ছাত্র রাজনীতি কেন টানছে না ছাত্রদের
প্রকাশিত হয়েছে : ৯:৫০:০৭,অপরাহ্ন ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩
দলীয় লেজুড়বৃত্তি ও আদর্শ ছাত্র নেতৃত্ব সামনে না থাকায় ছাত্র রাজনীতির প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে এখনকার তরুণরা। ছাত্র রাজনীতির অতীতের গৌরব এখন কেবল স্মৃতিমাত্র। বর্তমানে যারা ছাত্র রাজনীতিতে জড়াচ্ছেন তাদের একটি অংশ নানা সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন আবার নিয়মিত পড়ালেখা করতে না পেরে অনেকের ক্যারিয়ারই নষ্ট হচ্ছে।
একসময়কার জনপ্রিয় ছাত্র নেতা, বর্তমানে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘বর্তমান সময়ে বিরোধিতার সুযোগ নেই, বিরোধিতার সুযোগ না থাকলে তো গণতন্ত্র থাকে না, রাজনীতিও থাকে না। ছাত্ররা যদি রাজনীতিই না দেখে তাহলে তারা আগ্রহ পাবে কীভাবে!’ তিনি মনে করেন, ছাত্রদের বয়সটাই অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার। পরিস্থিতি বদলালে ছাত্ররাজনীতির চিত্রও বদলাবে।
ছাত্ররাজনীতির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস তুলে ধরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ছাত্ররাজনীতির বর্তমান অবস্থার জন্য একদিকে অভিভাবক হিসেবে রাজনীতিবিদরা যেমন দায়ী, শিক্ষক হিসেবে আমরাও দায়ী। স্বাধীন দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশে ছাত্ররাজনীতির কার্যক্রম কি হবে সে বিষয়ে আমরা ছাত্রদের যথাযথ জ্ঞান দিতে পারছি না।’ তিনি মনে করেন, ছাত্ররাজনীতিতে ছাত্রদের আগ্রহ কমেনি। অনুপ্রবেশকারী দুর্বৃত্তদের নিয়ন্ত্রণ করে এবং শিক্ষার্থীবান্ধব কাজ করার মাধ্যমে ছাত্র রাজনীতির গৌরব ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
ছাত্র সংগঠনের মূল কাজ ছাত্রদের অধিকার আদায় করা, ক্যাম্পাসে পড়াশোনার সুস্থ পরিবেশ তৈরি করা, নবীন শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসের নিয়মনীতি সম্পর্কে জানানো, সাংস্কৃতিক পরিবেশ বজায় রাখা ইত্যাদি। কিন্তু বর্তমানে ছাত্র সংগঠনগুলো এসব থেকে পিছিয়ে যাওয়ায় ছাত্ররা ছাত্ররাজনীতিতে আগ্রহ অনুভব করে না। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজির ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আ: রহমান বলেন, ‘ছাত্ররা ছাত্র সংগঠনের ওপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলছে। কারণ ছাত্র সংগঠনগুলো দলীয় সংগঠন হিসেবে কাজ করে।
অভিভাবকদের কাছেও এটি একটি আতঙ্কের নাম।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান মেজবাউল আলম সওদাগর-এর মতে, ছাত্ররাজনীতিতে ছাত্রদের আগ্রহ কমে যাওয়ার পেছনে দু’টি কারণ রয়েছে। প্রথমত: ছাত্ররাজনীতি ছাত্রদের চাহিদাগুলো যথাযথভাবে পূরণ করতে পারছে না। দ্বিতীয়ত: ছাত্ররা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা অনুভব করে। তিনি বলেন, ‘ছাত্ররাজনীতি ছাত্রদের চাহিদাগুলো যথাযথভাবে পূরণ করতে পারলে এবং রাজনীতির প্রভাব একাডেমিক জীবনে না পড়লে ছাত্রদের আগ্রহ ফিরিয়ে আনা সম্ভব। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া যত বেশি স্বচ্ছ হবে, ছাত্রদের অংশগ্রহণ তত বৃদ্ধি পাবে।’
স্বপ্নের ভার কাঁধে দিয়ে সন্তানদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠায় পরিবার। আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী পরিবারের সন্তানরা রাজকীয়ভাবে পড়ালেখা করে দেশের বাইরে যায় উচ্চশিক্ষার জন্য। আর নিম্নআয়ের পরিবারের সন্তানদের স্বপ্ন থাকে লেখাপড়া শেষ করে দরিদ্র পরিবারের হাল ধরা। কিন্তু ছাত্ররাজনীতির বিষাক্ত ছোবলে অকারণে প্রাণ হারায় বহু মেধাবী শিক্ষার্থী। অনেকে নানা অপকর্মে জড়িয়ে জীবনকে ধ্বংস করে দেয়, বলেছেন স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ-এর ৪র্থবর্ষের শিক্ষার্থী সান্ত্বনা আক্তার স্মৃতি। তিনি মনে করেন, ‘ছাত্রাবস্থায় ছাত্রদের পড়াশোনাই করা উচিত, ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই।’
বর্তমানে আর্দশভিত্তিক ছাত্ররাজনীতির অভাব এবং সরকারি দলের বাইরে অন্য কোনো ছাত্র সংগঠনে জড়িত হলে নানা বাধার সম্মুখীন হওয়ার ঘটনাকে ছাত্ররাজনীতিতে ছাত্রদের আগ্রহ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে দেখছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনার কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্র সংগঠনগুলোর সহাবস্থান নিশ্চিত করা গেলে ছাত্ররাজনীতির প্রতি সাধারণ শিক্ষার্থীদের আগ্রহ সৃষ্টি করা যাবে।