সিলেট নগর বিএনপিতে হঠাৎ কম্পন
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৬:৪৯ অপরাহ্ণ
ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল রোডমার্চের আগের রাতে। ওইদিন বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুন্নবী খান সোহেল সিলেট এসেছিলেন। রোডমার্চের সমাবেশস্থলের মাঠ পরিদর্শনে যান। সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয় ও সিলেট বিএনপি’র নেতারা। বিষয়টি জানানো হয়নি ক’দিন আগে চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পদে অধিষ্ঠিত হওয়া মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে। এতে সিলেট বিএনপি’র নেতাদের উপর ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন মেয়র। সঙ্গে তার বলয়ের শীর্ষ নেতারাও বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ ঝাড়েন। ঘটনার ইতি ঘটে ওখানেই। ঘটনা আঁড়ালেই থেকে যায়। সিলেট বিএনপি’র নেতারাও বিষয়টি নিয়ে নীরব থাকেন।
কিন্তু রোববার রাতে হঠাৎ করেই সিলেট নগর বিএনপি’র তরফ থেকে সিনিয়র বিএনপি নেতা সালেহ আহমদ খসরু ও সাবেক কাউন্সিলর দিনার খান হাসুকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে জানিয়ে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। এই বিজ্ঞপ্তি নিয়ে তোলপাড় হচ্ছে সিলেট বিএনপিতে। কারণ সালেহ আহমদ খসরু ও দিনার খান হাসু হচ্ছেন সিলেটে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলয়ের নেতা। মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনোনীত হওয়ায় তাদের দু’জনের নেতৃত্বে নগরের বিজয় মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছিল। সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি’র বর্তমান দায়িত্বশীল নেতারা চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা মুক্তাদির বলয়ের নেতা বলে পরিচিত। ফলে এই বহিষ্কারাদেশের মধ্যদিয়ে সিলেট বিএনপিতে দৃশ্যমানভাবে কোন্দলে জড়ালো বিএনপি- এমনটি মনে করছেন বিএনপি’র অনেক নেতা। রোববার রাতে সিলেট মহানগর বিএনপি’র সভাপতি নাসিম হোসাইন ও সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নগরের ৫নং ওয়ার্ড বিএনপি’র ৪৯নং নির্বাহী সদস্য সালেহ আহমদ খসরু এবং ১৯নং ওয়ার্ড বিএনপি’র ৪২নং নির্বাহী সদস্য দিনার খান হাসুকে বিএনপি থেকে সাময়িক বহিষ্কারের কথা জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত বৃহস্পতিবার ভৈরব থেকে শুরু হওয়া রোডমার্চের শেষ জনসভা ঐতিহাসিক আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। ওই জনসভার পূর্বের দিন অর্থাৎ ২০শে সেপ্টেম্বর রাতে রোডমার্চের দল নেতা ও বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুন্নবী খান সোহেল ঐতিহাসিক আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ পরিদর্শনে আসেন। এ সময় জেলা ও মহানগর বিএনপি’র দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের মাঠ পরিদর্শন শেষে কোনো কারণ ছাড়া দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দের সহিত তারা অশোভন আচরণ করেন। যা দলীয় শৃঙ্খলার পরিপন্থি এবং এতে প্রতীয়মান হয় যে, আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের জনসভার আয়োজনটি বিঘ্নিত করার উদ্দেশ্য ছিল। এই কার্যকলাপে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে আপনাকে সকল পর্যায়ের পদ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে কেন আপনাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের সুপারিশ করা হবে না তা আগামী ৭ দিনের মধ্যে আপনার সপক্ষের বক্তব্য থাকলে নিম্ন স্বাক্ষরকারী মহানগর বিএনপি’র সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবরে প্রেরণ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। পত্রে জানানো হয়, মহানগর বিএনপি’র সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত সাময়িক বহিষ্কারের চিঠি সালেহ আহমদ খসরু ও দিনার খান হাসুর নিকট প্রেরণ করা হয়েছে। একইসঙ্গে অনুলিপি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বরাবরে প্রেরণ করা হয়েছে।
নগর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী জানিয়েছেন, ওইদিন আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে দু’নেতা দৃষ্টিকটু আচরণ করেছেন। এটা দলের ভেতরে শৃঙ্খলা পরিপন্থিও। তিনি জানান, সাময়িক বহিষ্কারাদেশ পাওয়া দু’নেতার কাছে ইতিমধ্যে পত্র পাঠানো হয়েছে। এদিকে নগর বিএনপি’র এই বহিষ্কারাদেশ ও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হওয়ার পর সিলেট বিএনপিতে তোলপাড় হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ভাবছেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীও।
গতকাল এ নিয়ে তার সঙ্গে বলয়ের নেতারা দেখা করে সার্বিক বিষয় অবগত করেছেন। বিএনপি’র নেতারা জানিয়েছেন, যুদ্ধের ময়দানে থাকা বিএনপি’র নেতাকর্মীদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ দলকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এতে করে দল শক্তি সঞ্চয়ের চেয়ে দুর্বল হবে। তারা বলেন, আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে ওইদিন শীর্ষ নেতারাও তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন। এ কারণে উপস্থিত থাকা কেন্দ্রীয় নেতারাও বিব্রত হন। সাময়িক বহিষ্কারাদেশ পাওয়া নগর বিএনপি’র সিনিয়র নেতা সালেহ আহমদ খসরু মানবজমিনকে জানিয়েছেন, অবাক বিস্ময়ে আমি গণমাধ্যমে দেখলাম আমাদের সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। এখনো আমাকে কিছুই জানানো হয়নি। কেন বহিষ্কার করা হয়েছে সে ব্যাপারে কিছুই জানি না। সিলেট বিএনপি যখন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে আন্দোলনে তখন এই বহিষ্কারাদেশ প্রশ্নবিদ্ধ। বিধি মোতাবেক হচ্ছে কিনা তা ভাবার বিষয়। তিনি বলেন, জাতির উপর চেপে বসা সরকারকে হঠাতে আন্দোলনে আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি। কোনো অপশক্তি আমাদের গন্তব্যে পৌঁছা ঠেকাতে পারবে না।