বাড়ছে ব্যয়, কমছে দাম, মাধবপুরে ৫টি চা বাগান বন্ধ হওয়ার আশংকা
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:৫৭ অপরাহ্ণ
মাধবপুর প্রতিনিধি::
হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার ৫টি চাবাগানের ভবিষ্যৎ নিয়ে বাগান ব্যবস্থাপানা কর্তৃপক্ষ হতাশার মধ্যে পড়েছেন। করোনাকালীন সময়ের পর থেকে গত ৪ বছর ধরে লোকসান টানতে হচ্ছে বাগানগুলাকে। দিন দিন লোকসানের পরিমান বড়েই চলছে।
গত ৪ বছর শ্রমিকের মজুরি, গ্যাস, বিদ্যুৎ, আবাসন খরচ ও ঔষধ সহ বিভিন্ন উৎপাদন খরচ কয়েকগুন বড়ছে। সেই অনুযায়ী চায়ের চাহিদা ও বাজার দর বৃদ্ধি পায়নি। এ অবস্থায় ৫টি চা বাগানের ব্যাংক দেনার পরিমান বড় হচ্ছে। ব্যাংক কতৃপক্ষ এখন ঋণের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে মাধবপুর উপজেলার ৫ টি চাবাগানে লোকসানের মধ্যে পড়ে যে কোন সময় বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। মাধবপুর উপজেলার ৫টি চা বাগানের মধ্যে তেলিয়াপাড়া ও জগদীশপুর ৫১ শতাংশ মালিকা নিয়ে ন্যাশনাল টি কোম্পানী ১২টি চা বাগানের মধ্যে এ দুটি চাবাগানও পরিচালনা করছেন। সুরমা, নোয়াপাড়া ও বৈকন্ঠপুর চাবাগান ব্যাক্তি মালিকানাধীন।
নোয়াপাড়া চা বাগান সূত্রে জানা গেছে, ব্রিটিশ ফিনল কোম্পানী থেকে তৎকালিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী মুর্শেদ খান বাগানটি ক্রয় করে পরিচালনা করে আসছেন।
বাগান কারখানা বর্ধিতকরন সহ নতুন বাগান সৃজন করে চায়ের উৎপাদন বৃদ্ধি করা। গত কয়েক বছর ধরে চা-বাগান প্রাকৃতিক দূর্যোগ বিশেষ করে খরার কারণে উৎপাদন কমে যাওয়ায় তাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। করোনা মহামারির পর থেকে নোয়াপাড়া চা-বাগান উৎপাদিত চায়ের ভাল বাজার না পাওয়ায় লোকসান দিতে হচ্ছে।
২০২২ সালে চা-শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির দাবিতে টানা ১৮দিন বাগান বন্ধের কারণে ওই অর্থ বছর লোকসানের পরিমান আরোও বেড়েছে। তাদের মতে ভারত থেকে চোরাই পথে নিম্মানের চাপাতা বাংলাদেশে প্রবেশর কারন দেশের বাজার চায়ের বাজার দর দিন দিন কমেছে। বৈকন্ঠপুর চাবাগানের ব্যবস্পানায় কর্তৃপক্ষ জানায়, বৈকন্ঠপুর চাবাগানটি একটি ছোট বাগান শ্রমিক সংখ্যা ৪শর মত। আমানত শাহ গ্রুপ ৫/৬ বছর আগে বাগানটির মালিকানা ক্রয় করে বাগানে উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মোটা অংকের টাকা বিনিয়োগ করে। এখন পর্যন্ত ওই বাগান লাভের মুখ দেখেনি। বছর বছর লোকসানের বোঝা টানতে টানতে এক সময় বাগানটি বন্ধ হওয়ার আশংকা রয়েছে। ন্যাশনাল টি কোম্পানীর মালিকানাধীন জগদীশপুর চা-বাগানের অবস্থা ভাল নয়। চা বাগানের ভেতর গত কয়েক বছর ধর চায়ের গাছ মরে যাওয়ায় চায়ের উৎপাদন অনেক কমে গেছে। চায়ের গুনগত মানও তেমন ভাল নয়। নতুন করে পতিত জায়গায় ছোট চা গাছ লাগানোর পর পরিচর্যার অভাবে নতুন বাগান সুফলা হয়নি।
শ্রমিকের মজুরি ১৫০ টাকা থেকে বড় ১৭০ টাকা হওয়ায় বাগান কর্তৃপক্ষকে এখন অতিরিক্ত টাকা দিতে হচ্ছে। একদিকে সব মিলে বাড়ছে উৎপাদন খরচ। কমছে চায়ের উৎপাদন ও বাজার দর। একারনে গত ৮/১০ বছর ধরে লাভের মুখ দেখতে পারছেনা বাগান কর্তৃপক্ষ। এশিয়ার অন্যতম বড় চাবাগান সুরমা। শ্রমিক সংখ্যা ২২শ। ৪ হাজার হেক্টর জমিতে চায়ের চাষাবাদ হচ্ছে। ২০/২৫ বছর আগে বাগানটি অবস্থা তেমন ভাল ছিলনা। কি গত ১৭ বছর ধরে সুরমা চাবাগানের বিশাল এলাকা জুড়ে উচুঁ নিচু ভুমিতে নতুন চা গাছ লাগানোর কারনে বাগান কচি গুনগত চাপাতার উৎপাদন বেড়ে গেছে। একারনে সুরমা চাবাগান কারখানার পরিমান বৃদ্ধি করেছে। ভারত থেকে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ এনে সংযোজন করেছে। বিশাল এই বাগান উৎপাদন খরচের পাশাপাশি চায়ের নিলাম বাজার ভাল দর না পাওয়ায় লোকসানের পরিমান বেড়ে চলছে । করোনাকালিন সময় সারাদেশে লকডাউন থাকার কারন দেশের অবস্থা ভোক্তা পর্যায়ে চায়ের চাহিদা কম যাওয়ায় নিলাম বাজারে চায়ের দাম ছিল খুবই কম। একারন লোকসানের পরিমান আরোও বাড়ছে।
তেলিয়াপাড়া চাবাগানে চায়ের উৎপাদন বাড়লেও বাজার দর ভাল না থাকায় লোকসানের মুখ পড়ছে চাবাগানটি। বৈকন্ঠপুর চা বাগানের ব্যবস্থাপক সামসুল ইসলাম বলেন, লোকসান কাটিয়ে উঠতে সরকারি ভাবে চাবাগান স্বপ্ল সুদে ঋন ও প্রণোদনা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হলে চাবাগান ঘুরে দাড়াতে পারবে।
এছাড়া অবৈধ পথে ভারত থেকে চোরাই চা-পাতা বন্ধসহ সরকারি ভাবে চায়ের বাজার দর নির্ধারণ করে দিলে দেশের অন্যতম চা শিল্প প্রাণ ফিরে পাবে। অন্যতায় সবুজ চা গাছ ও চা শিল্প কালের গর্ভে হারিয়ে যাবে।