গাড়ি পুড়িয়ে সরকার ফেলা যাবে না, হাত পুড়ে যাবে : সিলেটে শেখ হাসিনা
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ ডিসেম্বর ২০২৩, ৯:৫৭ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজঃ
বোমাবাজি ও আগুন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি বলে নির্বাচন প্রতিহত করবে। এতো সাহস তারা পায় কোথায়। লন্ডনে বসে একটা কুলাঙ্গার নির্দেশ দেয়, আর এখানে জ্বালাও পুড়াও করে মানুষ হত্যা করে। আমি শুধু এইটুকু বলতে চাই, দু চারটা গাড়ি পুড়িয়ে সরকার ফেলে দেয়া যাবে না। নির্বাচন ঠেকানো যাবে না। বরং আগুন নিয়ে খেলতে গেলে আগুনেই হাত পুড়ে যাবে।
বুধবার বিকেলে সিলেট নগরের আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এই জনসভার মাধ্যমেই আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারনা শুরু করলেন তিনি।
এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার হারানোর কিছু নেই, আমি সব হারিয়েছি। কেবল এক বোন ছাড়া আমার আর কেউ নেই। এই জনগনই আমার সব। তাই আমাকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই।
আগামী নির্বাচনে নৌকায় ভোট চেয়ে তিনি বলেন, এই নৌকা নুহু নবীর নৌকা। এই নৌকা মানব জাতিকে রক্ষা করেছে। নৌকায় ভোট দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে। উন্নয়ন পেয়েছে। আবার আপনারা নৌকায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করুন। বাংলাদেশকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১ সালে আমেরিকা প্রস্তাব দিয়েছিলো দেশের গ্যাস বিক্রি করতে হবে। আমি রাজী হইনি। এ কারনে আমাদের ক্ষমতায় আসতে দেয়া হলো না। গ্যাস বিক্রির মুছলেখা দিয়ে ক্ষমতায় এলো বিএনপি। এরপর শুরু হলো দু:শাসন।
তিনি বলেন, আমরা যখন উন্নয়ন করছি, বিএনপি তখন আগুন দিয়ে মানুষ পুড়াচ্ছে। দেশের সম্পদ ধ্বংস করছে। ২০১৩ সালেও তারা এমনটি করেছিলো। ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ৩ হাজারের মতো মানুষ পুড়িয়েছে তারা। ২০১৮ সালে ভোটে এসে তারা নমিনেশন বানিজ্য শুরু করলো। তারা নিজেদের কারণেই ডুবেছে।
গত ১৫ বছরে উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, গত ১৫ বছর বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। বিএনপির আমলে দারিদ্রের হার ছিলো ৪১ ভাগ। এখন আমরা ১৮ ভাগে নামিয়ে এনেছি। মাথাপিছু আয় অনেক বেড়ে গেছে। এ দেশের কোন মানুষ যেন ভুমিহীন ও গৃহহীন না থাকে এ জন্য ৮ লক্ষ ৪১ হাজার ঘর নির্মান করে দিয়েছি। এখন সিলেটে কোন গৃহহীন ও ভূমিহীন নেই। ৮ লক্ষ মানুষকে আমর বয়স্ক ও বিধবা ভাতা দেই। শিক্ষা বৃত্তি ও উপবৃত্তি পাচ্ছে প্রায় ৩ কোটি শিক্ষার্থী। সাক্ষরতার হার ৪৫ ভাগ থেকে ৭৫ ভাগে উন্নীত করেছি। ১ কোটি থেকে খাদ্য উতপাদন ৯ কোটিতে উন্নীত করেছি। তবে সবাইকে খেয়াল রাখবেন, কোন জমি যেন পতিত না থাকে। নিজের খাদ্য নিজেই উতপাদন করেন।
তিনি বলেন, আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। আজকে সবার হাতেই মোবাইল ফোন। ৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আমরা মোবাইল ফোন দিয়েছি। এখ৷ গ্রামেগঞ্জেও ইন্টারনেট আছে।
আওয়ামীগ সরকারের আমলে সিলেটের উন্নয়নের ফিরিস্তি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীত করা হচ্ছে, ওসমানী বিমানবন্দর আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। সিলেটে মেট্রোরেল চালু করা যায় কি না সে জন্য সমীক্ষা চলছে। সুরমা নদীর খনন শুরু হয়েছে। সিলেটে যেভাবে আমরা উন্নয়ন করেছি, আমাদের প্রতিটি লক্ষ্য পূর্ন করেছি।
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাধারন সম্পাদক জাকির আহমদ ও জেলা কমিটির সাধারন সম্পাদক নাসির উদ্দিন খানের সঞ্চালনয়ায় জনসভায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কথা বলেছিলাম। তা করেছি। এখন আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবো। আবার নির্বাচিত হলে আধুনিক প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন বাংলাদেশ গড়ে তুলবো।
তিনি বলেন, ৮১ সালে দেশে ফিরে সিলেটে জনসভার মাধ্যমেই রাজনীতি শুরু করি। এরপর থেকে সবসময়ই সিলেটে আসি। এবারও সিলেট থেকে নির্বাচনী প্রচার শুরু করলাম।
