কৃষি কাজে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষকরা
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৭ অপরাহ্ণ
বিয়ানীবাজার সংবাদদাতা ::
প্রবাসমুখীতা, কৃষি উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি ও শ্রমিক সংকট প্রভৃতি কারণে বিয়ানীবাজারে পেশা ছাড়ছেন কৃষকরা। উপজেলায় ১০ বছরের ব্যবধানে আশঙ্কাজনক হারে কমেছে কৃষকের সংখ্যা। অবকাঠামো উন্নয়নের কারণে কৃষিজমি কমে যাওয়া, বীজ ও সারে আমদানি নির্ভরতার কারণে দামের অস্থিরতা প্রভৃতি কারণে কৃষিতে আগ্রহ কমছে স্থানীয় কৃষকদের। সূত্র জানায়, ১০ বছরে বিয়ানীবাজার উপজেলায় ৩৭ দশমিক ৯১ শতাংশ কৃষিশ্রমিক কমেছে। কৃষক কমেছে ৯ দশমিক ১২ শতাংশ। এক্ষেত্রে শুধু কৃষিতেই শ্রমিক কমেছে। তবে সেবা খাতে শ্রমিক বেড়েছে।
স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তা লোকমান হেকিম জানান, উপজেলায় প্রায় ১২ হাজার কৃষক রয়েছেন। তবে কাগুজে এই হিসাবের সাথে পুরোপুরি সম্মত হতে পারেননি কৃষি কর্মকর্তা নিজেই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পেশাদার কৃষকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমছে, বাড়ছে শৌখিন কৃষকের সংখ্যা। কৃষিবিদরা মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তন,কৃষিক্ষেত্রে যান্ত্রিকীকরণ এসব কারণে কৃষিতে আগ্রহ কমছে চাষিদের। বৈশ্বিক একটি প্রথাকে বড় কারণ হিসেবে দেখছেন তারা। সেটি হলো, বাবা কৃষিকাজ করলেও সন্তানরা প্রতিষ্ঠিত হয়ে আর কৃষিতে ফিরতে চান না। মানুষ যত বেশি শিক্ষিত হচ্ছেন তত বেশি কৃষিবিমুখ হচ্ছেন। আর বিয়ানীবাজারের তরুনরা প্রবাসগামী হওয়ায় নতুন প্রজন্মের কেউ এই পেশায় জড়াতে চায়না। কৃষি প্রধান পরিবারের সন্তানরা বিদেশ পাড়ি দেয়ার পরই পরিবারের অপর সদস্যদের কৃষি কাজে না জড়ানোর উৎসাহ দেয়। এতে পেশাগতভাবে যারা কৃষি কাজের সাথে জড়িত তারা এই পেশা ছাড়ছেন। উপজেলায় কৃষিজমিতে দিন দিন স্থাপনা নির্মানের হার বেড়েই চলছে। এতে কৃষকরা জমি হারিয়ে ভিন্ন পেশায় ঝুঁকছেন। কৃষকরা পেশা ছেড়ে দেওয়ার ব্যাখ্যায় যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী প্রকৌশলী (বর্তমানে দেশে অবস্থানরত) খাসা গ্রামের কামাল আহমদ জানান, ‘অনেক কারণ। তারা কৃষি ছেড়ে অন্য পেশায় যাচ্ছেন। একসময় কৃষি সম্ভাবনাময় পেশা ছিল। বর্তমান সরকার কৃষির যান্ত্রিকীকরণে অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। আগে আগাছা পরিষ্কারে ১০ জন লোক লাগত, এখন লাগে দুই-একজন; ধান মাড়াইয়ে যেখানে ১০ জন লাগত, এখন এক বা দুজন তা করেন মেশিনে। কৃষির যান্ত্রিকীকরণ কৃষিতে কৃষকদের সংশ্লিষ্টতা কমিয়েছে। তারা অন্য পেশায় চলে গেছেন বা যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, ‘কৃষকের ছেলে কৃষিতে আসতে চান না, তারা এখন এটিকে সম্মানজনক পেশা মনে করেন না। যারা কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি পার হয়েছেন বা এসএসসি পাস করেছেন তারা আর কৃষিতে থাকতে চান না। প্রয়োজনে বিদেশে গিয়ে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন।
সারোপার গ্রামের কৃষক পরিবারের সন্তান হাফিজুর রহমান জানান, তাদের ৩ ভাই কৃষি কাজ করতেন। এখন দু’জন প্রবাসে চলে যাওয়ায় কেউ আর কৃষিকাজে আগ্রহী নয়।
উপজেলা কমিউনিষ্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান বলেন, কৃষিবিমুখ হয়ে কেউ যদি বেকারত্ব বাড়ান সেটি কৃষির জন্য ভালো নয়। বরং কৃষিতে থেকে বেকারত্ব কমানো হলে তা ভালো। কৃষির যান্ত্রিকীকরণের প্রয়োজনীয়তাও রয়েছে এবং তা বাড়ছে। দরকার পরিকল্পনার সমন্বয়।
একসময় উপজেলার জলঢুপী আনারস ও কমলা দেশ বিখ্যাত হলেও এখন সেই দিন নেই। হাতেগোনা কয়েকজন শৌখিন ব্যক্তি জলঢুপী আনারস ও কমলা চাষ করছেন। তবে তা বানিজ্যিকরণ করা সম্ভব হয়না।
আরেকটি সূত্র জানায়, পেশাগতভাবে কৃষি কাজের সাথে জড়িতরা ব্যাংকঋণ পায়না। ফলে মৌসুম ভেদে টাকার অভাবেও অনেকে কৃষি পেশা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।