বরাদ্দে সন্তুষ্ট নন মেয়র আরিফ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ অক্টোবর ২০২৩, ৪:৫৩ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজঃ
১০ বছরেও অন্তত দেড় হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করেছেন সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। ২০১৩ সালে প্রথম মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর প্রায় ২৭ মাস সরকারের হেফাজতে ছিলেন। তার হিসেবে ৮ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। এই সময়ে বদলে গেছে সিলেট নগরের চেহারা। যদিও তার জমানায় হাজার কোটি টাকার মতো বড় কোনো প্রকল্প আসেনি। এরপরও নগরের জলাবদ্ধতা দূর, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, মডেল সড়ক নির্মাণসহ কয়েকটি প্রকল্প সিলেট নগরের চেহারা বদলে দিয়েছে। এ কারণে এবারের বৃষ্টিপাতে নগরে স্থায়ী কোনো জলাবদ্ধতা হয়নি। কিন্তু এই উন্নয়নেও সন্তুষ্ট নয় আরিফুল হক চৌধুরী নিজেই। প্রকল্প বরাদ্দে আরও টাকা পাওয়া গেলে সিলেটে দৃশ্যমান অনেক উন্নয়ন করা সম্ভব হতো বলে মনে করেন তিনি। এক্ষেত্রে নাগরিক দুর্ভোগও অনেকাংশে কমে যেতো বলে দাবি করেন তিনি।
মেয়র আরিফ সব মিলিয়ে আর এক মাস সিলেট নগরের দায়িত্বে আছেন। এরপর নতুন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন।
আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহেই তার দায়িত্ব হস্তান্তরের কথা। গত বৃহস্পতিবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার প্রস্তুতি নিয়ে নগর ভবনে সংবাদ সম্মেলন ডাকেন মেয়র আরিফ। সেখানে তিনি সিলেটের উন্নয়ন সম্পর্কিত নানা বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করেন। সংবাদ সম্মেলনে মেয়রের মুখ থেকে উঠে এসেছে অনেক কিছু না পাওয়ার কথা। এখনো প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প পাইপলাইনে রয়েছে। যে প্রকল্পগুলো মেয়র আরিফ গত ৫ বছরের মধ্যে বিভিন্ন সময় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছেন। এই প্রকল্পগুলো অনুমোদন না হওয়ায় মনোক্ষুণ্ন্ন তিনি। এর মধ্যে ৩টি প্রকল্পের কথা তিনি উল্লেখ করেছেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য সিলেটে ৪টি নতুন খেলার মাঠ, ৪টি স্থায়ী পশুর হাটের জন্য তিনি প্রায় ১৩০ কোটি টাকার প্রকল্প জমা দিয়েছেন। নগরের বিশুদ্ধ পানির সংকট দূর করতে পানি শোনাধাগার ও পাইপলাইন স্থাপনের জন্য আরও ৮০০ কোটি টাকার প্রকল্প তিনি জমা দেন। বিমানবন্দর এলাকায় এই প্রকল্পের জন্য এরই মধ্যে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এ দুটি প্রকল্পের জন্য সিলেট-১ আসনের এমপি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার ডিও লেটার দিলেও কাজ হয়নি। অথচ এই দুটি প্রকল্পকে বিশেষ অগ্রাধিকারে রেখেছিল সিলেট সিটি করপোরেশন। নগরের বর্ধিত ১৫টি ওয়ার্ডের জন্য প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প দেড় বছর আগে মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়। পরবর্তীতে মন্ত্রণালয় প্রকল্প কাটছাট করে ১২০০ কোটি টাকায় নামিয়ে এনেছে। ফাইল ঘুরে এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ে থাকলেও সেটি ছাড় হচ্ছে না। ফলে অনুমোদনের জন্য প্রকল্পটি এখনো একনেকে ওঠেনি। এদিকে, এই ৩টি প্রকল্পের বাইরে সিলেট সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে আরও অন্তত ৫টি বড় প্রকল্প প্রস্তাবনা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। সিলেট সিটি করপোরেশনের তরফ থেকে সব কাজ শেষ করে সেটি পাঠানো হলেও ঢাকায় ফাইলবন্দি অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে বড় একটি প্রকল্প হচ্ছে নগরের হাসান মার্কেট, সিটি মার্কেটসহ আশপাশ এলাকায় ‘বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স’ নির্মাণ। প্রায় ১৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্প সিলেট নগরের প্রাণকেন্দ্রকে বদলে দেবে বলে জানিয়েছেন নগর কর্মকর্তারা।
এই প্রকল্প নিয়ে নগরের মানুষের কাছে আগ্রহও বেশি। সিটি করপোরেশন সার্বিক প্রস্তাবনা শেষ করে প্রকল্প অনেক আগেই ঢাকায় প্রেরণ করেছে। সিলেট নগরের বর্ধিত অংশসহ গোটা নগরে এলইডি লাইট স্থাপন করতে আড়াইশ’র কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাবনাও ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া নগরের অবকাঠামোগত উন্নয়ন; যেমন কার পার্কিং জোন, গাড়ি স্ট্যান্ড, কাউন্সিলর কার্যালয় স্থাপন, পশুর হাট নির্মাণে জমি অধিগ্রহণের জন্য ১০২২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা সিলেট সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয় প্রেরণ করা হয়। এ প্রকল্পের মাধ্যমে নগরের বিশৃঙ্খল পরিবেশকে সুশৃঙ্খলে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এ কারণে গুরুত্ব দিয়ে প্রকল্পটি ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। সেটিও ফাইলবন্দি অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যায় সিলেট নগরের অর্ধেক এলাকা পানির নিচে ছিল। এতে করে নগরের রাস্তাঘাটের ক্ষয়ক্ষতি এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য ৫২২ কোটি টাকার আরও একটি প্রকল্প প্রেরণ করা হয়েছিল। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বন্যার পরপরই এই প্রকল্পটির প্রস্তাবনা প্রেরণ করা হয়। কিন্তু সেটিও আলোর মুখ দেখেনি।
এ ছাড়া, নতুন অন্তর্ভুক্ত হওয়া ১৫টি ওয়ার্ডের মাস্টারপ্লানের জন্য আরও একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা আকারে প্রেরণ করা হয়েছে। নগর ভবনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে- সব মিলিয়ে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প প্রেরণ করা হয়েছে। এ নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরব ভূমিকা পালন করলেও মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সাড়া দেয়া হয়নি। অথচ গাজীপুর, চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন সিটি করপোরেশনে ৮ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেছেন, বৈষম্য বলেন আর বিমাতাসূলভ আচরণ বলেন, সত্যি হলো সিলেটবাসী কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন প্রকল্প পায়নি। আর প্রকল্প ছাড়ের আগের সিলেট সিটি করপোরেশনের উপর শর্ত দেয়া হয় প্রকল্পের ৩০ ভাগ টাকা নগর ভবনের তহবিল থেকে দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। অথচ দেশের অন্যান্য সিটি করপোরেশন শতভাগ সরকারি বরাদ্দের মাধ্যমে প্রকল্পের কাজ চালিয়েছে। তিনি বলেন, সিলেট সিটি করপোরেশন যে প্রকল্প প্রস্তাবনা দিয়েছে সেগুলো অনুমোদিত হয়ে কাজ হলে নগরের চেহারাই বদলে যেতো। নাগরিক সুবিধাও বাড়তো কয়েকগুণ। জন দুর্ভোগও কমে আসতো।