সুলতান মনসুর কি আ.লীগে ফিরছেন?
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৫:৫৮ অপরাহ্ণ
দেশের আলোচিত মৌলভীবাজার-২ কুলাউড়া আসনের সংসদ সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ কি আওয়ামী লীগের ফিরছেন। এ নিয়ে সর্বমহলে শুরু হয়েছে নানা গুঞ্জন। শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) ছাত্রলীগের সমাবেশ অনুষ্ঠানে সুলতান মনসুরের উপস্থিতিতে শুরু হয়েছে রাজনীতির নতুন হিসাব-নিকাশ। আগামী সংসদ নির্বাচনে এ আসনে কে হচ্ছেন নৌকার মাঝি এ নিয়ে কানাঘুষা চলছে। সবার ধারণা চমক অপেক্ষা করছে সারা দেশের বহুল প্রত্যাশিত এই আসন নিয়ে। গত সংসদ নির্বাচনে এই আসন নিয়ে সারা দেশে আলোচনার ঝড় বয়েছিল।
বিএনপির সাবেক এমপি এম এম শাহীন বিকল্পধারায় যোগ দিয়ে নৌকা বাগিয়ে নিলেও অপরদিকে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে তিনি ৭৯ হাজার ৭৪২ ভোট পেয়ে সাবেক এমপি এমএম শাহীনকে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হন। চার দশক ধরে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ছিলেন এ আসনে নৌকার কাণ্ডারী। ১৯৯৬ সালে নির্বাচিত হয়ে তিনি কুলাউড়ায় ব্যাপক উন্নয়ন করেন। কিন্তু ২০০৮ সালে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে ২০১০ সাল থেকে রাজনীতিতে ছিলেন একেবারেই নিষ্ক্রিয়। নির্বাচনের সময় ঐক্যফ্রন্টের মূলসারির নেতা হিসেবে তার আবির্ভাব এবং ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করে বাজিমাত করেন।
অপরদিকে ২৫ বছর ধরে এম এম শাহীন কুলাউড়ার বিএনপির হাল ধরেছিলেন শক্ত হাতে। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিতর্কিত নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে এবং ২০০১ সালে বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে ফুটবল প্রতীক নিয়ে সুলতান মনসুরকে পরাজিত করে চমক দেখান এম এম শাহীন। ২০০৮ সালে বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করে হেরে যান মহাজোটের প্রার্থী নওয়াব আলী আব্বাছের কাছে। এর পর থেকে বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় থেকে মামলায় জেলও খেটেছেন। কিন্তু গত নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্ট থেকে সুলতান মনসুরের মনোনয়ন নিশ্চিত করা হলে তিনি মহাজোটের নৌকা প্রতীকের আশায় যোগ দেন বি. চৌধুরীর বিকল্পধারায়। নৌকার নেতা সুলতান ধানে, আর ধানের নেতা শাহীন নৌকায় উঠায় ভোটের সমীকরণ মিলাতে তখন হিমশিম খেতে হচ্ছিল কুলাউড়াবাসীকে। সুলতান বনাম শাহীনের নাম তখন কুলাউড়ার ১৩ ইউনিয়নের আবালবৃদ্ধবনিতাসহ সারা দেশে তখন আলোচনার ঝড় বয়েছিল।
ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচনের বৈতরণী পার হলেও জয়বাংলা জয় বঙ্গবন্ধুকে কখনো ভুলে যাননি সুলতান মনসুর। নির্বাচনকালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য ধানের শীষে ভোট চাইলে বিএনপির নেতাকর্মীরা তার জন্য জানপ্রাণ দিয়ে মাঠে কাজ করেন। নির্বাচনের পর তিনি বলতে শুরু করেন, তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করেন। তিনি আওয়ামী লীগ ছেড়ে যাননি। আওয়ামী লীগেই আছেন। কোথাকার এক মেজর স্বাধীনতার ঘোষণা কীভাবে করে। এদেশে রাজনীতি করতে হলে বঙ্গবন্ধু আদর্শকে মেনে রাজনীতি করতে হবে।
এমপি নির্বাচিত হবার পর স্থায়ীভাবে ঢাকায় বসবাস করতে থাকেন সুলতান মনসুর। মাঝে মধ্যে নির্বাচনী এলাকায় আসেন। জাতীয় এই নেতা আগামী সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক না পেলে নির্বাচন না করার ঘোষণা ইতোমধ্যে দিয়েছেন।
সুলতান মনসুর বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন চাইবো, নৌকা পেলে নির্বাচন করব, না পেলে নীরব থাকব’।
সুলতান মনসুর আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা হলেন দলের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। তিনি মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করব। না দিলে তার সিদ্ধান্ত মেনে নেব। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আমাকে বলা হয়েছিল স্বতন্ত্র নির্বাচন করতে কিন্তু আমি তাতে রাজি হইনি।
শুক্রবার বিকেল তিনটায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সমাবেশ রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব স্মরণে এই সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভাপতিত্ব করেন ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন। সেখানে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুলাউড়া আসনের সাংসদ ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ওই অনুষ্ঠানের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ হলেও দেশ বিদেশে নতুন করে আলোচনার ঝড় ওঠে। সুলতান মনসুর কি আবার আওয়ামী লীগে ফিরছেন। অবশ্য এই আলোচনার সূত্রপাত হয়েছিল গত আগস্ট মাসে লন্ডন থেকে শেখ রেহানার সঙ্গে বিমানে পাশাপাশি বসে ফেরার ছবি প্রকাশ হবার পরেই। সুলতান মনসুর যদি দলে ফেরেন তাহলে নতুন করে আবার এই আসনের হিসাব করতে হবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।