বেলা দুইটায় জনসভা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও দুপুরের আগেই কানায় কানায় পূর্ন হয়ে যায় জনসভাস্থল। বিভাগের বিভিন্ন স্থান থেকে দলে দলে মিছিল নিয়ে আসতে থাকেন নেতাকর্মীরা। নানান সাজে সজ্জিত হয়ে আসেন তারা। সকাল থেকেই নগরের সব পথ এসে মিশে মাদ্রাসা মাঠে। নির্ধারিত সময়ের আগেই শুরু হয় সমাবেশ। আর প্রধানমন্ত্রী জনসভাস্থলে আসেন ৩ টা ৯ মিনিটে।
এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও সড়ক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি এখন কোথায়? কোথায় আছে?- পালিয়ে গেছে। তারা বলেছিলো, ২৭ অক্টোবরের পর শেখ হাসিনা পালিয়ে যাবে। এখন তারাই পালিয়ে গেছে। বিএনপিকে জনগন লাল কার্ড দেখিয়ে দিয়েছে। বিএনপি খেলায় নাই। খেলায় আছে ১৮৯৬ জন। ৭ তারিখ তারা খেলবে।
কাদের বলেন, বিএনপি ভুয়া। তাদের ধর্মঘট, হরতাল, রাজনীতি সব ভুয়া। তাদের বাংলাদেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র রুখতে হবে। বিএনপি নেতারা মানুষ নয়, মানুষের নামে জানোয়ার। এরা থাকলে গনতন্ত্র থাকবে না, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি থাকবে না, শান্তি থাকবে না। এদের বাংলাদেশ থেকে নিশ্চিহ্ন করতে হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বলেন, আগামীতে ক্ষমতায় গেলে সিলেটে শহর রক্ষা বাঁধ হবে। সিলেটে রেলওয়ের উন্নয়ন হবে। ইতোমধ্যে এব্যাপারে প্রকল্প উন্নয়ন গেছে।
তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে প্রধানমন্ত্রী দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করেছেন। এ কারনে দেশের উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। এই শান্তি ও স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে হবে। এজন্য শেখ হাসিনা সরকার বারবার দরকার।
মন্ত্রী বলেন, আমার বড় ভাই আবুল মাল আব্দুল মুহিত যেভাবে সততা ও নিষ্টার সাথে কাজ করে গেছেন, আমিও তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে জনগনের কল্যানে কাজ করতে চাই। শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে চাই।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি বলেন, নৌকা জয়ী হলে, মানুষ জয়ী হয়, দেশ জয়ী হয়। তাই সিলেটের মানুষ নৌকাকে জয়ী করতে কখনোই ভুল করবেন না। আর নৌকা জয়ী হলে ডিজিটাল বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ।
পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের আমলে দেশে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। সুনামগঞ্জের চেহারা বদলে গেছে। নেত্রকোনার সাথে সুনামগঞ্জের রেল যোগাযোগ স্থাপিত করা হবে।
প্রবাসী কল্যান ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, একদল নির্বাচনকে বানচাল করতে জ্বালাও পুড়াও করছে। মানুষ হত্যা করছে। আমরা জ্বালাও পুড়াওয়ের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। জনগনের ক্ষমতায় বিশ্বাস করি। তাই নির্বাচনে এসেছি।
তিনি বলেন, সিলেট বন্যাপ্রবন এলাকা। তাই বন্যা মোকাবেলায় একটি বিশেষ প্রকল্প এবং পরিবেশবান্ধব উপায়ে সিলেটের কোয়ারিগুলো থেকে সীমিত আকারে পাথর উত্তোলনের দাবি জানান তিনি।
জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা জেবুন্নেছা হক, আওয়ামী লীগের উপদেষ্ঠা মন্ডলীর সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ, ইনাম আহমদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদেল, কার্যকরী কমিটির সদস্য আজিজুস সামাদ ডন, মুশিকুর রহমান, সুজিত রায় নন্দী, সিলেট সিটি মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী প্রমুখ।
এর আগে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচার শুরু করতে সকাল সাড়ে ১১ টায় তসিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় তাকে অভ্যর্থনা জানান কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ।
এরপর প্রটোকলবিহীন গাড়িতে করে হয়রত শাহজালাল (রহ.) এর মাজার ও হয়রত শাহ পরান (রহ.) এর মাজার জিয়ারত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় তার ছোট বোন শেখ রেহানাসহ দলের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিবারের মতো এবারও সিলেট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের পর বুধবার আবার সিলেটের কোনো জনসভায় বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী। আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্বাচনী সফরের সম্পূর্ণ খরচ বহন করে তার দল।