নাটকীয়তার যে অপেক্ষা সিলেটে
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ৯:৪৮ পূর্বাহ্ণ
ভোটে স্টাইল কী হবে- এনিয়ে ভোটারদের আগ্রহের কমতি নেই। জোট-মহাজোট নিয়ে তো হিসাব আছে। জাতীয় পার্টির সঙ্গে বোঝাপড়া কেমন হবে-সেটিরও অপেক্ষা চলছে। এই অবস্থায় সিলেটের ৬টি আসন নিয়ে ভোটের মাঠে জল্পনার অন্ত নেই। শঙ্কায় আছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাও। কার তরী ভাসবে, কার ডুববে; সেটি নিয়ে নানা বিশ্লেষণ চলছে। সিলেট-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আল্লামা ফুলতলী (রহ.)’র ছোটো ছেলে ও আল ইসলাহ’র সভাপতি মাওলানা হুসাম উদ্দিন আহমদ চৌধুরী মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। তিনি মাদ্রাসা শিক্ষায় স্বতন্ত্র কারিকুলাম সংক্রান্ত বেশকিছু দাবি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উত্থাপন করেছেন। তার এই সাক্ষাৎপর্ব নিয়ে সিলেটের ভোটের মাঠে নতুন করে হিসাব-নিকাশ শুরু হয়েছে। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ।
মনোনয়ন দাখিলের পর তিনি ভোটের মাঠে সক্রিয় পদচারণা করছেন। এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ড. আহমদ আল কবির। তিনি সিলেটের মন্ত্রী পরিবারের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। এলাকায়ও রয়েছে পরিচিতি। ফলে নতুন করে আলোচনায় এসেছে এ আসনটি। সংগঠনের সভাপতি স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও সিলেট অঞ্চলে আল ইসলাহ’র ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। প্রতিটি আসনেই তাদের ভক্ত ও মুরিদানের সংখ্যাও বেশি। এর বাইরে জকিগঞ্জে রয়েছে আল ইসলাহ’র ভোট ব্যাংক। ইউনিয়ন নির্বাচন, উপজেলা নির্বাচনে আল ইসলাহ’র প্রার্থীরা চমক দেখিয়ে যাচ্ছেন। কানাইঘাটে তাদের অবস্থান ততটা শক্তিশালী নয়। ওই উপজেলায় কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক ভোট ব্যাংক বেশি। অবশ্য হুসাম উদ্দিন চৌধুরী সেই ব্যাংকে ভাগ বসাতে ইতিমধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছেন। তিনি গত সোমবার কানাইঘাট দারুল উলুম মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা আল্লামা মশাহিদ বাইয়ূমপুরীর কবর জিয়ারত করেছেন। এরপর থেকে মাদ্রাসাকেন্দ্রিক ভোট এ আসনে এক হওয়ার আভাস মিলছে। সিলেট-৬ (গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার) আসনেও অপেক্ষা করছে নাটকীয়তা। ইতিমধ্যে আসন নিয়ে হিসাব-নিকাষ শুরু হয়েছে। এ আসনে প্রার্থী তৃণমূল বিএনপি’র চেয়ারপারসন শমসের মবিন চৌধুরী। আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রবীণ রাজনীতিক ও সাবেক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। স্বতন্ত্র হয়েছেন কানাডা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সরওয়ার হোসেন। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচনে নেমেছেন সাবেক এমপি সেলিম উদ্দিন। হেভিওয়েট প্রার্থীদের আসন এটি। তৃণমূল বিএনপি’র সভাপতি শমসের মবিন চৌধুরী প্রার্থী হওয়ায় আসনটি এখন আলোচনায়। কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে এ আসনে; এরইমধ্যে আভাস মিলেছে। দলের হেভিওয়েট প্রার্থীরা সরে যেতে পারেন নির্বাচন থেকে। তবে; আওয়ামী লীগ এ আসনে এবার মরণ কামড় দিতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে নুরুল ইসলাম নাহিদের পক্ষে শোডাউন দিয়ে ভোটার মহলে তার অবস্থান জানান দেয়া হচ্ছে। গতকাল জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের নেতৃত্বে গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা হয়েছে। এই সভায় আওয়ামী লীগের নেতারা ফের নাহিদকে বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছেন। এ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী নাহিদের গলার কাঁটা স্বতন্ত্র প্রার্থী সরওয়ার হোসেন।
