এখন যারা টর্চ দিয়ে নির্বাচন খুঁজছে তখন তারা কোথায় ছিল: প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ আগস্ট ২০২৩, ১১:০১ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্কঃ
আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এখন যারা টর্চ দিয়ে বাংলাদেশে নির্বাচন খুঁজছেন তারা খালেদা জিয়ার ১৫ই ফেব্রুয়ারি মার্কা নির্বাচনের সময় কোথায় ছিলেন।
তিনি বলেন, আমার অবাক লাগে যখন বিএনপি’র মুখে গণতন্ত্রের কথা শুনি। যাদের জন্ম হয়েছে হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে। যাদের যাত্রা শুরু হয়েছে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে। তাদের মুখে গণতন্ত্রের কথা শোভা পায় না। তাদের কিছু প্রভু আছে, তারা একই সঙ্গে সুর মিলায় বাংলাদেশে নাকি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতেই হবে। তাদের কাছে প্রশ্ন, জিয়ার হ্যাঁ-না ভোট, খালেদার ১৫ই ফেব্রুয়ারি মার্কা নির্বাচনের সময় গণতন্ত্র কোথায় ছিল? জিয়া, এরশাদ ও খালেদা জিয়ার নির্বাচন তো আমরা দেখেছি। আজ যারা বাংলাদেশে টর্চলাইট দিয়ে নির্বাচন খুঁজছেন, তখন তারা কোথায় ছিলেন? অন্ধ ছিলেন? তখন তো তাদের সোচ্চার দেখিনি।
বুধবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ১৫ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ১৫ই আগস্ট হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল খুনি মোশ্তাক এবং তার দোসর জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমান এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত না থাকলে, মোশ্তাক কখনোই এটা করতে সাহস পেতো না। করতে পারতো না।
খুনি জিয়া যে জড়িত ছিল এটা সম্পূর্ণভাবে প্রমাণিত। শেখ হাসিনা বলেন, ১৫ই আগস্টের খুনিদের বিচার করা হবে না- এই অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছিল। সে খুনিদের শুধু বিচার থেকে রেহাই দেয়া হয়নি, তাদের পুরস্কৃত করা হয়েছিল। খুনিদের দূতাবাসের চাকরি দেয়া হয়। এই খুনিরা যখন দূতাবাসের চাকরি পায়, অনেক দেশ নেয়নি। এই হত্যাকাণ্ড মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের প্রতিশোধ নেয়া হয়েছিল। পাপ কাউকে ছাড়ে না জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, যেভাবে জিয়াউর রহমান জাতির পিতাকে হত্যা করেছিল, জিয়াকেও একইভাবে খুন হতে হয়েছিল। সেও খুন হয়। তার লাশের কিন্তু খবর নাই। সংসদ ভবনে সেখানে যে কবরটা দেয়া আছে, সেখানে জিয়াউর রহমানের কোনো লাশ নাই। জেনারেল এরশাদ কিন্তু এই কথাটা বলে গেছে। বলেছিল তার লাশ তো পাওয়া যায়নি। কারণ জিয়ার লাশ খালেদা জিয়া দেখে নাই। জিয়ার লাশ তার ছেলে তারেক রহমান দেখে নাই। কোকো দেখে নাই, তার পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন কেউ দেখে নাই। জেনারেল এরশাদ একটি বাক্স এনে জনগণকে ধোঁকা দিয়ে সংসদ ভবনের জায়গায় মাটি দিয়ে রেখে দিয়েছে। সেটাও অবৈধ স্থাপনা। বিএনপি নেতাকর্মীরা সেখানে ফুল দেয়। কাকে দিচ্ছে ফুল তারা কী সেটা জানে? জানে না। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা তো বিচার চেয়ে পাইনি। শেখ রেহানার পাসপোর্টটা পর্যন্ত জিয়া দেয়নি। রেহানা কি এদেশের নাগরিক ছিল না? তার মানবাধিকার ছিল না? তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ রক্ত দিয়ে এদেশের গণতন্ত্র এনেছে। আমাদের হাতে গণতন্ত্র সুরক্ষিত না। সুরক্ষিত মিলিটারি ডিক্টেটরদের দোসরদের হাতে? যারা শ্রমিকের অধিকার কেড়ে নেয়, কৃষকদের গুলি করে হত্যা করে, তারা এখন গণতন্ত্রের ধ্বজাধারী? কিছু বুদ্ধিজীবী আছে, যারা বুদ্ধি বেচে জীবিকা নির্বাহ করে, তারাও তাদের পক্ষে কথা বলে। খালেদা জিয়াকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, ১৫ই আগস্ট তো অনেকেরই জন্মদিন। কেউ কি পালন করে? কতো বড় অমানুষ হলে জাতি যেদিন শোক দিবস পালন করে সেদিন সে জন্মদিন পালন করে! কতোটা অমানবিক হলে শোক দিবসকে জন্মদিন বানিয়ে উৎসব করতে পারে। জিয়ার হাতে আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মী হত্যা হয়েছে। একইভাবে খালেদা জিয়াও ক্ষমতায় এসে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর অকথ্য নির্যাতন করেছে। এখনো মনে পড়লে শিহরিত হতে হয়। অনেককে ধরে কোথায় নিয়ে গেছে কেউ বলতে পারে না।
যখনই বিএনপি ক্ষমতায় এসেছে, হত্যা খুন ও গুম করেছে। জনগণের ভাগ্য তারা পরিবর্তন করতে পারেনি। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের পকেট থেকে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে তৈরি করা দল বিএনপি। তারা জনগণের ভোট নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছিল। ভোট নিয়ে প্রহসন করেছে। এই দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়া নির্বিচারে হাজার হাজার সেনা অফিসার হত্যা করেছে। তাদের লাশও গুম করে। নিহতদের পরিবার এখনো লাশ খুঁজে বেড়ায়। কেঁদে ফেরে তাদের স্বজনদের খোঁজে। কয়েকটি পরাশক্তিকে ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, তারা বাংলাদেশে এমন একটি সরকার চায়, যারা তাদের পদলেহন করবে। তারা এখানে মোড়লিপনা করবে। আর এরা কারও বন্ধু হলে তার আর শত্রুর প্রয়োজন হয় না। আজ ইউক্রেনকে দেখুন।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান। আলোচনায় অংশ নেন- ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, ঢাকা দক্ষিণের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম, দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফি, সহ-সভাপতি ডা. দিলীপ রায়, উত্তরের সহ-সভাপতি সাদেক খান এমপি প্রমুখ। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগের জাতীয়, কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতৃবৃন্দ শোকসভায় অংশ নেন। আলোচনা সভা পরিচালনা করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির।