পরিকল্পনামন্ত্রীর কোটি টাকার গাড়ি থাকলেও নেই নিজের বাড়ি
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ৬:৪৮ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্কঃ
সুনামগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের আয় ও স্থাবর সম্পদ কমলেও বেড়েছে অস্থাবর সম্পদ। তাঁর স্ত্রীর সম্পদও বেড়েছে প্রায় কোটি টাকার। সাবেক এই আমলা পাঁচ বছর আগে অর্ধকোটি টাকার জিপে চড়লেও এখন চড়েন ১ কোটি ১০ লাখ ৬৩ হাজার ৯৬৬ টাকার জিপ গাড়িতে। বর্তমানে এমএ মান্নানের কাছে নগদ ৩৪ লাখ ৪৩ হাজার ৫১ টাকা রয়েছে। ২০০৮ সালে যেখানে ছিল মাত্র ২০ হাজার টাকা।
নির্বাচনে অংশ নিতে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে এমএ মান্নানের দাখিল করা হলফনামা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
হলফনামা বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, গত ১৫ বছরে এমএ মান্নানের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জমা টাকাও বেড়েছে ১১ গুণ। বর্তমানে তার ব্যাংকে আছে ১ কোটি ১০ লাখ ৭৯ হাজার ৪২৮ টাকা। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ব্যাংকে ছিল ১০ লাখ টাকা। বর্তমানে পোস্টাল, সেভিংস ও সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্রের বা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ আছে ৬০ লাখ টাকা। অন্যান্য (আইসিবি, এ.এম.সি.এল ইউনিট ফান্ড) খাতে আছে ১৫ লাখ ১ হাজার ৫৬০ টাকা।
এছাড়াও গাড়ি, আসবাবপত্র, ইলেকট্রনিক সামগ্রী ইত্যাদিসহ দ্বাদশ নির্বাচনের হলফনামায় পরিকল্পনামন্ত্রী ৩ কোটি ৩৩ লাখ ৮৮ হাজার ৫ টাকার অস্থাবর সম্পত্তির তথ্য দিয়েছেন। ২০০৮ সালে যেখানে তার মোট অস্থাবর সম্পদ ছিল ৬৪ লাখ ২০ হাজার টাকা। এমপি হওয়ার পর ১৫ বছরে তার অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ৫ গুণ।
২০০৮ সালে মন্ত্রীর মোট স্থাবর সম্পদ ছিল ৫.৩২ একরের কৃষি জমি, ১৩ শতক পুকুর, ৩টি আধাপাকা টিনশেড ঘর, ০.৪২ একরের বাড়ি, ঢাকার নিকুঞ্জ ও আশুলিয়ায় ৭ শতক জায়গা। ২০২৩ সালে এসে সামান্য কৃষি জমি বেড়ে হয়েছে ৫.৩৪ একর। যে তিনটি টিনশেড আধাপাকা বাড়ি ছিল তা দান করে দেওয়ায় পরিকল্পনামন্ত্রীর আর কোনো বাড়ি নেই। ঢাকার নিকুঞ্জের ৩ শতক জমি বিক্রি করে দেওয়ায় বাকি আছে শুধু আশুলিয়ার ৪ শতক জায়গা।
২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমএ মান্নানের নগদ টাকা ছিল ২০ হাজার, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ছিল ১০ লাখ টাকা। পোস্টাল, সেভিংস ও সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র বা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ ছিল ৩৭ লাখ টাকা। সেখানে তিনি আয়ের উৎস দেখিয়েছিলেন কৃষিখাত থেকে বাৎসরিক ৮০ হাজার টাকা এবং শেয়ার, সঞ্চয়পত্র/ব্যাংক আমানত থেকে ৩৭ লাখ টাকা।
২০১৩ সালে সালে নগদ টাকা বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ছিল ৪০ লাখ ৮ হাজার ৯৮৬ টাকা। বন্ড ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জে ১৯ লাখ টাকা। আয়ের উৎস ছিল সংসদ সদস্য হিসবে বাৎসরিক ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা, বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্ট/দোকান ভাড়া ২ লাখ ৬৩ হাজার ৭১২ টাকা, শেয়ার ও সঞ্চয়পত্র/ব্যাংক আমানত থেকে ২ লাখ ৫৪ হাজার ৪৬৭ টাকা।
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এম এ মান্নানের নগদ টাকা বেড়ে দাঁড়ায় ৩ লাখ ৬১ হাজার ৮৬৪ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ছিল ৫৫ লাখ ৩৫ হাজার ৮০২ টাকা। পোস্টাল, সেভিংস ও সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্রের বা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ ছিল ৬৯ লাখ টাকা। আয়ের উৎস ছিল পেশা ( অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য) হিসেবে ১১ লাখ ৪ হাজার, বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্ট/দোকান বা অন্যান্য ভাড়া থেকে ৩ লাখ ৯৬ হাজার ২৮০ টাকা, শেয়ার ও সঞ্চয়পত্র থেকে ৭ লাখ ৭৯ হাজার ৬২২ টাকা এবং অন্যান্য থেকে ১ লাখ ৭৪ হাজার টাকা ৷
হলফনামার তথ্যের বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, হলফনামায় ছোটখাটো ভুল থাকলেও থাকতে পারে। তবে গেল ১৫ বছরে বেতন বহির্ভূত উল্লেখ করার মতো আমার কোনো আয় ছিল না। নিজের পৈতৃক ভিটায় আমার যে অংশ ছিল, সেটি সরকারকে দান করেছি।
তিনি বলেন, শান্তিগঞ্জের যে বাড়িতে আছি, এটি আমার ছেলে ও স্ত্রী কিনেছেন। ওখানে টিনশেডের বাড়ি করা হয়েছে। রাজধানীর নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকায় ৩ শতক জমি ছিল, সেটি বিক্রি করে পূর্বাচলে ১০ শতক জমি কেনা হয়েছে। এটি আমার ছেলে—মেয়ের নামে রেজিস্ট্রি করে দেওয়া হয়েছে। এমপি হওয়ার আগে কর্মজীবনে আশুলিয়ায় কেনা চার শতক জমি ছাড়া রাজধানীতে আমার কোনো সম্পদ নেই। বাড়িতে কিছু বোরো জমি আছে, ওই জমি থেকে কোনো ধান পাই না।
প্রসঙ্গত, সুনামগঞ্জ-৩ আসনে পরিকল্পনামন্ত্রীর সঙ্গে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী, জাকের পার্টির মো. নজরুল ইসলাম, জাতীয় পার্টির তৌফিক আলী মিনার, জাতীয় গণফ্রন্টের তালুকদার মকবুল হোসেন।