সিলেটে দুই সভাপতি ফের আলোচনায়
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৬:৪৩ অপরাহ্ণ
সিলেটে নির্বাচনকে সামনে রেখে দুই সভাপতি ফের আলোচনায়। এরা হলেন- সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী ও মহানগর সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তারা নতুন করে আলোচনায় এসেছেন। নিজেরাও শুরু করেছেন দৌড়ঝাঁপও। শফিকুর রহমান চৌধুরীর বাড়ি সিলেটের বিশ্বনাথে। সিলেট-২ আসনের সাবেক এমপি। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে তিনি এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর তিনি সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন। তবে- ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর থেকে মাঠের বাইরে শফিকুর রহমান চৌধুরী। এ আসনে বিগত দুই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরিক দল জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিতে হয়েছে।
এ কারণে শফিকুর রহমান চৌধুরী দলের টিকিট পাননি। কিন্তু টিকিট না পেলেও তিনি মাঠ ছাড়েননি। এখনো আসন কেন্দ্রিক রাজনীতিতে তিনি সক্রিয় রয়েছেন। ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসন ভাগাভাগিতে এ আসনে মনোনয়ন পান জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া। ওই নির্বাচনে তিনি এমপি নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী মোকাব্বির খানের কাছে এহিয়া পরাজিত হন। এবারো জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন নিতে দৌড়ঝাঁপ করছেন এহিয়া। তবে- তার ওপর কেন্দ্র নাখোশ। সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে দলীয় প্রার্থীকে রেখে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সভাস্থলে উপস্থিত হওয়ায় কপাল পুড়েছে তার।
জাতীয় পার্টির নেতারা জানিয়েছেন- এরপরও মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছে এহিয়া। নির্বাচনে আগে তিনি দলের ভেতরে সুসংহত অবস্থান তৈরি করে নিতে পারেন। এ আসনে ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচিত হলেও পরবর্তীতে বিএনপি কিংবা শরিকদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখেননি মোকাব্বির খান। এবার আওয়ামী ঘরানার জোট থেকে প্রার্থী হওয়ার গুঞ্জন রয়েছে। ফলে হিসাবনিকাশে বিপর্যস্ত শফিকুর রহমান চৌধুরী। সাবেক এমপি এহিয়া ও বর্তমান এমপি মোকাব্বির খান দু’জনই তার এখন প্রতিপক্ষ। এই অবস্থায় এলাকায় গণসংযোগ বাড়িয়েছেন তিনি। ইতিমধ্যে এলাকায় তার পক্ষে দলীয় নেতারা নেমেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার প্রচারণা চলছে। সিলেটের জকিগঞ্জে বাড়ি মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদের। ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। ২০১৯ সালে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে তাকে মহানগর সভাপতি করা হয়। এতে কিছুটা মনঃক্ষুণ্ন ছিলেন মাসুক। তবে- দলের স্বার্থ বিবেচনা করে তিনি দায়িত্ব পালন করে যান। ২০১৮ সালের নির্বাচনে মাসুক উদ্দিন আহমদ দলীয় ফোরামে সিলেট-৫ আসনে নৌকার টিকিটের জন্য তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেছিলেন। ওই সময় তাকে বাদ দিয়ে নৌকার টিকিট দেয়া হয় হাফিজ আহমদ মজুমদারকে। বর্তমান এমপি হাফিজ আহমদ মজুমদার। মহানগর সভাপতি হলে এলাকা বিচ্ছিন্ন হননি মাসুক উদ্দিন আহমদ। সিলেট মহানগরের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি এলাকায়ও ঘন ঘন যাতায়াত করছেন। চলতি সপ্তাহে সিলেটের নতুন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে নিয়ে এলাকায় অনুষ্ঠান করেছেন। এতে করে নতুন করে এলাকায় আলোচনায় এসেছেন মাসুক উদ্দিন আহমদ। তার ছোটো ভাই আসাদউদ্দিন আহমদ সিলেট নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। সিলেটের সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের সঙ্গে সিটি নির্বাচনে নৌকার টিকিটের জন্য লড়াই করলেও মনোনয়ন পাননি। এখন আসাদ উদ্দিন আহমদ মহানগরের সহ সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। রাজনৈতিক পরিবার হলেও মাসুক উদ্দিন আহমদ কিংবা আসাদ উদ্দিন আহমদ এখনো নৌকার টিকিট পাননি। ফলে এবার টিকিট পেতে মরিয়া মাসুক উদ্দিন আহমদ।
দলীয় নেতারা জানিয়েছেন- হাফিজ আহমদ মজুমদার সিলেট-৫ আসনের এমপি হলেও গত বছরে তিনি এলাকায় খুব কমই যাতায়াত করেছেন। এলাকার রাজনৈতিক নেতারাও তার দেখা পাননি। এই সুযোগে মাসুক উদ্দিন আহমদ এলাকায় সম্পর্ক বাড়িয়েছে। সর্বশেষ মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে সঙ্গে নিয়ে এলাকায় অনুষ্ঠান করায় তার নাম নতুন করে আলোচনায় এসেছে। সিলেট আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন- বিগত তিন টার্ম ধরে সিলেটে দলীয় নেতারা এমপি’র মনোনয়ন পাচ্ছেন না। এতে অনেকেই মনঃক্ষুণ্ন। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য এবার জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের দুই সভাপতিকে নিয়ে দলীয় ফোরামে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামতে যাচ্ছেন নেতারা। বয়োবৃদ্ধ এ দু’নেতার সঙ্গে রয়েছেন সিলেটের বেশির ভাগ আওয়ামী লীগ নেতারা। ফলে নির্বাচনের আগে মাঠ প্রস্তুতিতে তারা দু’জন ঘাম ঝরাচ্ছেন নিজ নিজ এলাকায়।