নবীগঞ্জে আ.লীগের দু’পক্ষের দফায় দফায় সংঘর্ষ, আহত ১০
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ নভেম্বর ২০২৩, ৯:১৩ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্কঃ
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিলকে স্বাগত জানানোর মিছিলকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় শহরজুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সংঘর্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু সিদ্দিকসহ ১০ জন আহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে নবীগঞ্জ শহরের নতুন বাজার এলাকায় কয়েক দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, বুধবার রাতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিলকে স্বাগত জানিয়ে নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের উদ্যোগে মিছিল বের করা হয়। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে সাধারণ সম্পাদক গতি গোবিন্দ দাশ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুল জাহান চৌধুরীসহ নেতৃবৃন্দ মিছিল ও পথসভা করেন। সে সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু সিদ্দিক ও উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক লোকমান খানসহ আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী মিছিল ও পথসভায় যোগ দেন। পথসভা শেষে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে আবু সিদ্দিক জানতে চান তাদের নামাজে রেখে কেন মিছিল শুরু করা হলো। এ নিয়ে নবীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জাবেদুল আলম চৌধুরী সাজু এবং পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইউপি সদস্য বাবলু আহমদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। পরে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনা মীমাংসা করার জন্য বৃহস্পতিবার সকালে নবীগঞ্জ শহরের শেরপুর রোডে আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মালিক মিয়ার অফিসে সালিশ বৈঠকে বসেন উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। এ সময় জাবেদুল আলম চৌধুরী সাজু ও বাবলু আহমদের বিরোধটি মীমাংসা করে দেওয়া হয়। ঘটনার শেষ পর্যায়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুল জাহান চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ মিলুর মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। এক পর্যায়ে উভয়ের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে উভয়পক্ষের লোকজন দেশি অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু সিদ্দিক (৫৫), পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাবলু মিয়া (৩০), সঞ্জয় দাস (৪০), মিঠু শীল (৩০), সৌরভ তালুকদার (২৫), আনহার আহমদ (৩৫), জিজু মিয়া (৩০), জায়েদ মিয়াসহ (৩২) উভয়ের পক্ষের ১০ জন আহত হন। খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ শহরে অবস্থান নেয়। পরে বাহুবল-নবীগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আবুল খয়ের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এদিকে শহরজুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুল জাহান চৌধুরী বলেন, ‘রাতের বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ বসেন। বিষয়টি মীমাংসাও হয়ে যায়, আমার সঙ্গে কথা বলার একপর্যায়ে মোস্তাক আহমেদ মিলু উতপ্ত বাক্য বিনিময় করে। সে পিস্তল বের করে আমার দিকে তাক করে। এ ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।’
সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ মিলু বলেন, ‘গত বুধবার রাতের ঘটনা মীমাংসার জন্য বসলে সিনিয়র নেতা হিসেবে সিদ্দিক ভাইয়ের সঙ্গে সাজুকে মিলার জন্য বলি। সে সময় সাইফুল জাহান চৌধুরী উচ্ছৃঙ্খল কথাবার্তা বলেন। এ নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।’ পিস্তল বের করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সাইফুল-সাজুর সঙ্গে তো আমার সঙ্গে কোনও ঝামেলা নেই, আমি কেন পিস্তল বের করবো। পিস্তলের বিষয়টি সঠিক নয়।’
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘বুধবার রাতের ঘটনাটি জেলা আওয়ামী লীগের নির্দেশনায় আমিসহ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ বসে সমাধান করে দিই। কিন্তু একপর্যায়ে আমাকে অমান্য করে কিছু নেতা তর্কে জড়িয়ে পড়েন, এরপর ঝামেলার সৃষ্টি হয়। আমি শুনেছি মিলু পিস্তল বের করেছে, তবে দেখিনি।’
নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মো. মাসুক আলী বলেন, ‘বুধবার রাতে তফসিলকে স্বাগত জানিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগ একটি মিছিল বের করে, মিছিলে একটি পক্ষকে রেখে অপর পক্ষ মিছিল করায় বাগবিতণ্ডা হয়। উত্তেজনা ছড়ায়। বৃহস্পতিবার সকালে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ বিষয়টি মীমাংসার জন্য বসেন। পরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আওয়ামী লীগ নেতার পিস্তল বের করার বিষয়টি আমার জানা নেই। বতর্মানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।’
বাহুবল-নবীগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আবুল খয়ের বলেন, ‘আমি খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে উভয়পক্ষকে নিয়ে সমাধানের জন্য চেষ্টা করছি। বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’