তামিমের সেই বাকি ঘটনাগুলোর সঙ্গেও কি জড়িত পাপন?
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:২১ অপরাহ্ণ
মাঠের খেলার চেয়ে মাঠের বাইরের কর্মকাণ্ডে গত কিছুদিন ধরে উত্তাল ক্রিকেট পাড়া। সেই উত্তাপ আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন তামিম ইকবাল। বিসিবির এক শীর্ষ কর্তার সঙ্গে ফোনে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছিল তামিমের। ইস্যু ছিল বাঁহাতি ওপেনারের ব্যাটিং অর্ডারে পরিবর্তন। যদিও সেই শীর্ষ কর্তার নাম প্রকাশ করেননি। তবে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, তামিমকে ফোন করা ব্যক্তিটি আর কেউ নন, বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন!
বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দল ঘোষণায় চলমান নানা গুঞ্জনের জবাব দিতে বুধবার ভিডিও বার্তায় সব কিছু পরিষ্কার করেছেন তামিম। সাবেক অধিনায়ক জানিয়েছেন, তার সঙ্গে শুধু একবার নয়। বার বার একই ঘটনা ঘটছে। ফলে একটি প্রশ্নই ঘুরে ফিরে আসছে। তাহলে কি বাকি ঘটনাগুলোর হোতাও বোর্ড সভাপতি?
সর্বশেষ ঘটনায় ভিডিও বার্তায় তামিমের কথায় ছিল তেমন ইঙ্গিত, ‘আমার সঙ্গে অনেক কিছু ঘটেছে, সেগুলো আপনারা দেখছেন। একটা ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত হতে পারে। দু’টা ঘটনা ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে। কিন্তু একজনের সঙ্গে শেষ তিন-চার মাসে সাত-আটটা ঘটনা যদি হয় তাহলে এটা উদ্দেশ্যমূলক হয়। এটা আমি অনুভব করি। এর চেয়ে আমার বেশি কিছু বলার নেই।’
বিসিবির এই কর্তা দুই দিন আগে তামিমকে ফোন করে কিছু প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই প্রস্তাব তামিমের কাছে অগ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে। তামিম পাপনের নাম প্রকাশ না করলেও কী আলোচনা হয়েছিল সেই ব্যাপারে কিছুটা ধারণা দিয়েছেন, ‘‘দুই দিন আগে বোর্ডের টপ লেভেল থেকে, যিনি বোর্ডে খুব ইনভলব, আমাকে ফোন করলেন, ‘তুমি তো বিশ্বকাপে যাবা, তোমাকে তো ম্যানেজ করে খেলাতে হবে। তুমি এক কাজ করো, প্রথম ম্যাচ খেলো না।’ আমি বললাম, ভাই, এটা এখনও ১২-১৩ দিনের কথা। আমি তো এর মধ্যে ভালো কন্ডিশনে থাকব। কী কারণে খেলবো না? তখন বললেন, ‘আচ্ছা তুমি যদি খেলোও, আমরা এমন একটা পরিকল্পনা করছি, তুমি যদি খেলো, তাহলে নিচে ব্যাট করাবো।’’
তাতে তামিম ভীষণ উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন। জবাবে বলেছেন, ‘আমি ১৭ বছর ধরে এক পজিশনে ব্যাটিং করেছি। জীবনে কোনওদিন তিন চারে ব্যাটিংই করিনি। স্বাভাবিকভাবেই কথাটা মোটেও ভালোভাবে নেইনি। আমি উত্তেজিত হয়েছিলাম।’
তামিমের উত্তেজিত হওয়ার যথেষ্ট কারণও আছে! এমনিতেই গত কিছুদিন ধরে কঠিন সময় পার করছেন বাঁহাতি ওপেনার। আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ খেলেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায় নিয়েছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীকে কথা দিয়ে আসেন যে, বিশ্বকাপ অবশ্যই খেলবেন। সেখানে সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার কিছু ভূমিকা ছিল। তাকে ডিঙিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তামিমের যাওয়াটা হয়তো পছন্দ হয়নি বোর্ড সভাপতির।
প্রধানমন্ত্রীকে কথা দিয়ে আসার পর তামিম ফেরার প্রক্রিয়ায় ছিলেন। বোর্ড সভাপতিও বেশ কয়েকবার ইন্টারভিউতে বলেছেন, বিশ্বকাপে তামিম যাবেই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ‘খেলাটা’ তিনি খুব ভালো করেই খেললেন! তামিমের এই অসহায়ত্বই বলে দিচ্ছে তিনি কোন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। ক্রিকেট কর্তার কাছে প্রশ্ন রেখে তামিম বলেছেন, ‘আপনারা যদি আসলেই আমাকে চাইতেন তাহলে আমাকে মানসিকভাবে চাঙা ও ফুরফুরে অনুভব করাতেন। কারণ আমি তিন-চার মাস পর খারাপ সময় কাটিয়ে ফিরছি। আমার জন্য খুব কঠিন ছিল তিন-চার মাস। এসে একেকটা নতুন নতুন জিনিস বলা…হয়তো বা সঙ্গে আমি এটাও বলি, এই কথাটাও যদি আমাকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হতো, মেবি আমি জিনিসটাতে অন্যভাবে রিঅ্যাক্ট করতাম, মেবি জিনিসটা মেনে নিতাম হয়তো। কিন্তু হঠাৎ করে কোনও কারণ ছাড়া ফোন করে যদি বলে যে তুমি খেলবা না, আবার যদি খেলো আলোচনা হচ্ছে নিচে ব্যাটিং করাবে। এটা ফেয়ার এনাফ?’
সবকিছু মিলিয়ে তামিম ওই নোংরামির মধ্যে থাকতে চাননি বলেই বিশ্বকাপ দলের সঙ্গী হতে আগ্রহী হননি। বোর্ড সভাপতিকে সেভাবেই বলে দিয়েছিলেন। ভিডিও বার্তাতেও স্পষ্ট করেছেন তামিম। শীর্ষ কর্তাকে উদ্দেশ্যে করে বলেছিলেন, ‘আপনারা একটা কাজ করেন, যদি এমন চিন্তাধারা থাকে, তাহলে আপনারা আমাকে পাঠায়েন না। আমি এই নোংরামির মধ্যে থাকতে চাই না। প্রতিদিন আপনারা আমাকে একেকটা নতুন জিনিস ফেস করাবেন, আমি এই জিনিসগুলোয় থাকতে চাই না।’