হকার উচ্ছেদ প্রথম অ্যাকশন আনোয়ারের
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ জানুয়ারি ২০২৪, ৮:০৩ অপরাহ্ণ
কামরান থেকে আরিফ। সাবেক এই দুই মেয়রের শাসনে সিলেটের প্রধান সমস্যা ছিল হকার। তারা দিয়েছিলেন প্রতিশ্রুতি; হকার উচ্ছেদ করবেন। কিন্তু কেউ-ই কথা রাখতে পারেননি। মেয়র থাকাকালে আরিফুল হক চৌধুরী লালদিঘীর পাড়ে ‘হলিডে’ মার্কেট চালু করেছিলেন। সেখানে হকাররাও গিয়েছিলেন। পরে ধীরে ধীরে তারা চলে আসে সড়কের ওপর। আরিফের দায়িত্ব পালনের শেষ সময় থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬ মাসে সিলেটের প্রধান সড়কটি ফের হকারদের দখলে। আম্বরখানা থেকে জিন্দাবাজার, কোর্ট পয়েন্ট, প্রধান ডাকঘরের সামনে দিয়ে কীনব্রিজের মুখ পর্যন্ত হকার আর হকার। সড়কে মাছবাজার থেকে শুরু করে কাপড়ের দোকান বসানো হয়েছে।
দুপুর গড়ালেই আর ফুটপাথ চলে যায় হকারদের দখলে। মধ্যরাত পর্যন্ত হয় বিকিকিনি। ফুটপাথ নিয়ে ব্যবসা চলছে। সিটির কাউন্সিলর, কর্মচারী, বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা টাকা নিয়ে ফুটপাথে ব্যবসা করার সুযোগ করে দেন; এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। ফুটপাথে বসে যারা ব্যবসা করেন; তারা সন্ধ্যায় বিদ্যুতের আলোরও সুবিধা পান। বিশেষ একটি মহল এই ব্যবস্থা করে দেয় বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এতে নেয়া হয় টাকা। তারা জানিয়েছেন- সিলেটের ব্যবসায়ীরা কোটি কোটি টাকার পুঁজি বিনিয়োগ করে ব্যবসা করেন। অথচ হকাররা টাকা দিয়ে সড়কে বসে সেই ব্যবসা করে মার্কেটের ব্যবসায়ীদের বিকিকিনিকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে হকার সমস্যা প্রবল হয়েছে। দিন দিন বাড়ছেই হকারদের সংখ্যা। একই সঙ্গে বিকাল হলেই ফুটপাথ তো দূরের কথা অর্ধেক রাস্তা চলে যায় হকারদের দখলে। এতে করে নগরের যানজট বেড়েছে। দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত যানজট লেগেই থাকে। এ অবস্থায় মঙ্গলবার সিলেটের ব্যবসায়ীরা একটি অনুষ্ঠানে মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর কাছে হকার সমস্যার বিষয়টি তুলে ধরেন। ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করে হুমকির মুখে রয়েছেন বলেও মেয়রকে অবগত করেন। এর জবাবে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন- আগামী একমাসের মধ্যে সিলেটের রাস্তাঘাট হকারমুক্ত করা হবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবপক্ষের সঙ্গে তার আলোচনা চলছে। মেয়র বলেন- সিলেট মহানগরীর বিভিন্ন সড়কে হকারদের অবস্থান নিয়ে সমালোচনা চলছে। বিষয়টা আমাদেরও দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এ নিয়ে আমরা কাজ করতে শুরু করেছি। হকার নেতৃবৃন্দসহ সংশ্লিষ্ট সবপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। তিনি বলেন, বিষয়টির সঙ্গে অনেক কিছু জড়িয়ে আছে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে- নাগরিক জীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনা। রাজপথে হকার থাকার কারণে যানজটের কবলে পড়তে হচ্ছে। আগামী একমাসের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান হবে। সিলেটের রাজপথ অবশ্যই হকার মুক্ত করতে বা রাখতে যা যা করা প্রয়োজন, তার সবকিছু করা হবে। তিনি এ কাজে সব মহলের আন্তরিক সহযোগিতা চেয়েছেন। অনুষ্ঠানে মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলসহ ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এদিকে সড়ক দখল করে বসা হকারদের দাবি হচ্ছে; তাদের অন্যত্র বসার জায়গা দিলে তারা সরে যাবেন। লালদিঘীর পাড় হকার মার্কেটের সামনের খোলা জায়গায় তাদের বসানো হয়েছিল। কিন্তু সেখানে কোনো ক্রেতা ঢুকেন না। এরপরও হকারদের একাংশ সেখানে এখনো আছেন। নতুন কিছু হকার সড়কে এসে যুক্ত হয়েছেন। ফুটপাথ ব্যবসার সঙ্গে সিলেটের প্রায় ৫-৬ হাজার পরিবার সম্পৃক্ত রয়েছে। হঠাৎ করে তাদের সরিয়ে দিলে অনেকেই পথে বসবে। এজন্য সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে একটি জায়গা বরাদ্দ দিলে হকাররা ধীরে ধীরে সরে যাবে। সিলেটের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী হকার উচ্ছেদের জন্য ঘন ঘন অভিযান চালিয়েছেন। তার ভয়ে হকাররা সড়ক ছেড়ে দিতো। কিন্তু পরে এসে আবার বসে যেতো। এক্ষেত্রে সিলেটের ব্যবসায়ী সমাজ, পুলিশ প্রশাসন এবং সিটি করপোরেশনকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে বলে জানান তারা। তারা জানিয়েছেন; হকার উচ্ছেদ করা হলো। পরবর্তীতে যাতে এসে না বসতে পারে সেজন্য পুলিশ প্রশাসনকে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। রহস্যময় কারণে পুলিশ প্রশাসন নিস্ক্রিয় হয়ে যায় বলে জানান তারা। এদিকে- হকার সমস্যার সমাধান ছাড়াও মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সিলেটের নানা দিকে নজর দিয়েছেন। অবৈধ বিলবোর্ড উচ্ছেদ, লাইসেন্স ট্যাক্স আদায়সহ নানাদিকে অভিযান শুরু করা হয়েছে। সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে ইতিমধ্যে জরিমানাও আদায় করা হচ্ছে। জুনে সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচন শেষ হলেও গত ৭ই নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করেন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান ও তার পরিষদ। এরপর জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নগর ভবনের কার্যক্রমে কিছুটা মন্থর গতি ছিল। নির্বাচন শেষ হওয়ার পর মেয়র আনোয়ার তার কার্যক্রম শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন নগর ভবনের কর্মকর্তারা।