাড়ি দাপটের সঙ্গে নগরের সড়কে চালাচ্ছেন। আর টোকেন বাণিজ্যে জড়িত ট্রাফিক পুলিশ, থানা পুলিশের মাঠপর্যায়ের সদস্য ও অটোরিকশা শ্রমিকদের কিছুসংখ্যক নেতা। এতে করে মাসে অন্তত কোটি টাকার বাণিজ্য হয় বলে জানিয়েছেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। টোকেন বাণিজ্যের মাধ্যমে অবৈধ অটোরিকশা চলার কারণে বৈধ অটোরিকশার মালিকরা লোকসানে রয়েছেন। এই অবস্থায় গত বছরের শুরুতে নতুন করে সিএনজি অটোরিকশার রেজিস্ট্রেশন দেয়ার তোড়জোড় শুরু হয়। নগরের চৌকিদেখী, সুবহানীঘাটসহ কয়েক এলাকায় থাকা বিক্রয় শোরুমের প্রতিনিধিরা গোপনে এর কার্যক্রম শুরু করেন। এ ছাড়া আদালতপাড়ার কয়েকজন মহুরি ও বিআরটিএ’র দালালরা, পরিবহন নেতাদের অনেকেই সক্রিয় হয়। শ্রমিকরা জানিয়েছে- গত বছর অন্তত ৬-৭ হাজার সিএনজি অটোরিকশার ফাইল গ্রহণ করা হয়েছে। এতে প্রতিটি সিএনজি অটোরিকশার রেজিস্ট্রেশন দিতে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা কন্ট্রাক্ট করা হয়। কিছু টাকা অগ্রিমও গ্রহণ করা হয়। কিন্তু আরটিসি’র বৈঠকে নতুন রেজিস্ট্রেশনের বিষয়টি উত্থাপিত না হওয়ায় এখনো এগুলোকে রেজিস্ট্রেশন দেয়া সম্ভব হয়নি। পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা জানিয়েছেন, নতুন রেজিস্ট্রেশন দেয়ার আগে জেলা ও নগরের অটোরিকশার শৃঙ্খলা আনতে হবে। জেলা ও নগরের গাড়ি পৃথক করতে হবে। এরপর প্রয়োজন হলে রেজিস্ট্রেশন দেয়া যেতে পারে। কিন্তু সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খল অবস্থায় রেজিস্ট্রেশন দিলে সিলেট নগর ও আশপাশ এলাকায় এর চাপ পড়বে। এতে যানজট বাড়বে। তাদের দাবি হচ্ছে; আরটিসি’র বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়ে যদি ৫ হাজার অটোরিকশাকে রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয় তাতে ৫০ কোটি টাকার বাণিজ্য হবে। শুধুমাত্র বাণিজ্যকে প্রাধান্য দিতে নতুন রেজিস্ট্রেশনের পাঁয়তারা করা হচ্ছে বলে জানান তারা। বিষয়টি আগামী রোববার জেলা আরটিসি’র সভায় উত্থাপনের চেষ্টা করা হচ্ছে।
তবে সিলেট জেলা বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজুল ইসলাম জানিয়েছেন- আগামী আরটিসি’র সভায় বিষয়টি উত্থাপনের চেষ্টা চলছে না। যদি এ নিয়ে আলোচনা ওঠে তবে সিদ্বান্ত হলেও হতে পারে। সার্বিক বিষয় সভার কর্মকর্তারা দেখবেন। তিনি বলেন- রাস্তায় কোনো অবৈধ গাড়ি চলতে পারে না। জেলা ও নগরের অটোরিকশা একসঙ্গে নগরের সড়কে চলার কারণে বিশৃঙ্খল অবস্থা হচ্ছে। ফলে এ বিষয়টিকে এখন গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এদিকে মেট্রো বিআরটিএ’র উপ-পরিচালক ডালিম উদ্দিন জানিয়েছেন, বুধবার এমআরটিসি’র বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে নতুন সিএনজি অটোরিকশার রেজিস্ট্রেশন দেয়ার ব্যাপারে আলোচনা হয়নি। নতুন রেজিস্ট্রেশন দেয়ার কোনো চিন্তাভাবনাও করা হচ্ছে না। তবে মেট্রোয় চলাচলকারী সিএনজি অটোরিকশা পৃথকীকরণের প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। জেলার অটোরিকশা জেলায়, নগরের অটোরিকশা নগরে চলবে এমন বিষয় নিয়ে চিন্তাভাবনা রয়েছে। আগামীতেও হয়তো এ ব্যাপারে ভালো সিদ্বান্ত আসতে পারে।
অটোরিকশা মালিক ও শ্রমিকরা জানিয়েছেন, নগরের সড়কে চাপ কমাতে হলে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। যানবাহনকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এজন্য তাদের পক্ষ থেকে আগে নানা প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। নগর ও জেলার অটোরিকশা আলাদা করার প্রস্তাবও আছে। মেট্রো বিআরটিএ’র বৈঠকের পর এসব বিষয় নিয়ে পুলিশের সংশ্লিষ্ট বিভাগ চিন্তা-ভাবনা করছে।
সিলেট জেলা জেলা অটোরিকশা মালিক সমিতির সভাপতি শাহ মো. দিলওয়ার হোসেন জানিয়েছেন, আমরাও চাই জেলা ও মেট্রো’র অটোরিকশা পৃথকীকরণ হোক। এজন্য কালার কোড দিয়ে নগরের গাড়ি বিশেষ চিহ্নিত করা হোক। এই গাড়িগুলো কেবল নগরেই চলবে। আর জেলার গাড়ি জেলায় চলবে। এতে করে সিলেট নগরের সড়কের উপর চাপ কমবে। সাধারণ মানুষও যানজট থেকে রক্ষা পাবে। তিনি বলেন, প্রশাসন চাইলে আমরাও সার্বিকভাবে সহযোগিতা করবো। পৃথকীকরণ হলে নগরে শৃঙ্খলা ফেরার পাশাপাশি যানজট কমে আসবে বলে মনে করেন তিনি।