নির্বাচনের আগে কোনো দেশের সঙ্গেই চুক্তি নয়: সিলেটে পররাষ্ট্রমন্ত্রী
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ আগস্ট ২০২৩, ১০:১৭ অপরাহ্ণ
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, আগামী নির্বাচনের আগে কোনো দেশের সঙ্গেই তড়িঘড়ি করে কোনো নতুন চুক্তি করবে না বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে কোনো চাপের কাছে মাথা নত করবে না। বর্তমান সরকার দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করছে। কোনো বিদেশি শক্তির পরামর্শে চলে না। একটি স্বাধীন, ব্যালেন্স পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে চলছে, এতে কারো অসুবিধা হলেও কিছু করার নেই।
শনিবার দুপুরে সিলেট আরটিএম আল-কবির টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির সার্টিফিকেট অ্যাওয়ার্ড সেরিমনি অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে এসব কথা বলেন তিনি।
নিজের নির্বাচনি এলাকায় দুই দিনের সফরের শেষ দিনে সকালে আরটিএম আল-কবির টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির সার্টিফিকেট প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
আব্দুল মোমেন বলেন, বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে শিক্ষা। স্বনির্ভর দেশ গড়তে হলে কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নেই।
তিনি আরটিএম আল কবির টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির কারিগরি ও কর্মবান্ধব শিক্ষামুখী বিভিন্ন প্রোগ্রামের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, এ প্রতিষ্ঠান নুতন ধারার কর্মবান্ধব শিক্ষাক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে বলে আমি আশাবাদী।
তিনি বর্তমান সরকারের গণমুখী বিভিন্ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে কারিগরি ও কর্মবান্ধব শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহী করে গড়ে তুলতে শিক্ষক-অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান।
আগামী ২২ আগস্ট দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত ব্রিকস সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যোগ দেবেন কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা বলেছি ব্রিকস যদি বাংলাদেশকে সদস্যপদ দিতে চায় তবে তা গ্রহণ করবে বাংলাদেশ। তারা দাওয়াত দিয়েছে তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই সম্মেলনে যোগ দেবেন।
তিনি বলেন, ব্রিকস সম্মেলনে প্রায় ৭০টি দেশের প্রতিনিধিরা থাকবেন, বহু দেশের মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রীরা সেখানে যোগ দেবেন। এ ছাড়া ব্রিকসে আলোচনা চলছে- তারা এ বছর তাদের সদস্য সংখ্যা বাড়াবে কিনা- যদি নাও বাড়ায় তবুও যেহেতু বিশ্বের অনেক সরকার যেহেতু সেখানে যাচ্ছেন তাই সেখানে যোগ দিলে অনেক দেশের সরকার প্রধানের সঙ্গে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনার সুযোগ থাকছে। তাই ইনশাআল্লাহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখানে যাবেন।
আগামী নির্বাচনের আগে কোনো দেশের সঙ্গে নতুন কোনো চুক্তির বিষয়ে আবারও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমি এর আগে বলেছি নির্বাচনের আগে কোনো দেশের সঙ্গে চুক্তি করা ঠিক হবে না। কিন্তু গণমাধ্যমে বলা হয়েছে আমেরিকার সঙ্গে কোনো চুক্তি হবে না। আমি আবারও বলছি নির্বাচনের আগে কারো সঙ্গে নতুন কোনো চুক্তি করবে না বাংলাদেশ।
নতুন চুক্তি না হলে কোনো সমস্যায় পড়বে কিনা বাংলাদেশ এমন প্রশ্নে মোমেন বলেন, বাংলাদেশ একটি ব্যালেন্স পররাষ্ট্রনীতিতে রয়েছে, যাকে বলে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি; এতে করে অনেকের অসুবিধা হতে পারে। তাই নির্বাচনের আগে তড়িঘড়ি করে নতুন কোনো চুক্তিতে যাবে না বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের যে চুক্তির বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছে সেই চুক্তি হলো জিসমিয়া চুক্তি। তার অর্থ হচ্ছে আপনি যদি আমেরিকার কোনো অস্ত্র কিনেন তাহলে সেই সব কোথায় থাকবে তা তাদের জানাতে হবে; শুধু এই নয় সেই অস্ত্র যেখানে রাখবেন সেখানে অন্য কোনো দেশের অস্ত্র থাকবে কিনা তাও তাদের জানাতে হবে। এর চেয়েও বড় বিষয় হলো সেই অস্ত্র ব্যবহারের আগে তাদের অনুমতি নিতে হবে। তাই এতসব শর্ত মেনে কোনো চুক্তিতে বাংলাদেশ এ মুহূর্তে সই করবে না।
এ চুক্তি স্বাক্ষরে কোনো চাপ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাংবাদিকরাই আমেরিকার স্বপক্ষে কথা বলে চাপ সৃষ্টি প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
তাই তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের এসব বাদ দিয়ে দেশের কথা চিন্তা করার আহ্বান জানান। মোমেন বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের কথায় চলে, বিদেশি কোনো শক্তির পরামর্শে কান দেয় না।
আগামী নির্বাচন ইস্যুতে এক প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার অবাধ সুষ্ঠু একটি নির্বাচনের লক্ষ্যে কাজ করছে। ইতোমধ্যেই ছবিসহ ভোটার তালিকা সম্পন্ন হয়েছে, ট্রান্সপারেন্ট ব্যালট বাক্সের ব্যবস্থা করেছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো একটি নির্বাচন কমিশন হয়েছে তাদের নির্বাচন পরিচালনার জন্য যথেষ্ট ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তারা চাইলে, যদি কোনো কর্মকর্তাকে মনে করে কোনো দলের পক্ষে কাজ করছে- তাকে অপসারণ করতে পারবে। কোনো কেন্দ্রে কারচুপি হলে নির্বাচন বাতিল করতে পারবে। সুতরাং আজিজ মার্কা কোনো নির্বাচন হবে না। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়। অথচ আমাদের দেশে এক আজগুবি বিষয় নিয়ে হইচই হচ্ছে, এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর ড. আবু নাসের জাফর উল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপদেষ্টা প্রফেসর ডা. সৈয়দ মুদাসসের আলী, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, ইউনিভার্সিটির গ্র্যান্টস কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন, সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. মাহবুবুর রহমান ভুইয়া, শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব চক্ষু হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর ড. নাহিদ ফেরদৌস, আরটিএম আল কবির টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা ও বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. আহমদ আল কবির।
খবর: যুগান্তর