শান্তিপ্রিয় শহর হঠাৎ অশান্ত, বাড়ছে আতঙ্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ আগস্ট ২০২৩, ১২:৪৯ অপরাহ্ণ
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি :
হবিগঞ্জের রাজনীতির মাঠ হঠাৎ করেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। পরপর দুইদিন ভয়াবহ রাজনৈতিক সহিংসতায় শহরজুড়ে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে একই এলাকায় এমন ভয়াবহতায় ব্যবসায়ীরা রয়েছেন ভয়-আতংকে। যে কোন সময় আবারও সংঘর্ষের দেখা দিতে পারে বলে সাধারণ মানুষের মধ্যে রয়েছে জল্পনা-কল্পনা। ভয়াবহ সংঘর্ষে শান্তিপ্রিয় শহর অশান্ত হয়ে উঠছে বলে মনে করছেন সচেতন নাগরিক।
শনিবার বিএনপির পদযাত্রায় শায়েস্তানগর এলাকায় পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের ভয়াবহ সংঘর্ষ বাঁধে। টানা দেড় ঘন্টা ধরে চলা এ সংঘর্ষে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশ বিপুল পরিমাণ টিয়ারশেল ও কাদানে গ্যাস নিক্ষেপ করলে বিএনপির অন্তত ১০ নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধসহ আহত হয় শতাধিক। একই সাথে হবিগঞ্জ সদর থানার ওসি অজয় চন্দ্র দেবসহ ৩৫ পুলিশ সদস্য আহত হন।
এ ঘটনার একদিন পর রোববার সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ মিছিলকে কেন্দ্র করে শায়েস্তানগর এলাকায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে টানা দুই ঘন্টা সংঘর্ষ চলে। এ ঘটনায়ও আহত হয় উভয় দলের অন্তত শতাধিক নেতাকর্মী। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি শান্ত করে।
তবে সংঘর্ষের ঘটনাকে ঘিরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে পরস্পর বিরোধি বক্তব্য পাওয়া গেছে। উভয় দলই নিজেদের নির্দোষ দাবী করছেন।
জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আলমগীর চৌধুরী বলেন, ‘বিএনপির নেতা-কর্মীরা শহরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও জনসাধারণের উপর অতর্কিত হামলা করে। এর প্রতিবাদে আমরা বিক্ষোভ মিছিল করলে তারা অতর্কিত হামলা চালায়। এতে আমাদের শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়। তারা রাজনীতির পরিস্থিতি উতপ্ত করে তুলছে’।
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আলহাজ্ব জিকে গউছ বলেন, ‘আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা পূর্ব-পরিকল্পনা অনুযায়ী মিছিল সহকারে বিএনপির কার্যালয়ে হামলাও ভাংচুর করেছে। এতে আমাদের অনেক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। আওয়ামীলীগ শান্তিপূর্ণ রাজনীতির অঙ্গনে বাধা দিয়ে শহরে অশান্তি সৃষ্টি করছে।
হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ বদিউজ্জামান বলেন, ‘পদযাত্রার মিছিল শেষ করে বিএনপির নেতা-কর্মীরা পুলিশের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খলিলুর রহমান ও থানার ওসি অজয় চন্দ্র দেবসহ ৩৫ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তাছাড়া বিএনপির নেতা-কর্মীরা কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাংচুর করে এবং রাস্তায় আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে দুটি মামলা হয়েছে’।
এদিকে, পুলিশ-বিএনপির সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপির ১২শ নেতা-কর্মীকে আসামী করে দুটি মামলা করেছে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশ। এ পর্যন্ত ১৪ নেতা-কর্মীকে আটক করে কারাগারে পাঠিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার আতঙ্কে বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সভাপতি এডভোকেট ত্রিলোক কান্তি চৌধুরী বিজন বলেন, ‘পরপর দুইদিন রাজনৈতিক সহিংসতায় শহরজুড়ে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। সংঘাতপূর্ণ রাজনীতি পরিহার করে একে অপরের প্রতি সহমর্মিতায় আবদ্ধ হওয়া দরকার’।