সিলেটের ১৯ আসনে আ.লীগের নৌকার মাঝি হচ্ছেন যারা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ নভেম্বর ২০২৩, ৭:২৩ অপরাহ্ণ
স্টাফ রিপোর্ট:: সিলেটের ১৯টি আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে সৌভাগ্যবান কারা, কারা আছেন শেখ হাসিনার চূড়ান্ত তালিকায়? এটা জানতে সবার কৌতূহলী দৃষ্টি এখন ঢাকায়। এ নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে চলছে চুলচেড়া বিশ্লেষণ।
আজ-কালের মধ্যেই তাদের ভাগ্য নির্ধারণ হওয়ার কথা। যদিও দলের বাছাইকৃত প্রার্থীদের তালিকা রয়েছে দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টেবিলে। যে কারণে সিলেটের মন্ত্রী-এমপিসহ মনোনয়ন প্রত্যাশী আওয়ামী লীগ নেতাদের কেউই মনোনয়ন প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারছেন না। এ কারণে তাদের কর্মী-সমর্থকরাও রয়েছেন ধোঁয়াশায়।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদের তফসিল ঘোষণার পর আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেন সিলেটের ১৭২ প্রার্থী। তাদের কার ভাগ্যে কি লেখা আছে, তা কেবল দলীয় প্রধানের সিদ্ধান্তের পর প্রকাশ হতে পারে। ভাগ্য পরীক্ষার খেলায় কারা উত্তীর্ণ হচ্ছেন তা দেখার অপেক্ষায় এবার ক্ষণ গণনার পালা।
এবার সিলেট বিভাগের চার জেলায় ১৯টি আসনের বিপরীতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন কিনেছেন সিলেট-১ (সিলেট সিটি এলাকা ও সদর উপজেলা) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, আওয়ামী লীগের তিনবারের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজসহ আরও ২ জন। তবে আসনটিতে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে এগিয়ে আছেন ড. মোমেন।
সিলেট-২ (বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরীসহ আরও ৭জন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী। আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে না দিলে শফিকুর রহমান চৌধুরীকেই এগিয়ে রাখছেন নেতাকর্মীরা।
সিলেট-৩ (দক্ষিণসুরমা,ফেঞ্চুগঞ্জ-বালাগঞ্জ) আসনটিও জাতীয় পার্টির সঙ্গে দরকষাকষি চলছে। ফয়সালা না হলে বিএমএর কেন্দ্রীয় মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল, আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ ও বর্তমান সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান, ৩ জনের যে কেউ পেতে পারেন নৌকা। এছাড়াও আরও ৬ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন। তবে প্রধানমন্ত্রীর গুডবুকে আছেন ডা. দুলাল।
সিলেট-৪ (জৈন্তাপুর-গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দলীয় মনোনয়ন জমা দিয়েছেন আরও ৮ জন। এ আসনে নৌকার মনোনয়ন দৌড়ে প্রবীণ ব্যক্তিত্ব মন্ত্রী ইমরানকেই বেছে নিতে পারেন শেখ হাসিনা।
সিলেট-৫ (কানাইঘাট-জকিগঞ্জ) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য হাফিজ আহমদ মজুমদার আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হবেন না বলে আগেই ঘোষণা দেন। এ আসনে দলের মনোনয়ন চেয়েছেন ৭ নেতা। তবে আসনটি শরিক জাতীয় পার্টিকে না দিলে বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন ও ড. আহমদ আল কবীর, যে কেউ দলের টিকিট পেতে পারেন।
সিলেট-৬ (গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার) এ আসনটি তৃণমূল বিএনপির সঙ্গে ভাগাভাগি হলে উন্মোক্ত রাখা হতে পারে। ফলে তৃণমূল বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মোবিন সুবিধা পেতে পারেন আসনটিতে। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে চ্যালেঞ্জ করে নৌকার টিকিট চেয়েছেন ১৩ জন।
সুনামগঞ্জ-১ (জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, ধর্মপাশা, মধ্যনগর) আসনে বিভাগের মধ্যে সর্বাধিক ১৭ জনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতনকেই বেছে নিতে পারে দল।
সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনে এবার আসতে পারে পরিবর্তন। এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সহধর্মিণী ড. জয়া সেন গুপ্তাসহ ১২ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী। এবার আসনটিতে শাল্লা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মাহমুদ (আল আমিন চৌধুরী) পেতে পারেন নৌকার টিকিট।
সুনামগঞ্জ-৩ (জগন্নাথপুর এবং দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানসহ আরও ৩ জন নৌকার টিকিট প্রত্যাশী। এখানে পরিকল্পনামন্ত্রীই ফের নৌকার প্রার্থী, অনেকটা নিশ্চিত নেতাকর্মীরা।
সুনামগঞ্জ-৪ (সদর-বিশ্বম্ভরপুর)এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের টিকিট চেয়েছেন ১০ প্রার্থী। আসনটিতে এবার মূল্যায়িত হতে পারেন দলের জ্যেষ্ঠ নেতা মতিউর রহমান কিংবা পিইসির চেয়ারম্যান ড. সাদিক।
মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা-জুড়ি) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও বন ও পরিবেশ মন্ত্রী শাহাব উদ্দিননের সঙ্গে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইনসহ আরও ৪ জন। তবে এই আসনটিতে পরিবর্তনের ক্ষীণ সম্ভাবনা দেখছেন নেতাকর্মীরা।
মৌলভীবাজার-২ ( কুলাউড়া) আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলসহ ৪ জন চেয়েছেন নৌকা। এরমধ্যে নৌকা প্রতীক উঠতে পারে নাদেলের হাতে। যদি সুলতান মনসুরকে নৌকায় তোলা না হয়।
মৌলভীবাজার-৩ (রাজনগর-সদর) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য নেছার আহমদসহ ৮ জন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। আসনটিতে নেছার আহমদকে এগিয়ে রাখছেন দলের নেতাকর্মীরা।
মৌলভীবাজার-৪ (কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদসহ আরও ৬ জন মনোনয়ন প্রত্যাশীর মধ্যে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য অধ্যাপক রফিকুর রহমানও শক্ত প্রার্থী। যে কারণে দু’জনের যে কাউকে বেছে নিতে পারে দল।
হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ গাজী (মিলাদ গাজী)সহ ৯ জন নৌকার টিকিট প্রত্যাশী। এই আসনটিকে পরিবর্তন হলে ডা. মুশফিক বা কেয়া চৌধুরীর ভাগ্য খুলতে পারে।
হবিগঞ্জ-২ (বানিয়াচং-আজমীরিগঞ্জ) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য এডভোকেট আবদুল মজিদ খানসহ ৯ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন। তবে এই আসনে নতুনরা বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনাই রয়েছে, জানায় দলীয় সূত্র।
হবিগঞ্জ-৩ (সদর, লাখাই ও শায়েস্তাগঞ্জ) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মো. আবু জাহিরসহ ৪ প্রার্থী। এই আসনটিতেও নতুনরা বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য, বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট মো. মাহবুব আলীসহ ৯ মনোনয়ন প্রত্যাশী। তাদের মধ্যে মাহবুব আলী মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছেন। যদিও শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি ব্যারিস্টার সুমন।