দুটি উপজেলা কমিটি, পৌর কমিটির বাইরে মাঠপর্যায়ের নেতারা সরওয়ারের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। সরওয়ার প্রার্থী হওয়ায় আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক বিভক্ত হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় নেতারা। সেক্ষেত্রে তৃণমূল বিএনপি’র প্রার্থীর অবস্থান আরও শক্তিশালী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নানা মেরুকরণের মধ্যদিয়ে যাচ্ছে এ আসনের ভোটের হিসাব। কখন কী ঘটে- সেটি এখনই বলা মুশকিল বলে জানিয়েছেন ভোটাররা। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী সরওয়ার হোসেন জানিয়েছেন- তিনি ওয়ান ইলেভেন থেকে মাঠে রয়েছেন। নৌকা না পাওয়া তার জীবনের বড় অপ্রাপ্তি হলেও এবার এলাকার মানুষের মতামতের ভিত্তিতেই তিনি প্রার্থী হয়েছেন। ফলে মানুষ তাকে হতাশ করবে না বলে আশাবাদ তার। যদি জাতীয় পার্টির সঙ্গে বোঝাপড়া করতে হয় তাহলে সিলেট-৩ অথবা সিলেট-২ আসনটি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। সেক্ষেত্রে সিলেট-৩ আসনের বর্তমান এমপি হাবিবুর রহমান ও সিলেট-২ আসনের সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরীর কপাল পুড়তে পারে। জাতীয় পার্টির নেতাদের মতে; তাদের পছন্দের আসন হচ্ছে সিলেট-৩। এ আসনে তাদের প্রার্থী দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুর রহমান আতিক।
তিনি ১৯৯১ সাল থেকে প্রতিটি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকলেও এখনো জয়ের দেখা পাননি। বিগত উপ-নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী হয়েছিলেন। সহানুভূতির বিষয়টি এবার কাজ করছে আতিকের ক্ষেত্রে। ২০০৮ সালে একইভাবে সহানুভূতি কাজ করেছিল প্রয়াত এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর বেলাও। এ আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান এমপি হাবিবুর রহমান হাবিব। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী দুলালের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। সিলেট-২ আসনটি এবার দলগতভাবেই ছাড় দিতে চাচ্ছে না আওয়ামী লীগ। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা এবং সিটি মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী এ আসনে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধ রয়েছেন।
এর কারণ হচ্ছে; জোট-মহাজোটের ভাগ-বাটোয়ারায় এ আসটি ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে পরপর দু’বার শরিকদের ছাড় দেয়া হয়েছে। এরফলে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী দুর্গ এ আসনটিতে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। উন্নয়নেও পিছিয়ে যাচ্ছে। ফলে আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা এবার এ আসন ছাড় দিতে নারাজ। জাতীয় পার্টি থেকে এবার এ আসনে প্রার্থী হয়েছেন সাবেক এমপি ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া। গত দুই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে বাইরে রেখে তাকে মনোয়ন দেয়া হয়। গত নির্বাচনে ভোটের হিসাবে প্রার্থীদের মধ্যে এহিয়ার অবস্থান ছিল চতুর্থ। ফলে এহিয়াকে নিয়ে শেষ নির্বাচনে বাজি ধরে হেরেছিল আওয়ামী লীগ। এ কারণে এবার আওয়ামী লীগ তাদের নিজস্ব প্রার্থীকে নিয়ে ভোটের মাঠে লড়াইয়ে নামছে। বিভেদ ভুলে তৃণমূলও ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। মাঠে থাকছে জাতীয় পার্টিও।