নিবিড় পর্যবেক্ষণে খালেদা জিয়া
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:১০ অপরাহ্ণ
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে শ্বাসকষ্ট শুরু হলে দ্রুত তার স্বাস্থ্যের অবনতি হয়।
পরে চিকিৎসকদের পরামর্শে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। সেখানে ফুসফুস থেকে পানি অপসারণ করে দেড় ঘণ্টা পর আবারও কেবিনে নেওয়া হয়। এখন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। এ অবস্থায় দলীয় প্রধানের শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে বিএনপি।
লিভার সিরোসিসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ৭৮ বছর বয়সি সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর জীবন রক্ষার্থে মানবিক কারণে দ্রুত বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর দাবি জানিয়েছে দলটি।
শুক্রবার উত্তরায় এক সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘দেশনেত্রী খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। অবস্থা সংকটজনক। এ সরকারের আজ্ঞাবহ বিচার বিভাগ মিথ্যা মামলায় তাকে সাজা দিয়ে ৫ বছর আগে কারারুদ্ধ করেছিল। এরপর তাকে গৃহবন্দি রেখে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। শর্ত দিয়েছে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে পারবেন না। চিকিৎসা ব্যবস্থা একজন নাগরিকের মৌলিক অধিকার। কারাগারে থাকলেও সব বন্দিকে চিকিৎসা দিতে হবে। তার চিকিৎসকরা ও দলের পক্ষ থেকে বলেছি, মানবিক কারণে চিকিৎসার স্বার্থে বিদেশে উন্নত হাসপাতালে পাঠানো হোক। পরিষ্কার করে বলতে চাই, দেশনেত্রীর যদি সুচিকিৎসা না হয়, উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো না হয় তাহলে যে কোনো দুর্ঘটনার জন্য শেখ হাসিনার সরকার দায়ী থাকবে, জবাব দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘কারাবন্দি অবস্থায় বিদেশে পাঠানোর অনেক নজির আছে। জেএসডি সভাপতি আসম আব্দুর রবকে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছিল। আজকে যিনি জোর করে ক্ষমতায় বসে আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও ওয়ান-ইলেভেনের সময় কানের চিকিৎসার জন্য প্যারোলে আমেরিকায় পাঠানো হয়েছিল। আমরা সে কথা ভুলে যাইনি। আর আজকে দেশনেত্রীর জীবন-মরণের সমস্যা। তার চিকিৎসকরা বলছেন, এখন যে অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে যদি তার সঠিক চিকিৎসা না হয় জীবন বিপন্ন হয়ে যাবে।’
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, খালেদা জিয়া শুধু একজন বন্দি নন, এ দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের এক নম্বর নেত্রী। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর এ দেশের গণতন্ত্রকে হরণ করা হয়েছিল। তা মুক্ত করার জন্য সেদিনকার গৃহবধূ রাস্তায় নেমে এসেছিলেন। খালেদা জিয়ার রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্ক ছিল না। দেশের মানুষের জন্য, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য রাস্তায় নেমেছিলেন। গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে, পথে-প্রান্তরে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন। স্বৈরাচারকে উৎখাত করে ’৯১ সালে জনগণের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, দুবার বিরোধীদলীয় নেত্রী। এখনো কারাগারে থেকেও অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ফ্যাসিস্ট সরকারের সঙ্গে কোনো আপস করেননি।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করে চলেছেন। সবকিছু যদি বাদও দেন তিনি তো একজন মহিলা, স্বামীকে হারিয়েছেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় দুই শিশুপুত্রকে হাতে ধরে নিয়ে পালিয়ে পালিয়ে বেরিয়েছেন। আজকে এ দেশের জন্য ত্যাগ স্বীকারে যদি কেউ থেকে থাকেন তার মধ্যে খালেদা জিয়া এক নম্বর আর দুই নম্বরে তারেক রহমান। নেত্রীকে শুধু প্রতিহিংসার কারণে আটক করে রেখেছে। অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে এ অবস্থায় নিয়ে গেছে। তারা (সরকার) জানে দেশনেত্রী যদি বাইরে বেরিয়ে আসেন তাহলে তার ডাকে কোটি কোটি মানুষ বেরিয়ে আসবে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) লিভার, কিডনি, হার্ট, ফুসফুসসহ সার্বিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে এক পর্যায়ে আবারও সিসিইউতে নিতে হয়। এখন উনি মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। তিনি আরও বলেন, মেডিকেল বোর্ড সর্বসম্মতভাবে বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসনকে অতিদ্রুত বিদেশে লিভার প্রতিস্থাপনে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া জরুরি। তাহলেই তিনি শঙ্কামুক্ত হতে পারেন।
এর আগেও গত ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সে সময় পাঁচ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগে ভুগছেন।